প্রতিমা কিনতেই নাভিশ্বাস, পুজোর জোগাড়ে হিমশিম
তবারও ৬০-৭০ টাকায় পাওয়া গিয়েছিল। এ বার আর একশোর নীচে কিছু নেই। পুজোর আগের দিন ছাঁচের এক বিঘত প্রতিমাও ১২০-১২৫ টাকা দরে বিকোচ্ছে। শাড়ি-ওড়না পরালেই সাড়ে তিনশো থেকে ৪০০ টাকা দর হাঁকাচ্ছেন প্রতিমা বিক্রেতারা। দেড়-দু’হাতের প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দামে।
তার উপরে সব্জির বাজারে আগুন। ফুলের দাম আকাশ ছোঁওয়া। রেহাই শুধু ফলের বাজারে। এখনও ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে আপেল পাওয়া যাচ্ছে (গত বার ১২০ ছুঁয়েছিল)। এই অবস্থায় পুজোর প্রসাদটুকু ছেড়ে বাজেট ছাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যবিত্ত বাঙালি। আকাশ ছোঁওয়া বাজারে লক্ষ্মীর আরাধনায় বিলাসিতা করার কোনও জায়গা নেই।
বিক্রেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে সব্জির দাম আরও চড়বে। ‘পিলিনে’র দাপটে অষ্টমীর রাত থেকেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। নবমী, দশমীটানা দু’দিন বৃষ্টি থামেনি। তার উপর কখনও ডিভিসি, কখনও কংসাবতী, আবার কখনও ঝাড়খণ্ডের গালুডি বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছেড়েছে। সেই জলে ভেসে গিয়েছে সুবর্ণরেখা, শীলাবতী-সহ বিভিন্ন নদী। কোথাও বাঁধ ভেঙেছে, আবার কোথাও বাঁধ উপচানো জলে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গাগুলি থেকে যদিও জল দ্রুত নেমে গিয়েছে। কিন্তু নীচু এলাকাগুলি এখনও জলমগ্ন। বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সব্জির চাষ সব থেকে বেশি হয় যে দাসপুর ব্লকে, সেখানে মাঠ-ঘাট সব ভাসছে। জল নামতে নামতে বেশিরভাগ গাছই পচে নষ্ট হবে। মাঠের ফসল মাঠেই শেষ হলে দাম তো বাড়বেই।
লক্ষ্মীপুজোর কেনাকাটা এগরায়। ছবি: কৌশিক মিশ্র।
তাই তো বাজারে গিয়ে মাথায় হাত সকলের। একটা ফুলকপি, যা বড় জোর দু’জনের পাতে দেওয়া যাবে, তার দাম ১৫ টাকা। খিচুড়িতে ফুলকপি দেওয়া কঠিন। টোম্যাটোর দাম ৬০ টাকা কেজি, ঝিঙে ৩০ টাকা। আলু ক’দিন আগেও ৮-১০ টাকা কেজি ছিল। তারও দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজি প্রতি ১২ টাকা। পেঁয়াজ আবার বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা কেজি। শসা ৩০ টাকা কেজি। যেদিকেই তাকান, কম দামের কোনও সব্জি নেই। সব্জি বিক্রেতা নূর আলির কথায়, “আমরাই বা কী করব? এক পাল্লা (৫ কেজি) ঝিঙে কিনছি ১২০-১৩০ টাকায়। সারাদিন বাজারে বসে বিক্রি করব, যদি ২০-৩০ টাকাও না পায় তা হলে চলবে কী করে?”
মধ্যবিত্ত বাঙালিরও বা কী করার আছে? পকেটের কথা ভেবে তো আর পুজো বন্ধ করে দেওয়া যায় না। বাজার সেরে বাড়ি ফেরার পথে মেদিনীপুরের অজয় রায় গজগজ করছিলেন, “এ ভাবে কী বাড়িতে অনুষ্ঠান করা যায়। পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ ব্যাগের অর্ধেকও ভরেনি। বাড়িতে অনেক দিনের পুজো। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি মিলে আমন্ত্রিতের সংখ্যা কম নয়। পাতে দেব কী?”
নারকেল বিকোচ্ছে এক-একটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। নাড়ু করবে কে? নাড়ুর অন্য উপাদান অর্থাৎ চিনি ৪০ টাকা কেজি, গুড় ৬০-৭০ টাকা। অন্নভোগের জন্য প্রয়োজনীয় গোবিন্দভোগ চাল ৮০ টাকা, আতপ চাল ২৪-২৮ টাকা, মুগের ডাল ১২০ টাকা ও ছোলার ডাল ৬০ টাকা। খইয়ের দামও বেড়েছে খুবকেজি প্রতি ৭০ টাকা। ফলের বাজারে অবশ্য তারই মধ্যে স্বস্তি। আপেল ৬০-৮০ টাকা, বেদানা ১২০ টাকা, নাসপাতি ৭০ টাকা, আঙুর ১৫০ টাকা প্রতি কেজি। কলা ৩০ টাকা প্রতি ডজন, মুসুম্বি এক-একটা ৭ থেকে ৮ টাকা, শশা ৫০ টাকা ও পানিফল ৩০ টাকা। ঘটের জন্য শিস-সহ ডাব এক-একটি ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
এরই মধ্যে আকাশ ছোঁওয়া ফুলের বাজার। অতিবর্ষণে ফুলের জোগান কম বলে এক থেকে দেড় হাতের এক-একটি গাঁদা ফুলের মালা ১৫-২০ টাকা ও রজনীগন্ধার মালার দাম ৩০-৪০ টাকা। পদ্মফুল এক-একটি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুর্গাপুজোর সময় অপরাজিতা ফুলের দাম ছুঁয়েছিল হাজার টাকা কেজি দরে। এখন অবশ্য তা কমে হয়েছে আড়াইশো টাকা। দোপাটি চলছে দু’শো টাকা কেজি দরে। পুজোর ঘটের গামছা ৫০-৮০ টাকা, ঠাকুরের শাড়ি খুব কম করেও ১৮০-২০০।
দুই মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন বাজারে আগুনে এই দরে বিক্রিবাট্টা চলছে। মা লক্ষ্মীর আরাধনা করতে গিয়ে সেই আগুনে হাত পুড়ছে বাঙালি গৃহস্থের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.