গ্রামীণ হাসপাতালের হাল দেখতে আচমকাই হাজির হয়েছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। এবং এসে শুনলেন, রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের কী পরিমাণ ক্ষোভ রয়েছে এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে। হাসপাতালের বেহাল দশা দেখে এবং পরের পর অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ সভাধিপতি হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে (বিএমওএইচ) সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
ঘটনাটি মানবাজারের। বুধবার হঠাৎ এলাকার গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন সৃষ্টিধরবাবু। সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের আরও দুই সদস্য, বরাবাজারের সুমিত্রা মল্লদেব ও মানবাজারের শ্যামসুন্দর মাহাতো এবং মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো। হাসপাতাল চত্বরে আবর্জনার স্তূপ দেখে সৃষ্টিধরবাবু স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে জানতে চান, প্রতিদিন সাফাইয়ের কাজ হয় কি না। বিএমওএইচ কোথায়, তা-ও জিজ্ঞেস করেন তিনি। বিএমওএইচ সুরজিৎ সিংহ হাঁসদাকে হাসপাতালে দেখতে না পেয়ে আরও ক্ষুব্ধ হন জেলা সভাধিপতি। সুমিত্রা মল্লদেব বলেন, “এখানে আমার কিছু আত্মীয় থাকেন। সেই সূত্রে জেনেছি, বিএমওএইচ হাসপাতালের কাজে ফাঁকি দিয়ে নিজের নার্সিংহোম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।” |
ইতিমধ্যে সভাধিপতিকে হাতের কাছে পেয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের পরিজনদের একাংশও অভিযোগ করেন, বেশির ভাগ ওষুধ তাঁদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। রোগী হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে নার্সদের ডেকেও পাওয়া যায় না। তাঁরা বলেন, “বিএমওএইচ প্রায় দশ বছর এখানেই আছেন। তাঁর দু’টো অ্যাম্বুলেন্স বেনামে এই হাসপাতালে ব্যবসা করছে।” এ ছাড়াও সৃষ্টিধরবাবুকে শুনতে হয়, বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীদের মাথার উপরে আজও শেড হয়নি। বছরভর রোদে-জলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রোগীর আত্মীয়দের জন্য প্রতীক্ষালয় থাকলেও তা এত নোংরা থাকে যে, কেউ ঘেন্নায় বসেন না। আলো-পাখাও নেই। বেশিরভাগ সময় ঘরটি তালাবন্ধ থাকে। কিছু লোক সভাধিপতির কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই মূল গেটের সামনে নর্দমা উপচে পড়ে। ওই জলকাদা মাড়িয়ে সবাইকে হাসপাতালে ঢুকতে হয়।”
পরে সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা অব্যবস্থায় ভরা। সুস্থ মানুষ এখানে ঢুকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন! বিএমওএইচ হাসপাতালে সময় কম দেন, বদলে কাছেই তাঁর নার্সিংহোমে বেশি সময় দেন বলে অভিযোগ পেয়েছিলাম। এখানে এসে দেখছি পুরোটাই সত্যি!” এর পরে তিনি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে (সিএমওএইচ) ফোনে ধরে বিএমওএউচকে সরানোর নির্দেশ দেন। সিএমওএইচ মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “সভাধিপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। আগেও মানবাজারের বিএমওএইচের কাজকর্ম নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। তবে, বিএমওএইচদের কাজের নির্দিষ্ট কোনও মেয়াদ নেই। আমরা সমস্ত দিক পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেব।” বিএমওএইচ সুরজিৎ সিংহ হাঁসদা পরে ফোনে দাবি করেন, “আমি ছুটি নিয়ে বাইরে আছি। হাসপাতালে অব্যবস্থার অভিযোগ ঠিক নয়।” অন্য সব অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেছেন। |