সেপ্টেম্বরের পুনরাবৃত্তি আর নভেম্বরে চাইছে না আলিমুদ্দিন! লোকসভা ভোটের আগে পুরভোটের ময়দান ছেড়ে কোথাও দল যাতে না সরে আসে, তার জন্য আগাম বার্তা দিতে চাইছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। পাঁচ পুরসভা এবং তার পরে লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে জেলাওয়াড়ি সংগঠনের হালহকিকত খতিয়ে দেখতে কালীপুজোর পরের দিনই বসছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেখানেই তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে মাটি কামড়ে লড়াইয়ের কথা বলতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
গত সেপ্টেম্বরেই ১২টি পুরসভার ভোটে এক প্রস্ত সাংগঠনিক বিপর্যয় হয়েছিল বামেদের। শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং ভোটের নামে প্রহসন চালানোর অভিযোগ তুলে বর্ধমান ও চাকদহ পুরসভার ভোট থেকে নির্বাচনের দিন সরে দাঁড়িয়েছিল সিপিএম। সেই বিতর্কের পুরোপুরি নিরসন এখনও হয়নি। বরং, তার জল গড়িয়েছে পলিটব্যুরো পর্যন্ত! এই রকম পরিস্থিতিতেই আগামী ২২ নভেম্বর পাঁচটি পুরসভার ভোট। তার মধ্যে একমাত্র হাওড়া ছাড়া কোথাও বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই বামেরা। তবু লোকসভা ভোটের আগে এই পুরভোটই যে হেতু সম্ভাব্য শেষ পরীক্ষা, তাই ময়দান ছেড়ে সরে যাওয়া আটকাতে তৎপর সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁরা চাইছেন, ‘সন্ত্রাসে’র আবহের বাইরেও যেখানে যতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, সেখানে জনমত যাচাই করে নেওয়া হোক। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “সেপ্টেম্বরেও কয়েকটি পুরসভার যে সব এলাকায় সুষ্ঠু ভোট হয়েছিল, সেখানে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভোট বেড়েছে। কয়েকটা জায়গায় আমরা ৫০%-এর বেশি ভোট পেয়েও জিতেছি। সুতরাং, সাহস করে আমাদের লড়াইটা চালাতে হবে!”
পাঁচটি পুরসভা এবং সেই সঙ্গে বেশ কিছু পুর-ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে যেখানে যেখানে সন্ত্রাসের অভিযোগ আসবে, দ্রুত তা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নজরে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু সংগঠনকে চাঙ্গা রাখাই এখন তাঁদের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ। লোকসভা ভোটের বৃহত্তর লক্ষ্যকে মাথায় রেখে আগামী ৩ নভেম্বরের রাজ্য কমিটি বৈঠকে সাংগঠনিক পরিস্থিতির রিপোর্ট দেবেন জেলা নেতৃত্ব। এবং সেই সূত্রেই বয়কট-বিতর্ক আলোচনায় আসার সমূহ সম্ভাবনা। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “আত্মসমর্পণ না প্রতিরোধ, বিতর্কটা এই মূল প্রশ্নে!” আসন্ন রাজ্য কমিটিতে সাংগঠনিক পরিস্থিতির প্রাথমিক হিসাব বুঝে নিয়েই কিছু কর্মসূচি নিতে চায় আলিমুদ্দিন। গত সেপ্টেম্বরে বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকের পরে কোন জেলায় কী ধরনের সাংগঠনিক
ঝাড়াই-বাছাই হয়েছে, তার খতিয়ানও নেওয়া হবে নভেম্বরে রাজ্য কমিটির বৈঠকে। তার পরে ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে লোকসভা ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু হবে রাজ্যে রাজ্যে।
নভেম্বরে কলকাতা পুরসভার ১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনের জন্য প্রার্থী হিসাবে যথাক্রমে সীতা জায়সবাল ও মৃণাল সাহার নাম ঘোষণা করে দিয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আশা, কলকাতার মানুষ তাঁদের পক্ষেই সমর্থন জানাবেন। বামেদের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লকের গত বারের প্রার্থীরই ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফের লড়ার সম্ভাবনা। সিপিএম ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ঠিক করলে কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট দু’টি নাম ঘোষণা করবে বলে সূত্রের বক্তব্য। |