টানা বৃষ্টিতে কোথাও মাটির দেওয়াল ধসে পড়েছে। কোথাও নষ্ট হয়েছে ছাউনি। বৃষ্টি থামলেও রোদের দেখা নেই। মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি নামার আশঙ্কাও রয়েছে। এর মধ্যে মালদহের ইংরেজ বাজার, রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচলে বৃষ্টি ও ঘূর্ণি ঝড়ে দুর্গতদের ত্রাণের ত্রিপল মেলেনি বলে অভিযোগ। গত নবমীর রাত থেকে দশমী অবধি টানা বৃষ্টিতে মালদহের ৬ ব্লকে ৫ হাজারেরও বেশি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজ পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর আর গাজলে অন্তত ৫ হাজার কাঁচা বাড়ি বৃষ্টিতে ধসে গিয়েছে। গাছ উপড়ে, টেলিফোন, বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে ১০ জন জখম হন। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে বৃষ্টিতে অন্তত দু’হাজার মাটির বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজারের বেশি বাড়ি। ত্রাণের ত্রিপল না পেয়ে বুধবার হরিশ্চন্দ্রপুরে ফব বিধায়কের বাড়িতে বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান দুর্গতেরা। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিধায়ক তজমূল হোসেন। জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেন, “পর্যাপ্ত ত্রিপল রয়েছে। বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা ঘুরে প্রকৃত দুর্গতদের তালিকা তৈরি করছেন। তালিকা তৈরি হলেই ত্রাণ বিলি করা হবে।” |
দুর্যোগে ভেঙেছে বাড়ি। রতুয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
বিধায়কের নালিশ, হরিশ্চন্দ্রপুরে দুটি ব্লকে ৪৬৫টি গ্রাম। প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। বিধানসভা এলাকাতেই ৩ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। দুর্গতদের একটা করে ত্রিপল দিলেও সুরাহা হত। একই অভিযোগ মালতিপুরে আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সির। তিনি বলেন, “প্রশাসন বলছে আগে তদন্ত করা হবে। কিন্তু বৃষ্টি নামলে দুর্গতদের কী হবে সেটাও ওঁদের ভাবা জরুরি।”
গত রবিবার রাত থেকেই চাঁচল মহকুমা জুড়ে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ছিল হাওয়ার দাপট। বৃষ্টিতে ইংরেজ বাজার ব্লকের ১৮০০ মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কোথাও বৃষ্টিতে মাটির দেওয়াল ধসে পড়ে। কোথাও হাওয়ায় ছাউনি উড়ে গিয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকে এক হাজার, হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকে দেড় হাজার, চাঁচল-২ ও রতুয়া-১ ও ২ ব্লকে এক হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘরবাড়ির পাশাপাশি নিচু জমিতে বৃষ্টির জল জমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান ও কলাই খেত। পুকুরের জল উপচে পড়ায় মাথায় হাত মাছ চাষিদেরও। বৃষ্টির পাশাপাশি সোমবার সকালে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে রতুয়ার ৪টি গ্রামে। বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ উপড়ে পড়ে। উড়িয়ে নিয়ে যায় বাড়ির টিন ও খড়ের ছাউনি। ঘূর্নিঝড়ের প্রভাব পড়ে গাজলের ৪ গ্রামেও। ইংরেজবাজার ব্লকের আধিকারিক পার্থ দে বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বৃষ্টিতে ব্লকে ১৮০০ মাটির বাড়ি ধসে গিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে রিপোর্ট পেয়েছি। ২৫০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” সোমবার রাতে বজ্রপাতে গুরুতর জখম হন হবিবপুরের নরসিংহবাটির বাসিন্দা মহেশ বর্মন (২৮) ও নিমনৈল গ্রামের মুহুরি বর্মন (৫০)। হবিবপুর হাসপাতালে পরে তাঁদের মৃত্যু হয়। |