লাল ফিতের ফাঁস এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। এই দুইয়ের জেরে ভারতের গড়িমসির কূটনৈতিক ফসল তুলল ইসলামাবাদ! আসন্ন কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ভারতের থেকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম কিনতে চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দিল্লির গড়িমসিতে হতাশ হয়ে তারা আবেদন করে পাকিস্তানের কাছে। চটজলদি সাড়া দিয়েছে ইসলামাবাদ!
আগামী মাসের ১৫ তারিখ কলম্বোয় শুরু হচ্ছে কমনওয়েলথ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনটি যাতে শ্রীলঙ্কায় হয়, তার জন্য কানাডা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়েছিল ভারতই। এক মাস আগেই রাজাপক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে জানানো হয় যে, এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার যথেষ্ট নিরাপত্তা সরঞ্জাম তাদের নেই। ভারত এ ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং পারদর্শী। সার্ক, ন্যাম-সহ বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয় দিল্লিতে। তাই এই সংক্রান্ত আধুনিক কিছু সরঞ্জাম ভারতের কাছে কিনতে চায় তারা।
শ্রীলঙ্কার অনুরোধ পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। কিন্তু লাল ফিতের ফাঁসে এগোয়নি প্রক্রিয়া। একটি সূত্রের দাবি, এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কাকে কোনও রকম নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করার ব্যাপারে কংগ্রেসেরও আপত্তি ছিল। এমনিতেই শ্রীলঙ্কায় এই সম্মেলনটিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যোগ দিতে যাবেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। তামিল দলগুলি ঘোরতর বিরোধিতা করছে প্রধানমন্ত্রীর কলম্বো সফরের। তামিলদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে দক্ষিণ ভারত উত্তাল। কংগ্রেসের বক্তব্য, এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কাকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা অনুচিত কাজ হবে।
ভারতের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে রাজাপক্ষে সরকার দ্বারস্থ হয় ইসলামাবাদের। নওয়াজ শরিফের নতুন সরকার এই অনুরোধ পাওয়ার পরে গোটা পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে দু’দিনের মধ্যেই একটি বিমানে করে সমস্ত সরঞ্জাম কলম্বোয় পাঠিয়ে দিয়েছে। কূটনীতিকদের একাংশের মতে, এই ঘটনার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পাকিস্তানকে যথেষ্ট সুবিধে করে দিল ভারত। যে পাকিস্তানকে চিনের পরমাণু চুল্লি দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন, সেই পাকিস্তানকেই শ্রীলঙ্কার দিকে ঠেলে দেওয়াটা অত্যন্ত অবিবেচকের মতো কাজ হয়েছে।
রাজাপক্ষে সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির যথেষ্টই সুসম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলগত দিক থেকেও শ্রীলঙ্কা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে দেশে নিরাপত্তা সরঞ্জাম পাঠানোর ক্ষেত্রে এই নেতিবাচক মনোভাব এবং প্রধানমন্ত্রীর কলম্বো সফর ঘিরে অনিশ্চয়তায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশ এমনিতেই ধারাবাহিক ভাবে বিব্রত করে রেখেছে সাউথ ব্লককে। এই সময় বন্ধুভাবাপন্ন প্রতিবেশী দেশগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত মনমোহন সরকারের। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার উল্টোটাই ঘটছে। |