হারানো সন্তানের জন্য সেমাই রাঁধেন মা
দ-উল-আযহা বা ঈদুজ্জোহা মানেই তাঁর কাছে অপেক্ষার বর্ষপূর্তি! লালগোলার তারকাঁটা দেওয়া সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের তারানগরের বাসিন্দা রহমত ও আসমত শেখ পিঠোপিঠি দুই ভাই ঈদুজ্জোহার আগের দিন রাতে ‘আসছি’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তাও এক যুগের বেশি হয়ে গেল! এর পর থেকে মা ফুকরন বেওয়া প্রতি বছর বকরিদের দিন সকালে সেমাই-হালুয়া নিয়ে ‘মা’ ডাক শোনার অপেক্ষায় থাকেন, যদি হারিয়ে যাওয়া দুই যুবক ছেলে ফিরে আসে। তাই প্রতিবেশীরা ফি-বছর উৎসবের আবেগে গা ভাসালেও ছেলে-হারা মায়ের জীবনে কোনও উৎসব নেই।
কাঁটাতারের বেড়ার দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে বললেন সত্তরোর্ধ্ব মা, “সেমাই বানাতে হয়, তাই বানানো।”
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জেলা কোঅর্ডিনেটর জয়ন্ত চৌধুরীর কথায়, “সীমান্তবর্তী এই জেলায় নারীপাচার, শিশুপাচারের হার খুবই বেশি। কাজের সূত্রে অন্য জেলা বা রাজ্যে চলে যাওয়ার হারও যথেষ্ট। তাই হারিয়ে যাওয়া বা দূরে চলে যাওয়া সন্তানদের জন্য অপেক্ষা এই জেলার মায়েদের কাছে নতুন কিছু নয়। উৎসবের দিন অপেক্ষা আরও তীব্র হয়।”
তাই রঙিন কাগজের চেন দিয়ে গ্রাম সাজলেও ফুকরন বেওয়ার মতো সীমান্তের মায়েদের জীবনে উৎসবের আনন্দ কবেই নিভে গিয়েছে! সীমান্তের অনেক মায়ের কাছেই ঈদুজ্জোহা মানেই জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া ছেলেদের চোখের দেখা দেখতে না পাওয়ার আরও একটা বছর চলে যাওয়া!
আবার, অনেক মায়ের কাছে ফিরে আসেন কর্মসূত্রে দূর শহরে যাওয়া সন্তান।
উৎসবকে কেন্দ্র করে বুধবার বহরমপুর শহর আনন্দনগরীতে পরিণত হয়েছে। দুর্গাপুজো উৎসবের রঙে নতুন করে রং লাগিয়েছে ঈদুজ্জোহা। ঈদুজ্জোহা উপলক্ষে বহরমপুরের বিভিন্ন ঈদগাহ ও মসজিদে এদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই নামাজ পড়তে আসা মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিন বহরমপুর পুর-এলাকায় কয়েক হাজার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বিদ্যাসাগর শিশু উদ্যানে নামাজ পাঠ করেন, তেমনই লালবাগে সবচেয়ে বড় জামাত হয়েছে মীরজাফরের স্ত্রী মুন্নি বেগমের স্মৃতি বিজড়িত চক মসজিদে।
বেলা বাড়তেই লালবাগে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ চত্বরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জড়ো হন। মিউজিয়াম সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন টিকিট কাউন্টার থেকে কয়েক হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। হাজারদুয়ারি চত্বরে ছিল উৎসব মুখর মানুষের ভিড়। তবে উৎসব পালনে ব্যস্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এদিন বহরমপুরমুখী না হওয়ায় বাসস্ট্যান্ড চত্বর ছিল কার্যত ফাঁকা। রাস্তাঘাটেও খাঁ খাঁ শূন্যতা। অন্যান্য দিনের তুলনায় বাসও চলেছে কম। একই অবস্থা অটো-ট্রেকারের ক্ষেত্রেও। বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে বাসে যাত্রী নেই বললেই চলে।
এদিকে ঈদুজ্জোহাকে সামনে রেখে প্রতি বছর যেখানে জেলার বিভিন্ন বাজারে কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে, এবার সেখানে সেই আশা পূর্ণ হয়নি বলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। জেলা চেম্বার অফ কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “উৎসব উপলক্ষে মানুষের মধ্যে বাড়তি অর্থ খরচের প্রবণতা কাজ করে। কিন্তু সমাজের একটা বড় অংশের মানুষের হাতে অর্থ না থাকায় তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। বিভিন্ন পোশাক কেনার পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে মহিলারা সোনার বিভিন্ন গহনা বানান। এবছরও গহনা ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.