রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে ডিভিসি-র বিরুদ্ধে হঠাৎ জল ছাড়ার অভিযোগে বুধবারও দুর্গাপুরের ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ডিটিপিএস) অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল। বিক্ষোভকারীদের তরফে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
এ দিন বিক্ষোভের সময়ে হাজির ছিলেন দুর্গাপুর (পশ্চিম) কেন্দ্রের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুর ৩ ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঝাড়খণ্ডের সেচ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ রাজ্যের সেচমন্ত্রী ডিভিসি-র আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলা সত্ত্বেও তাঁরা কথা রাখেনি। মঙ্গলবার হাজার দুয়েক মানুষ বিক্ষোভ দেখান। তার পরেও কথার খেলাপ করা হয়েছে। তারই প্রতিবাদে এ দিন পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ হয়েছে। তবে কাজে কোনও রকম বিঘ্ন ঘটানো হয়নি।” |
ডিভিসি-র অফিসের সামনে বিক্ষোভ। |
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার এক লক্ষ পাঁচ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ায় মঙ্গলবার দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হয়। সে দিন সকাল থেকে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়। প্লাবিত হয় বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের সীতারামপুর মানা-সহ বড় এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ’দুয়েক পরিবার। এমনকী গ্রামের একমাত্র পুজোর বিসর্জনও মঙ্গলবার দিতে পারেননি জলবন্দি দুর্গতেরা। বুধবার বিসর্জ হয়। কাঁকসার সিলামপুর এলাকাতেও প্লাবিত হয় প্রায় ৩০টি বাড়ি। এর পরেই আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ডিভিসি-ডিটিপিএস অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রভাতবাবু অভিযোগ করেন, আগাম না জানিয়ে ডিভিসি জল ছাড়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ফলে বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলি।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও হাজারখানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক দুপুর ১২টা নাগাদ জড়ো হন ডিভিসি-ডিটিপিএস অফিসের সামনে। একে একে পৌঁছন অপূর্ববাবু, প্রভাতবাবুরা। তাঁদের অভিযোগ, ডিভিসি-র এমন হঠকারিতায় উৎসব মাটি হয়ে গিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। তাঁদের ক্ষতিপূরণের দায় ডিভিসি-কেই নিতে হবে বলে দাবি তোলেন উপস্থিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভের পরে ডিভিসি-ডিটিপিএস আধিকারিকদের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। |
ডিটিপিএসের সামনে চলছে বিক্ষোভ। |
নবমীর দিন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিলি করতে এ দিন কাঁকসার বসুধায় যান রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক। সেখানে তিনিও অভিযোগ করেন, “প্রয়োজনের সময়ে চাষিরা জল পান না। অথচ এখন বন্যায় ফসলের বিপুল ক্ষতি হল। এর দায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষেরই।”
দুর্গাপুর ডিভিসি-ডিটিপিএসের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, এই কেন্দ্রে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ব্যারাজের জল ছাড়া বা না ছাড়ার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি। ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় এবং ঝাড়খণ্ডের দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন এক লক্ষ ৭ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। ফলে, মঙ্গলবার যে সব এলাকা প্লাবিত হয়েছিল সেখান থেকে জল নেমে গিয়েছে। |
বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
কুণালকে এ বার দিল্লিতে জেরা |
সারদা কাণ্ডের জেরে সল্টলেক কমিশনারেটে একাধিক বার জেরা করা হয়েছে তাঁকে। তার পরে এ বার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের জেরার মুখে পড়তে চলেছেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লিতে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের অফিসে তাঁকে সারদা কাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বুধবার বিকেলে এ জন্য দিল্লি গিয়েছেন কুণালবাবু। পুজোর আগেই একাধিক বার কুণালবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সল্টলেক পুলিশ। কুণালবাবুর দাবি, সারদা কাণ্ড আদতে একটি চক্রান্ত। এমনকী ন’জন ব্যক্তি যারা অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার কাছ থেকে বিপুল ভাবে উপকৃত হয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কেও অনেক কিছু তিনি জানেন। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন যদি সেই নাম না বলেন, প্রয়োজনে তিনিই তা প্রকাশ করবেন বলে কুণাল প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন। বুধবার দমদম বিমানবন্দরের বাইরে তিনি জানান, “সারদা কাণ্ড নিয়ে যে এজেন্সিই তদন্ত করবে, তাদের আমি সহযোগিতা করব।” সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে যে সব তথ্য পেয়েছে, তা যাচাই করতে তারাও কুণালবাবুকে জেরা করবে।
পুরনো খবর: কুণালকে ডেকে পাঠিয়ে ঘণ্টা দুয়েক জিজ্ঞাসাবাদ |