|
|
|
|
উল্কিই চিনিয়ে দিল ২০ বছর আগে হারানো ছেলেকে |
সংবাদ সংস্থা • মুম্বই |
ছোট্ট একটা ছেলে হারিয়ে গেল ভিড়ে। বড় হওয়ার পর খুঁজে পেল হারানো মা-বাবাকে। শুনলে মনে হতেই পারে সত্তর কিংবা আশির দশকের কোনও হিন্দি ছবি। সিনেমার চিত্রনাট্যের ক্লাইম্যাক্সটাই গণেশ রঘুনাথ ধানগাড়ের জীবনের গল্প।
সালটা ১৯৮৯। ছ’বছরের গণেশ বন্ধুর সঙ্গে চেপেছিল মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে। যাচ্ছিল বন্ধুরই এক আত্মীয়ের বাড়ি। ট্রেনের দমবন্ধ ভিড়ে সে হারিয়ে ফেলে বন্ধুদের। নিজের বাড়ি ফেরার রাস্তাও চেনা নেই। অগত্যা ঠাঁই হয় প্ল্যাটফর্মেই। খাবার জুটে যেত কোনও না কোনও মন্দির বা দরগায়। মাঝেমধ্যে প্ল্যাটফর্ম পরিষ্কার করেও আয় হত দু-চার টাকা। এ ভাবে ঠিক কত দিন চলেছিল মনে নেই গণেশের। এর পর তার দেখা হয় এক মৎস্যজীবীর সঙ্গে। ছোট্ট গণেশকে সে নিয়ে যায় নিজের বাড়ি। লোকটার ছেলেও গণেশেরই বয়সী। তারা দু’জন হয়ে গেল খেলার সঙ্গী। তবে লোকটার ছিল অন্য মতলব। গণেশকে দিয়ে লোকাল ট্রেনে ভিক্ষা করাত সে। বিনিময়ে দু’বেলা খেতে দিত।
এক দিন ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে একটা ট্রেন ধাক্কা মারে তাকে। কয়েক মাস কোমায় থাকার পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে সে। হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা তার কোনও ঘরদোরের খোঁজ না পেয়ে পাঠিয়ে দেন অনাথ আশ্রমে। সেখানেই শুরু হয় পড়াশোনা। সঙ্গে খেলাধুলো। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার ফাঁকে সে খেলতে শুরু করে রাজ্যস্তরের পাশাপাশি জাতীয় স্তরেও। বাড়ির কথা প্রায় মনেই পড়ত না। শুধু হাতে উল্কি করা ছিল মায়ের নাম, মন্দা আর ধানগাড়ে। বাড়ির স্মৃতি বলতে সম্বল সেটুকুই। |
|
নিজের বাড়িতে মা-ভাই-বোনের সঙ্গে গণেশ। ছবি: এএফপি। |
কৈশোর পেরিয়েই চাকরির খোঁজ শুরু করে গণেশ। পুলিশে চাকরির পরীক্ষা দিল। সব ক’টা ধাপ পেরিয়ে পায় কনস্টেবলের চাকরি। প্রথম দিন যখন সিনিয়ররা নতুনদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করছিলেন, গণেশ নিজের নামটুকু ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি। অনেক বার জিজ্ঞাসা করার পর বলেছিল, তার হারিয়ে যাওয়ার গল্প। আর দেখিয়েছিল হাতে উল্কি করা মায়ের নামটা।
কত অচেনা লোককেই তো খুঁজে বার করে পুলিশ। ফিরিয়ে দেয় পরিবারের কাছে। আর এক জন পুলিশকর্মী খুঁজে পাবেন না তাঁর পরিবারকে। গণেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন ইনস্পেক্টর শ্রীকান্ত সোন্ডে। বললেন, খুঁজে দেখো নিরুদ্দেশের অভিযোগগুলি। অর্কুট এবং ফেসবুকেও শুরু হয় খোঁজ। তাতে বিশেষ লাভ না হলেও হাল ছাড়েননি গণেশ। খোঁজ করতে করতেই এক সময় জানতে পারেন ঠাণের কাছাকাছি এলাকায় থাকেন মন্দা ধানগাড়ে নামের এক প্রৌঢ়া।
কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে গণেশ যখন সেখানে পৌঁছন তখন বাড়ির লোকেরা ব্যস্ত একটি শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে। মন্দাদেবীকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হল, বছর ২০ আগে ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল আপনার? চোখ ছলছলিয়ে উঠল প্রৌঢ়ার। কোনও মতে মাথা নেড়ে জবাব দিলেন, হ্যাঁ। দুরুদুরু বুকে গণেশই জিজ্ঞাসা করলেন, ছেলেকে চেনার কোনও নিশান আছে? প্রৌঢ়া জানালেন, ছেলের হাতে উল্কি করে লেখা রয়েছে তাঁর নাম, মন্দা আর ধানগাড়ে। শুনে নিঃশব্দে নিজের উল্কি করা হাতখানা মায়ের সামনে বাড়িয়ে দিলেন গণেশ। ২০ বছর পর মা-ছেলের পুনর্মিলনের দৃশ্য দেখে চোখের জল সামলাতে পারেননি বাকিরাও।
গণেশ এখন থাকেন ঠাণের পুরনো বাড়িতেই। মা, দুই ছোট ভাই আর এক বোনের সঙ্গে। গণেশ হারানোর পর থেকে বাড়িতে কোনও উৎসব পালন করা হয়নি। মন্দাদেবীর স্বপ্ন, এ বারে দীপাবলি পালন করবেন খুব ধুমধাম করে।
হারানো ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে যে! |
|
|
|
|
|