দুর্গা নয়, লক্ষ্মীপুজোতেই শারদোৎসবের
আনন্দে মাতেন হাদিখালির মানুষ
ছর কুড়ি আগের কথা। পর পর তিন বছর গ্রাম খরার কবলে পড়েছিল অনাবৃষ্টির কারণে। কৃষিপ্রধান এলাকায় এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল গ্রামের মানুষকে। দারিদ্রপীড়িত গ্রামে থাবা বসিয়েছিল অনাহার। এর থেকে রেহাই পেতে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর প্রকৃতির এমন রোষে না পড়তে হয় সে জন্য সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গ্রামে লক্ষ্মীপুজো করবেন। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম হাদিখালিতে সেই পড়ল লক্ষ্মীর পদচিহ্ন। গ্রামের মানুষের কথায়, লক্ষ্মীর কৃপায় আর তাঁদের সেই আগের অবস্থা দেখতে হয়নি। ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়েছে গ্রাম। গ্রামের কাউকে আর অনাহারে দিন কাটাতে হয় না। গ্রামের অনেকে কাজের খোঁজে অন্যত্র যাওয়ায় তাঁদের পরিবারের অবস্থা সচ্ছল হয়েছে। যত দিন গিয়েছে এই বিশ্বাসের ভিত আরও পোক্ত হয়েছে। আড়ম্বর বেড়েছে লক্ষ্মীপুজোরও।
আর সেই থেকে দুর্গাপুজো নয়, সীমান্তবর্তী হাদিখালি গ্রামের মানুষ মুখিয়ে থাকেন কবে আসবে লক্ষ্মীপুজো। দুর্গাপুজোয় নয়, গ্রামের মানুষ নতুন জামাকাপড় পড়েন এই সময়েই। লক্ষ্মীপুজোতেই শারদোৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম।
চলছে মণ্ডপ বাঁধার তোড়জোড়। বৃহস্পতিবার নির্মাল্য প্রামাণিকের ছবি।
গ্রামের মানুষ এবং স্থানীয় অগ্রগতি যুব সঙ্ঘ বেশ বড় করেই প্রতিবছর পুজোর আয়োজন করে। হাদিখালিতে এই একটিই বারোয়ারি পুজো। গোটা মহকুমার মানুষ যখন দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় মাতেন, তখন হাদিখালির মানুষ ব্যস্ত থাকেন তাঁদের লক্ষ্মীপুজোর ভাবনায়। গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই মণ্ডপ তৈরি করেন।
গ্রামে প্রায় ৩৫০টি পরিবারের বাস। সকলেই চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে মাঝেমধ্যেই চাষবাসে বিঘ্ন ঘটায় অনেকেই বাইরে কাজে খোঁজে চলে গিয়েছেন। কেউ দুবাই, কেউ কাতার, কেউ সৌদি আরব, কেউ কুয়েতে আছেন। জীবিকার তাগিদে বছরভর গ্রামের বাইরে, দেশের বাইরে কাটলেও এই সময় সকলেই গ্রামে ফিরে আসেন। যেমন প্রতিবারের মতো এ বারও ফিরে এসেছেন হারাধন বিশ্বাস, পঙ্কজ মৃধা, রমেন বিশ্বাস অনিমেষ বিশ্বাসরা। কাজের সূত্রে সৌদি আরবে থাকেন হারাধন। তাঁর কথায়, “পরিবার ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে বিদেশে গিয়ে থাকতে কষ্ট হয়। কিন্তু কী করব। এক সময় আমরা দারিদ্রসীমার নীচে বাস করতাম। এখন আয় বেড়ে অবস্থা সচ্ছল হয়েছে। সবই লক্ষ্মীর কৃপায়।” তাঁর মতোই কর্মসূত্রে বিদেশে থাকা অন্যারা জানালেন, এই সময় সকলেই বাড়ির জন্য টাকাপয়সা, নতুন জামাকাপড় নিয়ে ফেরেন। সেই টাকায় জাঁকজমক করে গ্রামে লক্ষ্মীর আরধনা হয়।
হাদিখালির এই উৎসবে সামিল হতে চলে আসেন স্থানীয় হেলেঞ্চা, বাঁশঘাটা, কুমোরখোল, বোচাখালির মতো ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ। অন্য জায়গার দুর্গাপুজোর মতো থিম, প্রতিমার চাকচিক্য না থাকলেও হাদিখালিতে কোজাগরীর চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন ধনের দেবী।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.