পানাগড়-মোরগ্রাম
পরপর দুর্ঘটনা, তবু সংস্কার নেই রাজ্য সড়কের
কের পর এক দুর্ঘটনা। গর্তে পড়ে খারাপ হচ্ছে গাড়ি। জখম হচ্ছেন যাত্রীরা। মাঝে-মধ্যে ঘটছে প্রাণহানিও। পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের পানাগড় থেকে অজয়ের সেতু পর্যন্ত অংশের তবু সংস্কার হয় না।
বর্ধমান জেলার পানাগড় থেকে মুর্শিদাবাদের মোরগ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭০ কিলোমিটার। রাস্তাটির পানাগড় থেকে অজয়ের সেতু পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে এই অংশের সংস্কার না হওয়ায় তা একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনাও। পুলিশেরই একটি হিসেব অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে গড়ে ৪০টি করে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে এই রাস্তায়। প্রতি মাসে দুর্ঘটনায় গড়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন বহু যাত্রী ও পথচারী। অবিলম্বে রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে বার বার বিক্ষোভও দেখিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে পড়তে হচ্ছে পুলিশকেও।
বুধবার সন্ধ্যায় এই রাস্তাতেই কাঁকসার পিয়ারিগঞ্জের কাছে একটি যাত্রীবোঝাই বাস উল্টে যায়। মৃত্যু হয় তিন বাসযাত্রীর। জখম হন আরও ৩০ জন। তাঁদের কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাস্তার গর্তে আটকে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় বাসটি। অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার না হলে এমন দুর্ঘটনা আরও ঘটবে বলেও দাবি করেছেন বাসিন্দারা।
পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে চারের মাইল এলাকায় নিজস্ব চিত্র।
এই রাস্তায় নিয়মিত যাতায়াত করেন, এমন কয়েক জন গাড়িচালক জানান, রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য গাড়ির ইঞ্জিন ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভেঙে পড়ছে অয়েল চেম্বার, ফেঁসে যাচ্ছে চাকা। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তাটি কার্যত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র খুশি এলাকার গাড়ি সারাইয়ের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। ত্রিলোকচন্দ্রপুর মোড়ে গাড়ি সারাইয়ের দোকান রয়েছে তন্ময় ঘোষ, নেপাল ঘোষের। রাস্তায় নিয়মিত গাড়ি খারাপের ঘটনার জেরে আগের থেকে রোজগার বেশ বেড়েছে, জানান তাঁরা।
বছর ১৫ আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে রাস্তাটির আমূল সংস্কার ও চওড়া করা হয়। উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে ৩৪ নম্বর রাজ্য সড়কের সংযোগকারী এই রাস্তা দিয়ে উত্তরবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড যাওয়া যায়। কলকাতা বা রাজ্যের অন্য নানা জায়গা থেকে শান্তিনিকেতন, তারাপীঠ যাওয়ার প্রধান রাস্তা এটি। দুর্গাপুর, আসানসোল থেকে শিলিগুড়িগামী বাসগুলি এই রাস্তা ধরেই যাতায়াত করে। এ ছাড়াও দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া থেকে বোলপুর, বহরমপুর, সিউড়িগামী বাস, প্রচুর মালবাহী ট্রাক চলে এই রাস্তা দিয়ে। বীরভূমের পাঁচামি থেকে পাথরকুচি বোঝাই অথবা অজয় থেকে বালি বোঝাই ভারী লরিও যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়েই। এ ছাড়া চলে গাড়ি এবং মোটরবাইক। ফলে রাস্তাটির উপর চাপ অত্যন্ত বেশি।
প্রশাসনেরই একটি সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুরে বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহাল রাস্তাঘাট নিয়ে সরব হন। পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের প্রসঙ্গও ওঠে সেখানে। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের। পুজোর কিছু দিন আগে তাপ্পি দিয়ে বড় খানাখন্দগুলি বুজিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে তাপ্পি উঠে গিয়ে ফের বেহাল হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। গলসির বিধায়ক সুনীল মণ্ডল জানান, বিধানসভায় রাস্তা সংস্কারের দাবি তুলেছেন তিনি। রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার জানান, সব রাজ্য সড়কগুলিই মেরামতির জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শীঘ্র কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস তাঁর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.