জলমগ্ন স্বরূপনগরে ত্রাণ নিয়ে চাপানউতোর
দুর্গাপুজো কেটেছে জলেই। ভেবেছিলেন লক্ষ্মীপুজোয় জল নেমে যাবে। ঘরে পড়বে লক্ষ্মীর পদচিহ্ন। কিন্তু তা আর হল না। জল না সরায় প্রায় এক মাস ধরে জলমগ্ন রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। ঘর জল ঢোকায় বেশিরভাগেরই আশ্রয় রাস্তার পাশে পলিথিনে তাঁবু বা স্কুল ভবনের ত্রাণশিবির এ ভাবেই কেটেছে পুজো।
অতিবর্ষণে ইছামতী-সহ রত্না মেদিয়া খাল ও বাওড় ছাপিয়ে স্বরূপনগরের পাঁচটি পঞ্চায়েতের কুড়ি পঁচিশটি গ্রাম পুজোর প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই জলমগ্ন। ভেঙে পড়ছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। ধান, কলা, উচ্ছে, পটল, ফুলের চাষ নষ্ট হয়েছে। যথেষ্ট ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ দুর্গতদের। গ্রামবাসীদের দাবি, পলিথিন, চাল বা ওষুধ কিছুই মিলছে না। তবে স্বরূপনগরের বিডিও অর্ণব রায় বলেন, “বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি গ্রামে জল জমে রয়েছে। ব্লকে আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৩৮৫টি। প্লাবিত মানুষদের সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে অবশ্য অন্য ছবিই দেখা গিয়েছে। স্বরূপনগর থানা থেকে টিপিঘাট পর্যন্ত প্রায় ছ’কিলোমিটার রাস্তা বিক্ষিপ্ত ভাবে জলমগ্ন। খর্দর সিং, কাঁটাবাগান, দুর্গাপুর, নলাবড়া, পান্তাপাড়া, তরণীপুর, নিশ্চিন্দিপুর, লতারখাল, টিপি, চারঘাট, মোল্লাডাঙা, ঘোলা, দিয়াড়া, তৈপুল, মির্জাপুর, কাচদহ, শগুনা, মেদিয়া, শ্রীনাথপুর গ্রামগুলির বেশিরভাগ কৃষিজমিই জলের তলায়। বাড়ির ভিতরে কোমর সমান জল। রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জলস্রোত।
জিনিসপত্র, পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয়ের পথে। জলমগ্ন ত্রাণশিবিরও।
কাঁটাবাগান গ্রামে বাড়ি পেশায় ঠিকাশ্রমিক বিধুভূষণ দাসের। ঘরের ভিতর হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ইছামতীর বাঁধে পলিথিনের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী অনিমা বলেন, “দুর্গাপুজোর আগে থেকে নদীর বাঁধে কাটাচ্ছি। এক মাসে মাত্র দুই কিলো চাল আর ১টি পলিথিন ছাড়া কিছুই মেলেনি। কচু সেদ্ধ আর নদীর পুঁটি মাছ ছাড়া কিছুই খাওয়ার নেই।”
কাঁটাবাগানের শিবানি বিশ্বাস, খর্দ্দরসিং গ্রামের পূর্ণিমা বিশ্বাসদের কথায়, “ধান নষ্ট হচ্ছে। ঘরে জল। বিষাক্ত সাপের ভয়। ত্রাণ অমিল। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুজো হবে কী করে?” ক্ষুব্ধ আঞ্জুয়ারা বিবি, ফতেমা খাতুনেরা বলেই ফেললেন, “ভোটের সময় তো সব রাজনৈতিক নেতারা ঘরে ঢুকে টাকা দিয়ে যায়। অথচ এখন যে আমরা সর্বস্ব খোয়াতে বসেছি, তা নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যাথা নেই। নামে ত্রাণ শিবির করা হয়েছে। এক কিলোগ্রাম চাল ছাড়া কিছুই জোটেনি। কচু আর পাতা খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।”
ত্রাণ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের পারস্পরিক দোষারোপ। স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের। সমিতির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “মানুষ যাতে আমাদের ভুল বোঝে, তার জন্যই ত্রাণের ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করছে না প্রশাসন।” অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন অর্ণববাবু।
অন্য দিকে, তৃণমূলের স্বরূপনগর ব্লক সভাপতি রমেন সর্দারের ক্ষোভ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “কেবল মাত্র দুর্গতদের ত্রাণ ও পলিথিন বিলির জন্য সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানদের বলা হয়েছিল। কোনও কোনও গ্রামের প্রধান সবাইকে ত্রাণ দেওয়ায় দুর্গতেরা অনেক সময়ে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
বাসিন্দাদের দাবি, পরিকল্পনা ছাড়া ইছামতীর সংস্কার থেকে শুরু করে নিকাশির জন্য স্লুইস গেট বসানোতেই এই বিপত্তি। এখনই যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে জল নামাতে কয়েক মাস লেগে যাবে। আর তাই বিধুবাবুর স্ত্রী বলে ওঠেন, “পুজোর সময় বাঁধে কাটালাম। ছেলেমেয়েকে নতুন জামা দিতে পারিনি। দুর্গাপুজো কাটল। লক্ষ্মীকেও ঘরে তুলতে পারলাম না!”
—নিজস্ব চিত্র।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.