বৃষ্টির আঁচে চড়া বাজার, ফের নামছে টাস্ক ফোর্স
ব্যবধান মাত্র সাত দিনের। এর মধ্যেই খুচরো বাজারে পটলের দাম বেড়ে গিয়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকারও বেশি। পঞ্চমীতে যে বেগুনের দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি, দ্বাদশীতে তা কিনতে হল ৭০-৮০ টাকায়। টোম্যাটোর দামও কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে গিয়েছে। একই ভাবে বেড়েছে মাছের দাম। কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে রুই, কাতলার দাম।
সব্জি, মাছ, মাংসের দাম যাতে বাড়তে না পারে, সেই জন্যই টাস্ক ফোর্স তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাম নিয়ন্ত্রণে নিজেও বাজারে হাজির হয়েছেন একাধিক বার। কিন্তু পুজোর সময় বাজারগুলিতে টাস্ক ফোর্স যেতে পারেনি। বাজার করতে গিয়ে নিত্য হাত পুড়ছে সাধারণ মানুষের। এই পরিস্থিতিতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বাজারগুলিতে ফের পরিদর্শন করবে টাস্ক ফোর্স। যদিও তাতে কাজের কাজ কতটা হবে, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বিশেষ করে আগামী কাল, শুক্রবার কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। ভোগের জন্য ফুলকপি কেনা তো দূরের কথা, পুজোর ফল-ফুল কিনতে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় ক্রেতাদের। বুধবার সন্ধ্যায় মানিকতলা বাজার ঘুরে হতভম্ব হালসিবাগানের পুলক দত্ত। বললেন, “কিনব কী! সব্জি, ফলের দাম শুনেই চমকে উঠছি। এখনও কালীপুজো, ভাইফোঁটা বাকি!”
শিয়ালদহ কোলে মার্কেটের আড়তদাররা জানাচ্ছন, গত কয়েক দিন নদিয়ার মদনপুর, আড়ংঘাটা, উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা, বসিরহাট, হুগলির বলাগড়, পান্ডুয়া, মগরা-সহ কয়েকটি এলাকা থেকে পর্যাপ্ত সব্জি বাজারে আসেনি। তার জেরে দাম কিছুটা বেড়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, শহর ও তার লাগোয়া এলাকার বাজারগুলি থেকে প্রায় রোজই বিভিন্ন জেলার ফড়েদের কাছে ফোন করে সব্জির জোগান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা মতো সব্জি আসছে না।
এতটা কেন বাড়ল সব্জির দাম? বিভিন্ন জেলার সব্জি চাষিরা বলছেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জমি নরম হয়ে রয়েছে। ওই নরম জমি থেকে সব্জি তুলতে করতে পারেননি চাষিরা। তা ছাড়া, দুর্গাপুজোর সময় দিনমজুরও বড় একটা মেলে না। দিনমজুরের অভাবে বাজারে সব্জি পাঠাতেও সমস্যা হয়। সেই কারণেও জোগান কমেছে অনেকটা।
কিছু এলাকায় জল জমার কারণেও কমেছে সব্জির জোগান। রাজ্য কৃষি দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের জমিতে জল ঢুকে গিয়েছে। জল জমে গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। লতানে গাছের উপরে এই বৃষ্টি বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। শশা, উচ্ছে, করলা, পটল, লাউ, পুঁইশাকের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে বেগুন বা লঙ্কারও ক্ষতি হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বুধবার বলেন, “ডিভিসি জল ছাড়ায় মেদিনীপুর, হুগলি এবং হাওড়ার অনেক এলাকা ভেসে গিয়েছে। ওই সব এলাকায় সব্জি চাষের ক্ষতি হয়েছে। বাজারে সব্জিও আসছে না। ঝাড়খণ্ড থেকেও সব্জি আসা বন্ধ হয়েছে।”
সব্জির দাম কমবে কবে?
এ ব্যাপারে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “এখনই দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নতুন সব্জি উঠতে শুরু করবে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। দামও কমবে।” তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার থেকেই টাস্ক ফোর্স ফের বাজারগুলি পরিদর্শনে নামবে বলে তিনি জানান। কিন্তু চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যের অভাবই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হলে বাজার পরিদর্শন করে কী ফল হবে?
এ ব্যাপারে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “বৃষ্টি, জল জমা ইত্যাদি কারণে সব্জির দাম বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে এই সুযোগে ফড়েরা যাতে দাম আরও বাড়াতে না পারে তার জন্য টাস্ক ফোর্সকে বাজারে ঘুরতে বলেছি। হাওড়া এবং হুগলি থেকে প্রচুর সব্জি কলকাতার বাজারগুলিতে আসে। আমরা নজর রাখছি। এনফোর্সমেন্টকে বলছি দেখতে।”
শুধু সব্জিই নয়, বাজারে মিলছে না মাছও। কেন এই অবস্থা? হাওড়া ও পাতিপুকুরের মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুজোর সময় অন্ধ্রপ্রদেশের বড় রুই, কাতলা বাজারে এসেছে কম। পিলিন ও প্রবল বৃষ্টিতে ওড়িশায় অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট বিপর্যস্ত। আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। এ ছাড়াও উৎসবের মরসুমে ভেড়িতে কাজের লোক মিলছে না বলেও জানিয়েছেন মাছ উৎপাদকরা। এর ফলে স্থানীয় মাছও বাজারে আসছে অনেক কম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.