নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি |
লক্ষ্মীপুজোর বাজারে গিয়ে দাম শুনে চমকে উঠেছেন মাধবী দত্ত, নীলমণি রায়, শ্রাবন্তী রায়চৌধুরীরা। তিনদিন আগেই যেখানে বাঁধাকপি কিনেছেন ১০ টাকা দিয়ে, আজ তার দাম ৩০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। নবগ্রামের বাসিন্দা মাধবী দেবী বললেন, “লক্ষ্মীর পুজোর জন্যই বিধান মার্কেটে এসেছি। এখানেও দেখছি সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া। কী কিনব বুঝতে পারছি না। সব কিছুই কম পরিমাণে কিনতে হবে।” একই কথা জানান, হায়দারপাড়ার বাসিন্দা নীলমণি রায়। তিনি বলেন, “প্রতিবারই কেন পুজোর সময় জিনিসের দাম বেড়ে যায় এটা বুঝতে পারি না। আপেল থেকে বেদানা, সব কিছুরই এত দাম যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কেনা কষ্টকর। কিন্তু পুজো করতে হবে।”
বুধবার শিলিগুড়ির সমস্ত বাজার গুলিতেই ফল সবজির দাম ছিল আকাশছোঁয়া। বিধান মার্কেট, ফুলেশ্বরী বাজার, সুভাষপল্লী বাজার সহ অন্যান্য সমস্ত বাজারেই ছিল চড়া দাম। আজ, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দাম আরও বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিন ফুলকপি থেকে মুলো সব কিছুরই দাম পৌঁছে গিয়েছে ১০০ টাকার কাছাকাছি। পুজোর উপকরণ থেকে খিচুড়ি-সবজির উপকরণের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এদিন বিধান মার্কেট, ফুলেশ্বরী বাজারে ফুলকপির দাম ছিল ৬০-৭০ টাকা। বাধাকপির দাম ২৫-৩০ টাকা। এমনকি স্কোয়াশের দাম এদিন ছিল ১৫-১৬ টাকা। যা ৮-১০ টাকায় সহজেই পাওয়া যায়। এক আঁটি ধনে পাতা বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা দরে। মুলোর দাম প্রতি কেজি ৮০ টাকা। গাজর, বিন্স ৬০ টাকা কেজি দরে। দাম বেড়েছে আলু, লঙ্কারও।
শুধু সবজি বাজার নয়, ফলের দামও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। একটি নারকেলের দাম ৪০ টাকা। কোনভাবে দাম কমাতে নারাজ বিক্রেতারা। অথচ পুজোয় নারকেল চাই। তাই বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে বলে জানালেন মিলনপল্লীর এলাকার বাসিন্দা শ্রাবন্তী রায়। আপেলের দাম ৭০-৮০ টাকা, বাতাবিলেবু ১৫ টাকা, আখের দাম ৩০-৪০ টাকা। পানিফল ১০০ টাকা কেজি। শুধু ফল, সবজি নয়, পুজোর উপকরণের দামও বেড়েছে। পুজোর ঘটে দেওয়ার জন্য ছোট ডাব বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়, ধানের ছড়ার দাম ৫ টাকা। পদ্ম ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকায়।
এক বিক্রেতা শঙ্কর রায় বলেন, “পদ্মের চাহিদা রয়েছে, আরও দাম বেড়ে যাবে পুজোর দিন।” তবে যোগান কম থাকার কারণেই জিনিসের দাম বেড়েছে বলে জানান বিধান মার্কেট সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুবল সাহা। তিনি বলেন, “এই সময় চাহিদা একটু বেশি থাকে, সে তুলনায় যোগান কম থাকাতেই দাম বেড়ে যায়। তবে আশা করছি দাম কমে যাবে এক সপ্তাহের মধ্যে।”
অন্যদিকে শিলিগুড়ির পাশাপাশি জলপাইগুড়িতেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি সহ আপেল, নাসপাতির মত ফল। বুধবার জলপাইগুড়ির অন্যতম বৃহৎ পাইকারি এবং খুচরো বাজার দিনবাজার থেকে শুরু করে স্টেশন বাজার, বয়েলখানা বাজার বা পান্ডাপাড়া বাজারের সবজি এবং ফলের দাম একলাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। দু’দিন আগেও যেখানে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে আপেল বিক্রি হয়েছে, সেখানে বুধবারে আপেলের দর ছিল ১২০ টাকা। পেয়ারার দাম বেড়ে এদিন ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আঙুরের দাম বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৪০০ টাকা।
এদিন স্টেশন বাজারে ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। দিনবাজারের সবজি বিক্রেতা পরিমল দাস বলেন, “পুজোর মধ্যেও এত দাম ছিল না, লক্ষ্মীপুজো এগিয়ে আসতেই সবজির চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে, সেই সঙ্গে দামও বেড়েছে।” আজ বৃহস্পতিবার বা পরের দিন দাম আরও বাড়তে পারে। জলপাইগুড়ির বিভিন্ন বাজারে এদিন আলু ১৮ থেকে ২৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, বেগুন ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, শশা ৭০ টাকা, ন্যাসপাতি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ করে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় এদিন ক্রেতাদের অসন্তোষও দেখা গিয়েছে শহরের বিভিন্ন বাজারে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী প্রসূন দত্ত বলেন, “লক্ষ্মীপুজোর সময়ে প্রতিবারই সবজি বা ফলের দাম বাড়ে, কিন্তু তাই বলে এক লাফে দাম এতটা কেন বেড়ে গেল সেটা বুঝতে পারছি না।”
একলাফে অনেকটাই দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতাদের একাংশ। অভিযোগ, একশ্রেণির আড়তদার মুনাফার কারণে যোগান কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন পাইকারি বাজারের প্রশাসনের অভিযানেরও দাবি উঠেছে। জলপাইগুড়ির সদর মহকুমা শাসক সীমা হালদার বলেন, “বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। কোনও উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা দেখা হচ্ছে। তবে শহরের পাইকারি বাজারের আরতদার অনিল শর্মা বলেন, “শীতের শুরুর সময়টা এমনিতে সবজির যোগান কম থাকে। লক্ষ্মীপুজো সহ বিভিন্ন উৎসবের কারণে সবজি থেকে ফলের চাহিদা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়া এবং সেই তুলনায় যোগানে ঘাটতির কারণেই দাম বেড়েছে। লক্ষ্মীপুজোর পরে চাহিদা কমলে ফের দাম অনেকটাই কমে আসবে।” |