কয়েক ঘণ্টা, মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় হাতে থাকবে তখন। অঙ্ক অন্তত তেমনই বলছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা সূত্রে খবর, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মহাকাশ থেকে ভেঙে পড়তে চলেছে তাদের তৈরি একটি উপগ্রহ। কিন্তু ঠিক কোন অংশে গিয়ে পড়বে তার ‘দেহাবশেষ’, সেটা ‘ভূ-পতনের’ মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই হিসেব করে বলতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা। তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে ‘গ্র্যাভিটি ওশেন সার্কুলেশন এক্সপ্লোরার’(জিওসিই) নামে ওই উপগ্রহটি কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। তাতে তখন প্রায় ৪১ কিলোগ্রামের মতো জ্বালানি মজুত ছিল। কিন্তু কোনও অজানা কারণে উপগ্রহের ট্যাঙ্কে জ্বালানি কমতে শুরু করে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। শুক্রবারের হিসেব বলছে, আর মাত্র সাড়ে তিনশো গ্রাম জ্বালানি পড়ে রয়েছে জিওসিইতে। ২৬ অক্টোবরের মধ্যেই তা শূন্যে ঠেকার কথা। তবে শূন্যে পৌঁছনোর আগেই উপগ্রহের ইঞ্জিন কাজ বন্ধ করে দেবে। এবং জ্বালানি শেষ হওয়ার পরমুহূর্ত থেকেই কক্ষপথে নড়বড় করতে শুরু করবে সেটি। তার পরে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে মহাপতন। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, মাটির বেশ উপরে থাকতেই উপগ্রহের বেশিরভাগ অংশ জ্বলে যাবে। যতটুকু পৃথিবীর মাটিতে পৌঁছবে, তাতে ক্ষতির আশঙ্কা নগণ্য। |
তবে শূন্য নয়। আর তার কারণ আনুমানিক হিসেব। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়েকশো কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে জিওসিইর দেহাবশেষ। কিন্তু কোন অঞ্চলে আর ঠিক কখন, তা নিয়ে এখনও ধন্দে তাঁরা। ভূ-পতনের চব্বিশ ঘণ্টা আগেই তাঁরা এ ব্যাপারে কিছু আন্দাজ করতে পারবেন। মহাপতনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই নিখুঁত কিছু বলতে পারবেন তাঁরা।
উপগ্রহের ‘ভূ-পতন’ অবশ্য নতুন কোনও ঘটনা নয়। আয়ু ফুরোলে মাঝেমধ্যেই পৃথিবীর মাটিতে আছড়ে পড়ে উপগ্রহ বা মহাকাশযানের টুকরোটাকরা। কিন্তু এ বারের ঘটনার মধ্যে অনেকেই ‘স্কাইল্যাব’ আতঙ্কের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের কাছে আছড়ে পড়েছিল এই মহাকাশকেন্দ্রটি। কিন্তু সেই ‘মহাপতন’ ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল প্রবল। কোথায় পড়বে, কখন পড়বে তা নিয়েও চলেছিল বিপুল জল্পনা। বিজ্ঞানীরা অবশ্য একটা আনুমানিক হিসেব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও গাণিতিক ভুল থাকায় যেখানে পড়ার কথা ছিল, তা থেকে বেশ খানিকটা দূরে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে আছড়ে পড়ে স্কাইল্যাবের ভগ্নাংশ। ক্ষতি অবশ্য সে অর্থে কিছু হয়নি। বাসিন্দাদের অনেকে সে দিন শুধু আকাশে নানা রঙের খেলা দেখতে পেয়েছিলেন।
এ বারও সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হয় কি না, সেটাই দেখার। |