ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু নির্মাণের প্রায় তিন বছর পরেও চালু হয়নি সুইমিং পুল। তার বদলে তৃণমূলের এক যুবনেতার ঘনিষ্ঠ দুই যুবক সেখানে মাছ চাষ করছিলেন বলে অভিযোগ।
শনিবার স্টেডিয়াম কমিটির বৈঠকে এসে বিষয়টি জেনে কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক ওই পুলের সদর দরজায় থেকে মাছচাষিদের লাগানো তালা খুলে নতুন তালা লাগানোর ব্যবস্থা করলেন। মন্ত্রী অবশ্য মাছ চাষের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই কাজ দেখতেই আমরা ওখানে গিয়েছিলাম।” তবে বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “বেআইনি ভাবে যারা মাছ চাষ করছিল, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছি।”
২০০৯ সালে বাম জমানায় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে আসানসোল ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পাশে ওই সুইমিং পুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল। সেটি নির্মাণ হওয়ার পরে তিন বছর বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। আজও তা চালু হয়নি। এ দিন আসানসোল স্টেডিয়াম কমিটির বৈঠকে মলয়বাবু ছাড়াও কমিটির ওয়ার্কিং চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক এবং ভাইস চেয়ারম্যান তথা আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত এসেছিলেন। স্টেডিয়ামটি ঢেলে সাজার লক্ষ্যে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়।
এরই মধ্যে ইন্ডোর স্টেডিয়াম এলাকা ঘুরে দেখতে যান কমিটির সদস্যেরা। ইন্ডোরের পিছন দিক দিয়ে ঘুরে সুইমিং পুলের সামনে গিয়ে তাঁরা দেখেন, পুলের সদর দরজায় তালা লাগানো। |
মন্ত্রী চাবির খোঁজ করতেই ইন্ডোরের নিরাপত্তাকর্মী জানিয়ে দেন, তৃণমূল নেতা বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে দিব্যেন্দু রায় নামে এক যুবক সেখানে মাছ চাষ করছেন। তিনিই তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে গেছেন। চাবি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত মলয়বাবুর নির্দেশে এক পুলিশকর্মী তালা ভাঙেন। সবাই ভিতরে গিয়ে দেখেন, মাছের ছোটো চারা ঘুরে বেরাচ্ছে। পরে মলয়বাবুর নির্দেশে সদর দরজায় নতুন তালা লাগানো হয়।
বাইরে বেরিয়ে মলয়বাবু অবশ্য দাবি করেন, “মাছ চাষের অভিযোগ ঠিক নয়। বহিরাগত কেউ তালা লাগিয়ে রেখেছিল। যারা এমন ঘটিয়েছে, তারা আমাদের কেউ নয়।” ইস্কোর ঠিকাকর্মী দিব্যেন্দু রায় অবশ্য পরিষ্কার বলেন, “সুব্রত রায় নামে এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে আমি মাছ চাষ করছি। কাছেই ছিন্নমস্তা পুকুরে ও মাছ চাষ করে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকায় সুইমিং পুলটি অসামাজিক লোকজনের আখড়া হয়ে উঠেছিল। সেই অরাজক অবস্থা দুর করতেই আমরা মাছ চাষ করছিলেন।”
দিব্যেন্দু ও সুব্রত দু’জনেই হিরাপুর ব্লক যুব সভাপতি উত্পল সেনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দিব্যেন্দুবাবুর দাবি, “আমি তৃণমূলের এক জন সক্রিয় সমর্থক। কিন্তু মন্ত্রী যখন এই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন, কিছু বলার নেই।” স্টেডিয়াম কমিটির সম্পাদক অমল সরকার জানান, “এডিডিএ এখনও স্টেডিয়াম কমিটির হাতে সুইমিং পুলের দায়িত্বভার অর্পণ করেনি। তাই আমাদের কিছু করণীয় নেই।” উত্পলবাবু অবশ্য দাবি করেন, “এখন তো সবাই আমাদের লোক। কাজেই কে আমাদের লোক আর কে নয়, তা বলা কঠিন।” |