ঘুম ছুটেছে স্বাস্থ্য-প্রশাসনের
বংশ বাড়ছে ডেঙ্গি-মশার
ছরখানেক আগে মহানগরকে কাবু করার পর এবার উত্তরবঙ্গে থাবা বসিয়েছে এডিস মশা। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় এডিসের যে প্রজাতি রোগ ছড়াচ্ছে সেটি ‘এডিস এলবোপিটাস’। স্বাস্থ্য দফতর আরেক প্রজাতির এডিসের সন্ধ্যান পেয়েছে। সেটি ‘এডিস ইজিপ্টাই’। দুই প্রজাতির এডিসের দাপটে ঘুম ছুটেছে স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রশাসনের কর্তাদের। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, মহানন্দা নদী লাগোয়া এলাকাগুলিতে এডিসের উপদ্রব বেড়েছে। যে সমস্ত এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে, তা থেকে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উত্তরবঙ্গে মূলত পাহাড় লাগোয়া সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই মশা অস্বাভাবিক বংশ বিস্তার করেছে। তাতেই ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে। ওই এলাকাগুলির মধ্যে বাগডোগরা, মাটিগাড়া, দাগাপুর, শিলিগুড়ি শহররের ৫, ৪২-৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, শালাগাড়া, খোলাচাঁদফাঁপরিতে এডিস মাশার দাপট বেশি। অন্য দিকে জলপাইগুড়ি শহরের কিছু এলাকা, ডুয়ার্সে শামুকতলা, আলিপুর দুয়ার, হাসিমারা, গরুবাথান, নাগরাকাটা, লুকসান, মালবাজারে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তবে পাহাড়ের রম্ভি, বিজনবাড়ি, মিরিকেও এডিসের দাপটে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪-এ শিলিগুড়িতে ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল ওই মশা। সে বার অন্তত ১০০ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস মিলেছিল। ১০ বছর বাদে শিলিগুড়িতে তা ফিরে এসেছে আরও মারাত্মক ভাবে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি এবং লগোয়া এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়েছে। আর মারা গিয়েছে ৬ জন।
সম্প্রতি স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল শিলিগুড়িতে এসে সমীক্ষা চালায়। দলে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের এন্টামোলজিস্ট সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বদেশ দাস (ইন্সেক্ট কালেক্টর), দার্জিলিং জেলার ভেক্টর বর্ন ডিজিস বিষয়ে পরামর্শদাতা দীপেন্দ্র শর্মা, অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক, শিলিগুড়ি জোনাল ম্যালেরিয়া অফিসার কাজলকৃষ্ণ বণিক। তাঁরা শিলিগুড়ি পুরসভার ৫, এবং ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড মাটিগাড়ার গোয়ালজোত, শালুগাড়ার কাছে রাজগঞ্জ ব্লকের ডেমডেমা বস্তি এলাকা ঘুরে মশার লার্ভা এবং মশা সংগ্রহ করেন। তা পরীক্ষা করেই তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া ডেঙ্গি ছড়াতে যে মশা সক্রিয় তা এডিস এলবোপিটাস। জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল সমীক্ষা চালিয়ে অবশ্য এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশার সন্ধানও পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় অস্বাভাবিক ভাবে বংশ বাড়িয়েছে ওই মশা। নির্মীয়মাণ বাড়ির আনাচেকানাচে জমে থাকা জল, ফেলে দেওয়া টায়ার, পরিত্যক্ত ভাঙা গাড়ির খাঁজে জমা জল এডিস মশার আঁতুর ঘরে পরিণত হয়েছে। সংগৃহীত রক্ত নমুনা পাঠানো হয়েছে মাদুরাইতে সেন্টার ফর রিসার্চ ইন মেডিক্যাল এন্টামলজিতে।
অতীতে শিলিগুড়ি এবং লগোয়া এলাকায় এভাবে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যায়নি। শিলিগুড়ির কোন জায়গাগুলি এডিস মশার উৎস এবং কোন এলাকাগুলিতে বেশি রয়েছে সম্প্রতি তা খতিয়ে দেখেন সমীক্ষকরা। সেই মতো তারা ডেঙ্গি প্রতিরোধে বাহক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন নিদান দিয়েছেন।
কী কারণে উত্তরবঙ্গে এডিসের মশার বংশ বিস্তার ঘটল?
সমীক্ষক এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, সে এলাকায় নির্মাণ কাজ বেশি হচ্ছে শহর গড়ে উঠছে সেই এলাকাগুলিতে এডিসের উপদ্রব বেশি ছড়িয়েছে। বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবেও এডিসের বৃদ্ধি লাগাম ছাড়া। শিলিগুড়ি শহরে বাহক মশার জন্ম বিস্তারের পিছনে পুর উদাসীনতাকেও অনেকে দায়ী করেছেন। মে মাস থেকে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করে দেখা হয় কোথায় জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। ৯০ হাজার বাড়ি সমীক্ষা করে দেখা হয়। তবে ওই সমীক্ষায় জ্বরে আক্রান্তের কোনও হদিস মেলেনি বলে পুরসভার দাবি। স্বাস্থ্য দফতর তা মানতে চাইছে না। সে সব কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করেছেন, তাদের বলা হয়েছিল বাড়িতে ঢুকে টব বা কোনও পাত্রে কোথাও জল জমে থাকলে তা ফেলে পাত্র উল্টে দিতে। বাসিন্দাদের সচেতন করতে। ওই সমস্ত পাত্রে জমে থাকা পরিষ্কার জলে এডিস ডিম পাড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.