|
|
|
|
ফিশ ফ্রাই ছাড়াই এখন সান্ধ্য ভোজ হবে রাজধানীতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সন্ধে হলে আর হাজির হবে না মনকাড়া গন্ধে ভরপুর ট্রে। তারিয়ে তারিয়ে ফিশ ফ্রাই খাওয়ারও দিন শেষ। হাওড়া রাজধানীতে খাবারের মেনু থেকে বাঙালির সাধের মাছই যে উধাও!
রেলের তরফে ঘোষণা আগেই হয়ে গিয়েছিল। তা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে খাবার মহার্ঘ হল দেশের প্রধান তিনটি ‘অভিজাত’ ট্রেনে রাজধানী, দুরন্ত ও শতাব্দী এক্সপ্রেসে। সঙ্গে মেনুতেও এল বেশ কিছু বদল। রেলের মেনু থেকে মাছ কার্যত বিদায় নিয়েছে অনেক দিন। একমাত্র চালু ছিল হাওড়া-রাজধানী এক্সপ্রেসের সন্ধের খাবারে, ফিশ ফ্রাই হিসেবে। স্মৃতিবিজড়িত সুস্বাদু পদটি এ দিন থেকেই পাট গুটিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও খাবারের মান বাড়বে, এমন নিশ্চয়তা মিলছে না। দাম বাড়ার প্রথম দিনেই হাওড়া-পুণে দুরন্ত এক্সপ্রেসে যাত্রী বিক্ষোভ হল খাবারের মান এবং পরিমাণ নিয়েই।
অগত্যা মৎস্যবিলাসী যাত্রীদের এ বার ফিশ ফ্রাইয়ের স্বাদ মেটাতে হবে আলু টিক্কা, ভাজা পরোটা বা ভেজ রোল দিয়ে। শুধু তা-ই নয়, ফলের রসেরও পালা শেষ। তার বদলে এসেছে মিল্ক শেক। চেনা মেনুতে এ হেন পরিবর্তনের বহর দেখে বহু যাত্রী এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন। সরব আপত্তিও শোনা গিয়েছে অনেকের মুখে। জবাবে কর্তারা কী বলেন?
রেলের শীর্ষ কর্তারা আঙুল তুলছেন মূলত ‘আগুন দরের’ দিকে। তাঁদের ব্যাখ্যা, সংরক্ষণের সমস্যার কারণে অন্যান্য ট্রেনের খাবারে মাছের পাট উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন সঙ্গে জুড়েছে মাছের চড়া দর। রেল-কর্তাদের দাবি, প্রায় ১৪ বছর ধরে ভারতীয় রেলে খাবারের দাম একই রয়ে গিয়েছে। ফলে খাবারের মান ও পরিমাণ দুই-ই ক্রমশ কমছিল। ঠিকাদারেরা অনেক দিন ধরে দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ জন্যই রাজধানী-শতাব্দী-দুরন্তে ‘ক্যাটারিং চার্জ’ বাড়ানো হল। এতে হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের ভাড়া ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য রাজধানী, দুরন্ত ও শতাব্দী এক্সপ্রেসের ভাড়া বাড়ছে ২%-৪%। রেল-সূত্রের ইঙ্গিত, ধীরে ধীরে সব ট্রেনেই খাবারের দাম বাড়ানো হবে। |
|
এবং রেল-কর্তাদের দাবি, মাছের দাম এতটাই বেড়েছে যে, শুধু হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানীতে ফিশ ফ্রাই পরিবেশন করতে গেলে এই বর্ধিত দাম নিয়েও তাদের লোকসান করতে হবে। অতএব মেনু থেকে পদটি বিলুপ্ত করে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু ফলের রসের বদলে মিল্ক শেক কেন?
এর কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। কর্তাদের একাংশ এই পরিবর্তনের পিছনে অবশ্য খাবারে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ দেখছেন। যে কারণে প্রাতরাশের মেনুতেও বদল এসেছে। এসি-টু ও থ্রি টিয়ারের ব্রেকফাস্ট আর কলা মিলবে না। এসি-ফার্স্ট ক্লাসের প্রাতরাশে আবার জ্যাম-জেলির সঙ্গে বাড়তি প্রাপ্তি মধু। রাতের খাবারে স্যালাড বন্ধ। সন্ধেয় শোনপাপড়ির সঙ্গে মাঝে-মধ্যে গোলাপজামুনের দেখা পাওয়া যাবে। দু’দিনের বেশি সময় ধরে ভ্রমণরত যাত্রীদের জন্য বিশেষ ‘কম্বো প্যাক’ও চালু হচ্ছে। এতে দিনের প্রথম ও তৃতীয় খাবারের মেনু হবে ভারী। তুলনায় হাল্কা হবে দ্বিতীয় ও চতুর্থ খাবার। কর্তারা জানান, আপাতত মাসখানেক নতুন মেনু চালিয়ে দেখা হবে, যাত্রীরা তা কেমন ভাবে নিচ্ছেন। প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী পরে অদলবদল হতে পারে।
কিন্তু দাম বাড়লেও মান বাড়বে কি? পরিমাণ?
মান বাড়া নিয়ে যে সংশয় রয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে প্রথম দিনেই। ভাড়াবৃদ্ধির প্রথম দিনেই খাবারের মান নিয়ে যাত্রী বিক্ষোভ হল হাওড়া-পুণে দুরন্ত এক্সপ্রেসে। রেল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে মধ্যপ্রদেশের গন্ডিয়া স্টেশনে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যাত্রীদের বক্তব্য, যা খাবার দেওয়া হয়েছে তার পরিমাণও যেমন কম, মানও ততোধিক খারাপ। অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন, রাতের খাবার থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বিক্ষোভ চলার পরে আরপিএফ যাত্রীদের ট্রেনে চড়িয়ে দেওয়ায় ফের ট্রেনটি রওনা হয়।
রেলের তাবড় কর্তারা স্বীকার করে নিচ্ছেন দাম বাড়লেই যে খাবারের মান বাড়বে, এমন নিশ্চয়তা নেই। “ঠিকাদারেরা এসি-থ্রি টিয়ারে প্লেটপিছু পাবে ১০৭ টাকা। স্লিপার ক্লাসে ৮০ টাকা। এতে কতটা ভাল মানের ও পরিমাণের খাবার দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক।” মন্তব্য এক শীর্ষ অফিসারের। |
|
|
|
|
|