নয়া নির্দেশে অনুমতি নিতে হবে সব ব্যবসায়ীকে
যথেচ্ছ বাজি বিক্রি রুখতে উদ্যোগী পুলিশ
পাড়ায়-পাড়ায় যথেচ্ছ বাজি বিক্রি রুখতে ব্যাপক কড়াকড়ি শুরু করেছে পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন এক নির্দেশে জানিয়েছেন, তাঁর দফতর থেকে বাজি বিক্রির লিখিত অনুমতি ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীকে নিতে হবে। হাটে-বাজারে, পাড়ার স্টেশনারি দোকানে, ফুটপাতে, বাজি সাজিয়ে বিক্রি করলে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে। ছোট-বড় সব বাজি ব্যবসায়ীকেই লাইসেন্স নিয়ে কমিশনারেট লাগোয়া এলাকার মাঠে স্টল গড়ে বাজি বিক্রি করতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বাজি বাজার তৈরির সিদ্ধান্তকে স্বাগত। তবে শহরের জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা না করে রাতারাতি কলকাতার মতো শিলিগুড়িতে বাজি-বাজার করার চেষ্টা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অভিযোগ। একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে বিষয়টি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুলিশ কমিশনার একতরফা ভাবে বাজি-বাজার মাটিগাড়ায় তৈরির সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে আগামী দেওয়ালিতে শহরে আতসবাজির আকাল দেখা দিতে পারে। ব্যবসায়ীদের একাংশ প্রয়োজনে প্রতীকি আন্দোলনে নামার জন্যও সংগঠন কর্তাদের চাপ দিচ্ছেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “শহরবাসীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যই এই উদ্যোগ। এ ছাড়া বহু মুদিখানা, প্রসাধনী বা পান দোকান থেকে অবৈধভাবে বাজি বিক্রি করা হয়। রাস্তায় বসে ঢালাও বাজি বিক্রি হয়। এ সব বন্ধ হওয়া দরকার। যাঁরা কমিশনারেট থেকে ফর্ম নিয়ে বাজি বিক্রির জন্য লাইসেন্স নেবে তাঁরা বাজি বিক্রি করতে পারবেন। তবে লাইসেন্স নেওয়ার পরে সকলকে কমিশনারের অফিস লাগোয়া ময়দানে স্টল করে ব্যবসা করতে হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অবশ্য জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলবেন। মন্ত্রী বলেন, “পাড়ার দোকানদারকে বাজি বিক্রির জন্য মাটিগাড়ায় যেতে হবে নাকি! ক্রেতাদেরও সেখানে ছুটতে হবে! এমন নির্দেসের কথা আমি জানি না। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। আমি বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট সংলগ্ন এই মাঠেই বসবে প্রস্তাবিত বাজির বাজার। —নিজস্ব চিত্র।
ওই নির্দেশের জেরে শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী মহলে হইচই পড়ে গিয়েছে। কারণ, শিলিগুড়ি শহরে বাজি বিক্রির ব্যবসায়ার লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এর মধ্যে বিধান মার্কেটেই রয়েছে ৫০০ জন এবং মহাবীরস্থানে ১০০ জন। তা ছাড়াও ৪৭টি ওয়ার্ড ও মাটিগাড়া এলাকায় অন্তত ৫০০০ দোকানে বাজি বিক্রি হয়ে থাকে। পুলিশ কমিশনারের অফিস লাগোয়া মাঠে সব ব্যবসায়ীদের বসার জায়গা দেওয়া বাস্তবে কখনও সম্ভব নয় বলে ব্যবসায়ীরাই জানিয়েছেন। যদিও ব্যবসায়ীদের অধিকাংশও মাটিগাড়ায় বাজি-বাজার তৈরির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
সম্ভবত, সেই কারণে, ৬ অক্টোবর নির্দেশিকা জারি হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশের কাছে বাজি বিক্রি করতে চেয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন মাত্র ৭০ জন। বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “এটা হয় নাকি! সব দোকানদাররা লাইসেন্স নিলে মাটিগাড়ায় বসার জায়গাই তো পাবেন না। তা চাড়া শহরের সকলে মাটিগাড়ায় বাজি কিনতে ছুটবেন নাকি! আমরা কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি, আবার বলব। কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু থাকলে বাজি বিক্রি করে এবছর লোকসানের মুখ দেখতে হবে।”
একই মন্তব্য সুকান্তনগরের এক ব্যবসায়ী অতুল সাহারও। অতুলবাবুর বক্তব্য, “আমি অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে পুজোর মরশুমে বাজির ব্যবসা করি। আলাদা করে কমিশনারেটের মাঠে গিয়ে ব্যবসা করলে একে তো ভাড়া দিতে হবে, তার উপরে আলাদা লোক রেখে তার খরচ জোগানোর পর লাভের মুখ দেখা অসম্ভব।” এদিকে পুলিশের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বৃহত্তর শিলিগুড়ি খুচরো ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পরিমল মিত্রও। তাঁর অভিযোগ, “নির্দেশ জারি হয়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য। অথচ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুলিশ কমিশনার একবার আমাদের ডেকে আলোচনার প্রয়োজন মনে করলেন না? আমাদের এত অবজ্ঞা করা ঠিক নয়। পুলিশকে ামরা সব সময় সহযোগিতা করি। এখন পুলিশ যদি মনে করে জবরদস্তি আমাদের উপরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় তা হলে শহরবাসীকে সব জানাব। কালীপুজোয় শহরবাসী বাজি না পেলে তার দায় পুলিশকেই নিতে হবে।”
পুলিশ কমিশনারের বাজি মেলার পরিকল্পনা নিয়ে পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা বলেন, “এক জায়গা থেকে বাজি বিক্রি করার পরিকল্পনা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারেট থেকেই সমস্ত বাজি বিক্রি করা হবে। সেখান থেকে লাইসেন্স দেওয়া হবে। তবে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কোন আলোচনা হয় নি। বিষয়টি দেখতে হবে।” বাম কাউন্সিলর মুকুল সেনগুপ্তও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “এভাবে বাজি বাজার তো আগে কখনও হয়নি। তবে এক জায়গার লাইসেন্স নিয়ে আরেক জায়গায় ব্যবসা করা যায় কি না তা দেখতে হবে। পাশাপাশি ওই জায়গায় সমস্ত দোকান নিয়ে যাওয়া হলে সাধারণ মানুষের অসুবিধে হবে।”
পুলিশ কমিশনারের অফিস যে ওয়ার্ডে সেখানকার কাউন্সিলর পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম। প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান বিরোধী দল নেতা বলেন, “আমার ওয়ার্ডের মধ্যেই পুলিশ কমিশনারেট। অথচ আমি বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে। যদি এ ধরনের বাজি বাজার হয়, সেখানে অন্য জায়গায় ব্যবসায়ীরা এসে ব্যবসা করতে পারবেন কি না তা আইনে দেখতে হবে। কারণ, পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবসা করতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.