অভিযান হয়েছে বারবার। ধরপাকড়ও হয়েছে। তবু জাল মদের কারবার বন্ধ হয়নি কাঁকসা-সহ দুর্গাপুর মহকুমার নানা এলাকায়। পুজোর আগেও অভিযান চালিয়ে বেআইনি মদ তৈরির সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ ও আবগারি দফতর।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে দেশি মদের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকার নিজের হাতে রেখেছিল। কিন্তু ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে তা বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরেই ওই মদের বোতল পিছু দাম বেড়ে যায় অনেকখানি। ফলে, পকেট বাঁচাতে নিজেদের ক্ষতির কথা ভুলে অনেকে চোলাই খাচ্ছেন। ডেকে আনছেন বিপদও। সে কারণেই চোলাইয়ের কারবার একেবারে বন্ধ করতে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হচ্ছে বলে আবগারি দফতরের দাবি।
পুজোর আগে কাঁকসার দোমড়ায় অভিযান চালিয়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম অসীম কিস্কুু। আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২০ লিটার ওডি স্পিরিট। নেশা যাতে বেশি হয় সে জন্য এই স্পিরিট চোলাইয়ে মিশিয়ে দেয় বেআইনি মদের কারবারিরা। জানা গিয়েছে, এই ওডি স্পিরিট মূলত কাঠের আসবাব যপত্রে বার্নিশ ও রং করার কাজে ব্যবহার করা হয়। ইথাইল অ্যালকোহলে পিডিটিন জাতীয় সামগ্রী মেশালে ইথাইল অ্যালকোহলের রং ও গন্ধ চলে যায়। এর ফলে যে মিশ্রন তৈরি হয় তা বিষাক্ত। চোলাইয়ে তা মিশিয়ে দিলে নেশা বেশি হবে। কিন্তু ওই স্পিরিটের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া, স্নায়ুতন্ত্র বিকল হওয়ার মতো ক্ষতি হতে পারে। ঘটতে পারে মৃত্যুও।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁচা ইথাইল অ্যালকোহল ধাপে ধাপে শুদ্ধ করে বিশেষ গন্ধ ও রং মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিদেশি মদ। কিন্তু দেশি মদে কোনও ফ্লেভার বা রং যোগ করা হয় না। দু’ধরনের মদই আইনি। দুর্গাপুর থানা এলাকায় সরকার অনুমোদিত দেশি মদের দোকান রয়েছে ১১টি। কোকওভেন থানা এলাকায় ৩টি এবং নিউ টাউনশিপ থানা এলাকায় দু’টি এমন দোকান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দোকান রয়েছে কাঁকসা থানা এলাকায়। মোট ১৬টি। এ ছাড়া বুদবুদ থানা এলাকায় আছে ৮টি দেশি মদের দোকান। অভিযোগ, চোরাগোপ্তা দেশি মদের কারবারও চলছে কাঁকসা, বুদবুদ ও দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বিষমদ খেয়ে অনেকের মৃত্যুর ঘটনার পরে রাজ্য জুড়েই বেআইনি মদ তৈরি বন্ধে অভিযান হয়েছিল। বাজেয়াপ্ত হয়েছিল বহু সামগ্রী। এই ধরনের মদের কারবারের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয় বেশ কিছু লোকজনকে। তার পরেও অভিযান হয়েছে। বর্ধমান (পশ্চিমাঞ্চল) আবগারি দফতরের এক কর্তার দাবি, নিয়মিত অভিযান চালানোয় বেআইনি চোলাইয়ের রমরমা আগের থেকে কমেছে। কিন্তু এই কারবার যে একেবারে বন্ধ হয়নি, কাঁকসায় ফের উদ্ধার হওয়া মদ তৈরির সামগ্রীই তার প্রমাণ। |