বিধি-সঙ্কটে ৯টি জেলায়
গরিবের নিখরচার চিকিৎসা
ময় মতো বিমা সংস্থা বাছাই করা হয়নি। ফলে আগামী ডিসেম্বর থেকে সরকারি স্বাস্থ্য-বিমার সুবিধা পশ্চিমবঙ্গের ন’টি জেলার প্রায় ২৫ লক্ষ দরিদ্র পরিবারের সাময়িক হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন, এখন উঠে-পড়ে লেগে চটজলদি সংস্থা নির্বাচন করে ফেলা গেলেও আগামী বছরের এপ্রিল-মে’র আগে পুরো প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হওয়া কঠিন।
এই পরিস্থিতির দরুণ ন’টি জেলায় রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য-বিমা যোজনার আওতাধীন বিপিএল-তালিকাভুক্ত পরিবারগুলির অন্তত মাস ছয়েক নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্তাদেরই একাংশ।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর: কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য-বিমা যোজনা পশ্চিমবঙ্গে চালু হয়েছে ২০১০-এ, যার আওতায় রাজ্যের বিপিএল-তালিকাভুক্ত সব পরিবারকে আনার কথা। পশ্চিমবঙ্গে এখন বিপিএল-তালিকায় রয়েছে ৯২ লক্ষ পরিবার। তার প্রায় ৫৪ লক্ষ ইতিমধ্যে যোজনার আওতায় এসেছে। এতে একটি বিপিএল-পরিবারকে বছরে ‘প্রিমিয়াম’ দিতে হয় সাকুল্যে ৩০ টাকা, বাকিটা জোগায় রাজ্য সরকার। প্রকল্পের আওতাধীন পাঁচ জনের একটি পরিবারের জন্য বছরে ৩০ হাজার টাকার বিমার সুযোগ বরাদ্দ। চিকিৎসার খরচ কেন্দ্রীয় সরকার মেটায়। গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গের পিছনে এ বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ হয়েছে অন্তত আড়াইশো কোটি টাকা।
প্রকল্প বহাল। অর্থের সংস্থানও রয়েছে। তা হলে হঠাৎ কী হল, যাতে বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ অসুস্থ হলেও ওই ক’মাস সরকারি স্বাস্থ্য-বিমার টাকায় চিকিৎসা করাতে পারবেন না?
দফতর-সূত্রের দাবি: বিমা সংস্থা নির্বাচন সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশ সময়মতো পালন করা হয়নি বলেই সঙ্কট। কী রকম?
এক কর্তা জানান, বাছাই করা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিমা সংস্থাকে দিয়ে ২০১০-এ প্রকল্পটি চালু করার সময়ে নিয়ম মেনে সংস্থাগুলির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করা হয়েছিল। কথা ছিল, তিন বছর বাদে স্বাস্থ্য দফতর নতুন ভাবে সংস্থা নির্বাচন করবে। অথচ রাজ্য সেই পথে না-হেঁটে পুরনো সংস্থাগুলোকেই আরও তিন বছর রেখে দেওয়ার জন্য দিল্লিকে আর্জি জানায়। কেন্দ্র তা মানেনি। গত ১ অক্টোবর তারা রাজ্য সরকারকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, যোজনার নিয়ম অনুযায়ী এ বার নতুন বিমা সংস্থা নির্বাচন করতে হবে, পুরনোদের দিয়ে প্রকল্প চালানো যাবে না।
কেন্দ্রের এ হেন ‘ফরমানের’ জেরেই নদিয়া, পুরুলিয়া, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলায় রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য-বিমা যোজনার আওতাধীনপ্রায় ২৫ লক্ষ বিপিএল পরিবার আপাতত পরিষেবার বাইরে থাকতে চলেছে। এক স্বাস্থ্য-কর্তার কথায়, “ওই ন’টি জেলায় প্রকল্পে জড়িত ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরোচ্ছে ডিসেম্বরে। পরিষেবায় ছেদ এড়াতে হলে অন্তত ছ’মাস আগে নতুন টেন্ডার ডেকে সংস্থা বাছাই করতে হতো। তা করা হয়নি।”
এমতাবস্থায় ওখানে ডিসেম্বর থেকে স্বাস্থ্য-বিমার পরিষেবা অব্যাহত রাখা কার্যত অসম্ভব বলেই জানাচ্ছেন কর্তারা। ওঁদের যুক্তি: এই মুহূর্তে নতুন সংস্থা বাছাই করা সম্ভব নয়। কারণ, দরপত্র ডেকে বাছাইপর্ব সেরে চুক্তি চূড়ান্ত করতে অন্তত দশ সপ্তাহ লাগবেই। তার পরে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা গ্রাহকদের নাম নবীকরণ করবে, দরকারে নতুন কার্ড বিলি করবে। তাতে যাবে কম-সে-কম দু’-আড়াই মাস। সব মিলিয়ে পরিষেবা চালু করতে করতে নতুন অর্থবর্ষ এসে যাবে বলে বলে মনে করছেন সরকারি কর্তাদের অনেকে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “সরকার দেখবে, গরিব মানুষ যাতে বিমার সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন।”
কিন্তু কী ভাবে?
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর, পুরনো বিমা সংস্থাগুলোকে যাতে অন্তত ছ’মাসও রেখে দেওয়া যায়, আপাতত কেন্দ্রের কাছে সেই মর্মে আর্জি পেশ করার কথা ভাবা হচ্ছে। এই সময়টুকু পেলে তার মধ্যে সংস্থা বাছাই করে ফেলা হবে। “দিল্লিকে আমরা আবার অনুরোধ জানাব, অন্তত ছ’মাসের জন্য পুরনো কোম্পানিদেরই রেখে দেওয়া হোক। ন’টি জেলায় পরবর্তী বিমা সংস্থা নির্বাচনের প্রক্রিয়া এখনই শুরু করে দেওয়া হবে।” বলেন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের এক স্বাস্থ্য-কর্তা।
পাশাপাশি কাদের গাফিলতিতে, কী ভাবে সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হল, তা যাচাই করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা-ভাবনাও চলছে স্বাস্থ্য ভবনে। প্রসঙ্গত, উল্লিখিত ন’টি জেলা বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য-বিমা যোজনার ভারপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিমা সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরোচ্ছে ২০১৪-র মাঝামাঝি। ঝুঁকি এড়াতে সেখানেও নতুন সংস্থা বাছাইয়ের কাজ শুরু করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তাটি।

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য-বিমা
• গরিবদের চিকিৎসা-ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারের যোজনা
• পশ্চিমবঙ্গে চালু হয়েছে ২০১০ সালে
• আওতায় রাজ্যের ৫৪ লক্ষ বিপিএল পরিবার
• পাঁচ জনের পরিবারের জন্য বার্ষিক ৩০ হাজার টাকার বিমা
• পরিবারকে দিতে হয় বছরে ৩০ টাকা
• প্রিমিয়ামের বাকিটা জোগায় রাজ্য সরকার
• চিকিৎসার খরচ দেয় কেন্দ্র
• ৪৯৫টি বেসরকারি, ৪৪টি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা*
• গত তিন বছরে চিকিৎসা করিয়েছেন ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার জন*
• খরচ বাবদ কেন্দ্র বিমা সংস্থাকে দিয়েছে ২৫০ কোটি টাকা**
• প্রিমিয়াম খাতে চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যের খরচ হবে ৬৫ কোটি
* শুধু পশ্চিমবঙ্গে
** ২০১৩-র মার্চ পর্যন্ত



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.