‘জীবনের সেরা ইনিংসটা খেললাম’
মাঠের পর মাঠের বাইরেও ব্যাট ঘোরালেন রোহিত
ত দিন তাঁকে নিয়ে বলা হত, অসম্ভব প্রতিভার অবিশ্বাস্য অপচয়! প্রাক্তন ক্রিকেটার সমৃদ্ধ বিশেষজ্ঞ মহল থেকে শুরু করে সাংবাদিককুলে বারবার তাঁর ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বলাবলি চলেছে এ ভাবে আর কত দিন টানা হবে? রবি শাস্ত্রী পর্যন্ত তাঁকে ছাড়েননি।
বুধবারের জয়পুরে যাবতীয় সমালোচনার উত্তর দিয়ে দিলেন রোহিত শর্মা। মাঠে যেমন, মাঠের বাইরেও তেমন। সেঞ্চুরি পর মুম্বই ব্যাটসম্যানের একটানা ব্যাট ঘুরিয়ে যাওয়া যদি উত্তরের প্রথম পর্ব হয়, তা হলে দ্বিতীয়টা ঘটিয়ে রাখলেন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে! প্রেস কনফারেন্স রুমে।
কেউ আন্দাজও করতে পারেননি, সওয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামে কালজয়ী ইনিংস খেলে ওঠার মিনিট দশেকের মধ্যে ও ভাবে সাংবাদিকদের দিকে তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দেবেন রোহিত। “আরে, আপনাদের তো হাসতে দেখা যাচ্ছে! মনে হচ্ছে, আমার দীর্ঘ দিন বড় রান না পাওয়া নিয়ে যত না টেনশন আমার ছিল, তার চেয়ে বেশি টেনশন ছিল আপনাদের,” ঢুকেই বলে দেন রোহিত। তবে ভারতীয় দলের নতুন ওপেনার মেনে নিয়েছেন যে, এত দিন কিছু জঘন্য শট খেলে আউট হয়েছেন। বলছিলেন, “এটা স্বীকার করছি যে, বেশ কয়েকটা ম্যাচে খুব খারাপ শট খেলে আউট হয়েছি। যেগুলো খেলা আমার উচিত হয়নি। উচিত ছিল, নিজের স্বাভাবিক শটগুলো খেলা। আমার এই ইনিংসটার খুব দরকার ছিল। বলতে পারেন, এটা আমার এখনও পর্যন্ত জীবনের সেরা ইনিংস।”
এবং ৩৫৯ তাড়া করার স্ট্র্যাটেজিটাও যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
অধিনায়কের আলিঙ্গনে। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
শোনা গেল, ঠিক করা হয়েছিল চল্লিশ রান করে করে এগোনো হবে। ভারতীয় বোলারদের উপর যে ভাবে ম্যাচের প্রথম পর্বে অস্ট্রেলীয় শিবির থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, ঠিক একই ওষুধে ঘায়েল করতে হবে জর্জ বেইলিদের। “কিন্তু তার পরেও জিতে ফেরাটা প্রচণ্ড কঠিন ছিল। সত্যিই আমরা কেউ ভাবতে পারিনি। দেখুন, শিখরের সঙ্গে যখন দেড়শো রানের পার্টনারশিপটা হয়ে গেল, ঠিক করে ফেলি যে দু’জনের মধ্যে কাউকে শেষ পর্যন্ত থেকে যেতে হবে,” বলে দিচ্ছেন রোহিত। কিন্তু ওয়ান ডে ফিল্ডিংয়ের নতুন নিয়মকানুনের জন্য অস্ট্রেলীয় বোলিংকে এ ভাবে ‘খুন’ করতে সুবিধে হল কি? শুনে রোহিতের উত্তর, “ফিল্ডিংয়ের নতুন নিয়মের জন্য বোলারদের অসুবিধে হচ্ছে জানি। কিন্তু তাতে আমার মোটেই খারাপ লাগছে না। ওদের কি আমাদের আউট করতে পারলে খারাপ লাগে? তা হলে আমারই বা লাগবে কেন?”
আর অস্ট্রেলিয়া?
সাড়ে তিনশো তুলেও যে হারতে হতে পারে, দুঃস্বপ্নেও যে ভাবা যায়নি সেটা অধিনায়ক জর্জ বেইলির মুখচোখ থেকেই পরিষ্কার। মুখে বলছিলেন বটে যে, “আমরাও খারাপ খেলিনি...মোহালিতে আমরাও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছি..” কিন্তু ঘটনা হচ্ছে সে সব কথাকে বিশেষ নির্ভরযোগ্য শোনাচ্ছে না। বিরাট কোহলি নিয়ে আতঙ্ক যে দিনদিন বাড়ছে সেটা অস্ট্রেলীয় শিবির থেকে ইঙ্গিত দিয়ে রাখা হল। বলে রাখা হল যে, উইকেট পড়লে ম্যাচে যে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখা হচ্ছিল, তার বারোটা একাই বাজিয়ে দিয়েছেন বিরাট। শুধু তাই নয়, বিরাট-রোহিতদের হাতে থেতলানি ভুলতে যে ওষুধটার কথা ভাবা হচ্ছে বলে দুঃখ করে জানিয়ে গেলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক, সেটাও যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
কয়েক বোতল বিয়ার!
জয়পুরের স্কোর
অস্ট্রেলিয়া

ফিঞ্চ রান আউট ৫০
হিউজেস ক ধোনি বো অশ্বিন ৮৩
ওয়াটসন ক ইশান্ত বো বিনয় ৫৯
বেইলি ন. আ. ৯২
ম্যাক্সওয়েল রান আউট ৫৩
ভোগস ক কুমার বো বিনয় ১১
হাডিন ন.আ. ১
অতিরিক্ত ১০
মোট ৫০ ওভারে ৩৫৯-৫।
পতন: ১-৭৪, ২-১৮২, ৩-২১২, ৪-৩০৮, ৫-৩৪৭।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ১০-০-৫৪-০, ইশান্ত ৯-১-৭০-০, বিনয় ৯-০-৭৩-২,
জাডেজা ১০-০-৭২-০, অশ্বিন ৮-০-৫০-১, যুবরাজ ৪-০-৩৫-০।

ভারত

রোহিত ন.আ. ১৪১
ধবন ক হাডিন বো ফকনার ৯৫
কোহলি ন.আ. ১০০
অতিরিক্ত ২৬
মোট ৪৩.৩ ওভারে ৩৬২-১।
পতন: ১-১৭৬
বোলিং: জনসন ৯-১-৬৮-০, ম্যাককে ৭-০-৬৪-০, ওয়াটসন ৫-০-৪৭-০,
ডোহার্টি ১০-০-৭০-০, ম্যাক্সওয়েল ৫.৩-০-৪৮-০, ফকনার ৭-০-৬০-১।


ওয়ান ডে’র টক-ঝাল-মিষ্টি
এক উইকেটে সর্বোচ্চ রান
এক দিনের ক্রিকেটে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে সর্বোচ্চ ৩৬২ রানের রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ছিল কিংস্টনে ভারতের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার ৩৪৮-১।
এক উইকেটে সেরা রান তাড়া
এক দিনের ক্রিকেটে এক উইকেট হারিয়ে সর্বোচ্চ রান তাড়া। আগের সর্বোচ্চ ২০০৬-এ ব্রিসবেনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ২৬৭-১।
কোহলি-কীর্তি
এক দিনের ক্রিকেটে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন বিরাট কোহলির।
কোহলি ৫২ বল, ১০০ নঃআঃ, বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০১৩।
ভারতের পরের তিন: বীরেন্দ্র সহবাগ ৬০ বল, ১২৫ নঃআঃ, বনাম নিউজিল্যান্ড, ২০০৯।
মহম্মদ আজহারউদ্দিন ৬২ বল, ১০৮ রান, বনাম নিউজিল্যান্ড, ১৯৯৮।
যুবরাজ সিংহ ৬৪ বল, ১৩৮ নঃআঃ, বনাম ইংল্যান্ড, ২০০৮।
(এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির তালিকায় কোহলির ৫২ বলে সেঞ্চুরি সাত নম্বরে। একে শাহিদ আফ্রিদির ৩৭ বলে ১০২)
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুততম
বিরাট কোহলির ৫২ বলে সেঞ্চুরি এক দিনের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সর্বকালের দ্রুততম। আগের রেকর্ড ২০০৭-এ হ্যামিল্টনে ক্রেগ ম্যাকমিলানের ৬৭ বলে সেঞ্চুরি।
মতামত
অমিতাভ বচ্চন: যন্ত্রণার মধ্যেও ক্রিকেট আছে...অস্ট্রেলিয়াকে দুর্দান্ত ভাবে হারাল ভারত। ৩৬০ দরকার ছিল আর আমরা নয় উইকেটে জিতলাম।
অন্যতম সেরা জয়। ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশন, পিচ-- সব বাদ দিলেও টার্গেটটা বিশাল ছিল। বিরতিতে আমি ওদের বলেছিলাম টার্গেটের দিকে না তাকিয়ে নিজের খেলাটায় ফোকাস করতে। শিখর খুব ভাল ব্যাট করেছে। কোহলি দুরন্ত। রোহিত বড় রান পেয়েছে। আদর্শ পিচ, দ্রুত গতির আউটফিল্ড হলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে অযথা ঝুঁকি না নিয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা ধরে রাখতে হবে। সেটা দারুণ সামলেছে ওরা। আর শিশিরে আমাদের সুবিধেই হল।
বিরাট কোহলি: রোহিতকে বারবার বলছিলাম, দিনটা তোর। সঙ্গে অবশ্য আমিও বলটাও হিট করে যাচ্ছিলাম। শর্ট পিচ বল নিয়েও চিন্তায় ছিলাম না। প্রথমে কয়েকটা বল পুল করার পরই ওরা হাফ ভলি দিতে শুরু করল। আমার মতে, রোহিতই এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক টি-টোয়েন্টি প্লেয়ার। আইপিএলেও আমরা সেটা দেখেছি। তাই উল্টো দিক থেকে ওর এই ব্যাটিং দেখাটাও বড় পাওনা।
আমাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা দারুণ হয়েছে। এক বার ধারাবাহিকতাটা পাওয়ার পর সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আমরা ইনিংসের শুরুতেই দুমদাম চালাতে চাইনি। অনেক পরে সেটা শুরু করেছি।
গৌতম গম্ভীর: দুর্দান্ত ব্যাটিং। বিরাট আর রোহিত দুরন্ত শো। শিখরের জন্য গর্বিত। আমি কি হাইলাইটস দেখছিলাম? এ ভাবেই খেলে যাও।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.