প্রাচীন মেরুভল্লুকই কি ইয়েতির পূর্বসূরি, ইঙ্গিত ব্রিটিশ গবেষণায়
তুষারদেশের রাজা তা হলে শুধু পর্বতারোহীদের কল্পনার রাজত্বেই থাকেন না।
অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে ব্রিটেনের অধ্যাপক ব্রায়ান সাইকসের গবেষণা। প্রাণীবিজ্ঞানের দুনিয়ায় অপরিচিত দুই প্রাণীর লোমের সঙ্গে সম্প্রতি তিনি জিনগত মিল খুঁজে পেয়েছেন মেরুভল্লুকের পূর্বসূরির। এবং তথ্য বলছে, ওই অপরিচিত দুই প্রাণী আর কেউ নয়, ‘ইয়েতি’ বা ‘অ্যাবোমিনেবল স্নোম্যান’। অর্থাৎ সহজ ভাবে বললে, এত দিন রোমহর্ষক গল্পের পাতায় যাদের দেখা মিলত, কল্পদুনিয়ার সেই তুষারমানব সম্ভবত মেরুভল্লুকের উত্তরসুরি। এবং হিমালয়ের বরফঢাকা প্রান্তরে তার ঘুরে বেড়ানো মোটেও অসম্ভব কোনও ঘটনা নয়।
ইয়েতিকে নিয়ে আগ্রহ নতুন কিছু নয়। নেপাল এবং তিব্বতের পর্বতে যাঁরা ভ্রমণ কিংবা পর্বতারোহণের নেশায় পাড়ি দেন, তাঁদের অনেকেই ইয়েতির দেখা পেয়েছেন, এমন গল্প বহুল প্রচারিত। শুধু প্রাপ্তবয়স্করা নন, ছোটদের মধ্যেও তুষারমানব এতটাই জনপ্রিয় যে টিনটিন-সিরিজেও তার দেখা মিলেছে। সেখানে অবশ্য সে অনুভূতিতে, ভাবনায় অনেকটাই মানুষের কাছাকাছি।
তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হিউম্যান জেনেটিক্স’-এর অধ্যাপক ব্রায়ানের মতে, মানুষ নয়, বরং মেরুভল্লুকের সঙ্গেই ইয়েতির মিল বেশি। কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন তিনি? আসলে, গত বছরই ‘ক্রিপটিড’ অর্থাৎ এত দিন পর্যন্ত যে সব প্রাণীর অস্তিত্বের ব্যাখ্যা মেলেনি, এমন প্রাণীর লোমের নমুনা পাঠানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি। ৩০টিরও বেশি নমুনা এসে পৌঁছয় তাঁর কাছে। তবে গবেষণার জন্য অধ্যাপক ব্রায়ান মূলত বেছে নন দুটি নমুনা। যাঁরা ওই নমুনা পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের দেওয়া তথ্য বলছে, হিমালয়েরই দুই এলাকা থেকে সন্ধান মিলেছিল ওগুলির। একটি মিলেছিল লাদাখ থেকে, অন্যটির সন্ধান মেলে ভূটান থেকে। ভৌগোলিক ভাবে দেখতে গেলে দুই অঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব প্রায় আটশো মাইল। কিন্তু মিলও রয়েছে। প্রথমত দুটো নমুনাই মিলেছিল হিমালয় থেকে। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গল্প-কাহিনিতে হিমালয়ই ইয়েতির আবাসস্থল বলে পরিচিত। দ্বিতীয়ত, দুটোরই সন্ধান মিলেছিল বরফঢাকা প্রান্তর থেকে। যা কি না তুষারমানবের রাজত্ব বলেই পরিচিত।
এ দু’টি নমুনার সঙ্গে মেরুভল্লুকের চোয়ালের হাড়ের জিনগত মিল পরীক্ষা করেন তিনি। অধ্যাপক ব্রায়ান মেরুভল্লুকের যে প্রজাতির চোয়ালের হাড়কে গবেষণার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, তারা অবশ্য ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার বছর আগে বেঁচে ছিল। নরওয়ের উত্তরসীমায় অর্থাৎ উত্তর মেরুর কাছাকাছিই মূলত দেখা মিলত তাদের। গবেষণার ফল বলছে, সেই প্রাচীন মেরুভল্লুকের সঙ্গে একশো শতাংশ জিনগত মিল রয়েছে দুই অপরিচিত প্রাণীর চুলের নমুনার। তবে এখনই কোনও পাকাপোক্ত দাবি করতে নারাজ ব্রায়ান। বলেছেন, “আরও অনেক গবেষণা দরকার। আমার মোটেও মনে হয় না, হিমালয়ের প্রান্তরে মেরুভল্লুক ঘুরে বেড়ায়।” অর্থাৎ বরফঢাকা হিমালয়ে এখনই ইয়েতি বা মেরুভল্লুকের হিংস্র পদচারণা মানতে নারাজ ব্রায়ান।
আপাতত অবশ্য অনুমানেই ভরসা রাখছেন তিনি। তাঁর ধারণা, হিমালয়ে হয়তো বাদামি ভল্লুকের কোনও প্রজাতি থাকতে পারে। এবং মেরুভল্লুকের যে পূর্বসুরির নমুনা এই গবেষণার কাজে ব্রায়ান ব্যবহার করেছেন, সেই পূর্বসুরি হয়তো এই বাদামি ভল্লুকেরও পূর্বসুরি। তবে ইয়েতির অস্তিত্ব নিয়ে সব ব্যাখ্যাই আপাতত অনুমানের স্তরে।
শুধু আশার কথা একটাই। গল্পের রাজত্বে তুষারমানবের দাপিয়ে বেড়ানো আর সে গল্প শুনে অবিশ্বাসীর ব্যঙ্গবিদ্রুপ রুখতে ব্রায়ানের গবেষণা নতুন অস্ত্র দিল।
ইয়েতি এখনও অবশ্য প্রমাণহীন। তবে ভিত্তিহীন নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.