শহরকে জঞ্জাল মুক্ত করতে একটি কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। মাস দুয়েকের মধ্যেই আসানসোলে কেন্দ্রটি তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ওই দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলের বকবাধি এলাকায় দু’নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কেন্দ্রটি বানানো হবে। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই তাঁরা ওই এলাকায় খাস জমি চিহ্নিত করেছেন। কাজ শেষ হলে আসানসোল-সহ আশপাশের পুরসভাকে পুরোপুরি আবর্জনামুক্ত করা সম্ভব হবে বলেও তাদের দাবি। দুর্গাপুর মহকুমায় ওই ধরণের কেন্দ্র আগে থেকেই রয়েছে। আসানসোলেও অনেক দিন থেকেই কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের দাবি তুলছিলেন নাগরিকেরা। সম্প্রতি পুরসভা এবং এডিডিএ-র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ খতিয়ে দেখার জন্য আসানসোলে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন ফিরহাদ হাকিম। তখন তাঁর কাছেও আধিকারিকদের তরফে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ার আবেদন করা হয়।
মন্ত্রী জানান, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক আসানসোলে ওই কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফিরহাদ হাকিম বলেন, “একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে কেন্দ্রটি চালানো হবে। আগামি দু’মাসের মধ্যেই কেন্দ্রটি গড়া হবে।”
জঞ্জাল সাফাই আসানসোল পুরসভা এলাকার চিরকালীন সমস্যা। ৫০টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত আবর্জনা ফেলার জায়গা না থাকায় বহু বছর ধরেই দু’নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে আবর্জনা ফেলা হয়। ফলে শহরে ঢোকার মুখেই রাস্তার দু’পাশে জমে উঠছিল আবর্জনার স্তুপ। শিল্পশহরে প্রায় প্রতি দিনই নানা প্রান্তের সরকারি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আসেন। শহরে ঢোকার মুখে এই দৃশ্য দেখে বিরূপ মন্তব্য করেন তাঁদের অনেকেই এছাড়া প্রায় আড়াই কিমি এলাকা জুড়ে বিশাল জঞ্জালের স্তুপে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। মাঝে মাঝে স্তুপে আগুন ধরে ধোঁয়া ও কটু গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যান বাসিন্দারা। এমনকী অনেকক্ষেত্রেই দমকল ডেকে আগুন নেভাতে হয়। ফলে বারবারই আবর্জনায় স্তুপ সরানোর দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। জাতীয় সড়ক অবরোধও করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। আসানসোলের একাধিক পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনও বহু বার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের আসানসোল শাখা ও আসানসোল পুরসভার কাছে আবেদন করেছেন। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের আসানসোল শাখার আধিকারিকদের দাবি, পুরসভাকে তাঁরা বহুবার এই আবর্জনাগুলি দুর্গাপুরের কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করেছেন। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ আবেদন কানেই তোলেননি।
আসানসোল পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, একবার তাঁরা আবর্জনাগুলি দুর্গাপুরের কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবহণ খরচের ধাক্কা সামলানো সম্ভব হয়নি। ফলে পিছিয়ে এসেছে পুরসভা। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কেন্দ্রটি হলে অর্থও বাঁচবে। শহরও আবর্জনা মুক্ত থাকবে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, জঞ্জাল সাফাই ও আবর্জনার স্তুপ নিয়ে কুলটি পুরসভাতেও সমস্যা রয়েছে। আসানসোলের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি তৈরি হলে কুলটি পুরসভার জঞ্জালও এখানে আনা যাবে। ফলে দুই শহরকেই সাজিয়ে তোলা যাবে বলে তাঁর দাবি। |