দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমা ফেটে মৃত্যু হল এক তৃণমূলকর্মীর। জখম আরও দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম প্রদীপ দাস (২৬)। বুধবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ ঘোলার অপূর্বনগরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বসে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ ও তাঁর দুই বন্ধু মনোজ বিশ্বাস এবং পরিমল বিশ্বাস। অভিযোগ, তাঁদের উপরে চড়াও হয় স্থানীয় দুষ্কৃতী বাদল মণ্ডল ও তার এক সঙ্গী। মনোজকে লক্ষ করে বাদল একটি কৌটো বোমা ছোড়ে। পাশে বসে থাকা প্রদীপের পায়ের কাছে বিকট শব্দে সেটি ফাটতেই মোটরবাইকে চেপে পালিয়ে যায় তারা।
এই ঘটনায় মোট সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই এই ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বোমার ঘায়ে ওই তিন তৃণমূলকর্মী কিছুক্ষণ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন। দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়েছে বুঝতে পেরে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে গিয়ে তিন জনকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, কৌটো বোমাটি ঠান্ডা পানীয়ের একটি ক্যান দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। বোমার মশলার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পেরেক ও ঠান্ডা পানীয়ের বোতলের ছিপি ছিল। সেগুলির আঘাতে প্রদীপ সব থেকে বেশি আহত হন। তাঁকে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাকিদের নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় প্রদীপের। বুধবার ঘটনার পর থেকেই এলাকায় টানটান উত্তেজনা ছিল। প্রদীপ, মনোজের বাড়ি থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধেই আঙুল তোলা হয়। মনোজের মা সুভদ্রা বিশ্বাস পুলিশের কাছে বাদল মণ্ডল, নীতীশ ধর ও বলাই পাল নামে তিন জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন।
এর মধ্যে নীতীশ ও বলাই ওই এলাকারই বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে তারা সপরিবার ঘর ছাড়া। বাদল ও অন্যরাও এলাকাছাড়া বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ পিকেট রয়েছে। রাস্তার ধারে দরমার বেড়ার তৃণমূল কার্যালয়ের বাইরে চাপ চাপ রক্ত। বেড়ার খানিকটা অংশ গর্ত হয়ে গিয়েছে। টালির চালও ভেঙেছে। বোমার টুকরো ছড়িয়ে আছে চারদিকে। কিছুটা দূরেই প্রদীপদের বেড়ার বাড়ি। মাটির দাওয়ায় বসে প্রদীপের বাবা পরিমলবাবু বলেন, ‘‘আমার ছেলে তৃণমূল করত। আর যারা মারল তারাও তৃণমূলের। কত বার ছেলেটাকে মারধরও করেছে তোলাবাজেরা। কেউ তখন পাশে দাঁড়ায়নি। আমরা কিছু বলব না। শুধু দোষীদের শাস্তি চাই।’’
সুভদ্রাদেবীর অভিযোগ, ‘‘শাসকদলেরই ছত্রচ্ছায়ায় থেকে বাদলরা মনোজদের হুমকি দিচ্ছিল। এলাকায় বেআইনি ভাবে জমির দালালি ও তোলাবাজির প্রতিবাদ করত মনোজ, প্রদীপরা। সম্প্রতি একটি জমি নিয়ে তোলাবাজি করার চেষ্টা চলছিল বলে মনোজ বাধা দেয়। তাই আমার ছেলেকে মারতে গিয়েছিল।’’ তদন্তকারীরাও জানান, আক্রমণের লক্ষ্যে ছিলেন মনোজ। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি বড় জমির দখল নিয়ে মনোজদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল বাদলদের। দু’পক্ষই শাসকদলের হওয়ায় নেতা বা পুলিশ প্রশাসন কেউই বিষয়টিতে মাথা গলাতে চায়নি। কিন্তু বুধবার রাতের বোমাবাজি ও তৃণমূলকর্মীর মৃত্যুর পরে সরাসরি যখন অভিযোগ উঠছে দলের একাংশের বিরুদ্ধে তখন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার সভাপতি তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষও দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই খুনের কথা কার্যত স্বীকার করেছেন।
এ দিন নির্মলবাবু বলেন, ‘‘যারা আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা চালাল, তারা সিপিএম করত। এখন স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাদের দলে ঢুকে থাকতে পারে। এদের জন্য দলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রদীপরা এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করছিল। ওদের সেটা পছন্দ হয়নি।’’ ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা পলাতক। তল্লাশি চলছে। জখম দু’জন একটু সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ |