পুলিশ ক্যাম্পের কাছেই দুই যুবক তাঁর গাড়ি থামিয়ে শ্লীলতাহানি করেছে, এই অভিযোগ তুলে পুলিশের সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন এক মহিলা চিকিৎসক। কিন্তু পুলিশের সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ। শনিবার দুপুরে এই ঘটনাকে ঘিরে তেতে ওঠে মালদহের ইংরেজবাজারের সাদুল্লাপুর পুলিশ ক্যাম্প ও সংলগ্ন এলাকা। স্থানীয় লোকজন পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালান। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা’র প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও পথ অবরোধও হয়। স্থানীয় লোকজন অভিযুক্তদের ধরে মারধর করেন। পরে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
ওই মহিলা চিকিৎসকের কথায়, “দুই যুবক হাত ধরে আমাকে মোটরবাইকে তোলার চেষ্টা
করছিল। কোনও মতে তাদের হাত ছাড়িয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ছুটে গেলেও কোনও পুলিশকর্মী এগিয়ে আসেননি। দিনের বেলা এমন ঘটনা ভাবতেই পারছি না। স্থানীয় বাসিন্দারা না এলে যে কী হত!” ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “প্রথমেই পুলিশ কেন এগিয়ে আসেনি বুঝতে পারছি না। এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা যাবে না। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব।” ঘটনার নিন্দা করেছেন চিকিৎসকেরাও। |
মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, “অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েই মহকুমাশাসককে সেখানে পাঠানো হয়। বিশদে খোঁজখবর নিচ্ছি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের অধীন মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত। এ দিন নিজের গাড়ি চালিয়ে মালদহে যাচ্ছিলেন। সাদুল্লাপুরে পুলিশ ক্যাম্প থেকে মিটার দশেক দূরে তাঁর পথ আটকায় মোটরবাইকে চড়ে আসা দুই যুবক ফিরোজ শেখ এবং অজিত শেখ। গাড়িটি তাদের বাইকে ধাক্কা মেরেছে বলে দাবি করে যুবকেরা। মহিলা চিকিৎসক গাড়ি থেকে নামতেই যুবকেরা তাঁর মোবাইল ফোন এবং মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে হাত ধরে মোটরবাইকে তোলার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। কোনও মতে যুবকদের হাত ছাঁড়িয়ে ওই মহিলা পুলিশ ক্যাম্পে ছুটে যান। তত ক্ষণে অবশ্য মহিলার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে অভিযুক্তদের ধরে ফেলেন। শুরু হয় মার। ক্যাম্পে থাকা তিন পুলিশকর্মীই অবশ্য অভিযুক্তদের উদ্ধার করেন।
তার পরেই ওই ক্যাম্পে হামলা হয়। ইট ছুড়ে ভেঙে দেওয়া হয় ক্যাম্পের টালি। শুরু হয় বিক্ষোভ-অবরোধ। এর পরে ইংরেজবাজার থানা থেকে পুলিশ বাহিনী গিয়েও বিক্ষোভের মুখে পড়ে। ধৃতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ শান্ত হয়। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বছর ত্রিশের ওই দুই যুবকের বাড়ি ইংরেজবাজারের কমলাবাড়ি ভাটটোলা এলাকায়। তাদের কাছ থেকে দু’বোতল কাফ সিরাপ মিলেছে। তারা ওই ওষুধ খেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব স্কুল হেলথ্ মেডিক্যাল অফিসার’-এর মালদহের সভাপতি তাহিদুল ইসলাম এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “একজন চিকিৎসক যে ভাবে নিগৃহীত হলেন তা ভাবা যায় না। সাধারণ মানুষদের কোনও নিরাপত্তা নেই।” |