এক একটি ব্লকে এক এক রকম পুজোর সাজ, রোশনাই। মণ্ডপগুলিতে ছিল পরিবেশরক্ষা থেকে নানাবিধ সমাজ সচেতনতার পাঠ। কিন্তু পুজো মিটতেই উধাও সব। ব্লকগুলির চারপাশ থেকে শুরু করে বড় রাস্তায় আবর্জনা। অথচ সাফাইয়ের প্রচেষ্টাই চোখে পড়ে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুজো উদ্যোক্তারা যেমন দায় ঝেড়ে ফেলেছেন, তেমনই উদাসীন পুরপ্রশাসন। তবে পুরপ্রশাসনের দাবি, সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পুজো উদ্যোক্তাদের সচেতনতার অভাবে সমস্যা বাড়ছে। উদ্যোক্তাদের অধিকাংশের অবশ্য দাবি, তাঁরাও সাফাইয়ের কাজ করছেন। কিন্তু যে যা-ই বলুন না কেন, সল্টলেক ফের ভরে উঠেছে আবর্জনায়।
সল্টলেকের নেতাজি মূর্তি থেকে বাইপাসমুখী রাস্তার দু’ধারে নতুন সাজা বুলেভার্ডের উপরে স্তূপীকৃত পুজোর সামগ্রী। দৈনন্দিন আবর্জনা তো রয়েইছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দশমীর পরে তিন দিন কেটে গেলেও পুজো উদ্যোক্তা বা পুরসভার তরফে আবর্জনা সাফ করার কোনও প্রচেষ্টাই চোখে পড়ছে না। স্থানীয় এক বাসিন্দা রমেন বসু বলেন, “পুজোর দিনে সচেতনতার রকমারি প্রতিশ্রুতি শুনেছি। এখন কিছুই চোখে পড়ছে না। ঘটা করে পুজো করে নানা পুরস্কার মেলে। অথচ শহর নোংরা করার জন্য কোনও শাস্তি হয় না!”
এজে ব্লকের কাছে একটি রাস্তায় স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে আবর্জনা ও পুজোর সামগ্রী। ওই পথে নিত্যযাত্রী কেষ্টপুরবাসী শুভমিতা রায় বলেন, “চারধারে আবর্জনা। তবে শুধু প্রশাসনের ঘাড়ে দায় চাপানো ঠিক নয়। উদ্যোক্তাদেরও সচেতনতার অভাব। লক্ষাধিক টাকার পুজোয় কিছু অর্থ বাঁচিয়ে তো এলাকা সাফ করার জন্য ব্যয় করা যায়।” |
গোটা সল্টলেক জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ছে স্তূপীকৃত আবর্জনার ছবি। পুরপ্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু পুজোর সামগ্রী যত্রতত্র পড়ে রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে সেগুলি সংগ্রহ করে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলার মতো কর্মী বা গাড়ির অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।
অভিযোগ অনেকটাই স্বীকার করে নিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশ। যেমন এফডি ব্লকের পুজো উদ্যোক্তা প্রদীপ সেনগুপ্ত বলেন, “পুজোর পরে এলাকা সাফ করার দায়িত্ব অবশ্যই উদ্যোক্তাদের নেওয়া প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই সাফাইয়ের কাজ শুরু করেছি। আগামী সাত দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিমা যেখানে গলানো হয়েছিল, পরদিনই সেখানে আমরা সাফাইয়ের কাজ করেছি।” এএ ব্লকের পুজোর এক কর্মকর্তা বলেন, “পুজোয় চারদিন ধরেই যদি নিজের এলাকা সাফ রাখা যায়, তাহলেই আর সমস্যা হয় না। বিদ্যুৎ দফতর যদি পরিষেবার জন্য পুজোর চার্জ নেয়, তবে পুরসভাকেও অতিরিক্ত এই আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য কিছু অর্থ দিতে আমাদের ভাবা দরকার।”
বাসিন্দাদের সংগঠন সল্টলেক (বিধাননগর) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “অত্যন্ত অন্যায়। ঘটা করে পুজো হবে, অথচ সাফাইয়ের বেলায় কারও হুঁশ থাকবে না? এটা চলতে পারে না। পুজোর পরে সাফাইয়ের কাজ বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।”
সল্টলেক পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবাশিস জানা সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “পুজোর দিনে আবর্জনা বেড়ে যায়। অথচ পুজোর পরে কর্মীসংখ্যা কম থাকে। তাই খানিকটা সমস্যা হয়। তবুও দ্রুত সাফাইয়ের কাজ শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। পুজো উদ্যোক্তাদের সচেতনতার অভাবে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। তবে আশা করছি পরবর্তী সময়ে তাঁদের সহযোগিতা পাব।” |