নৌকোয় দাঁতনে সুব্রত, ঘুরলেন ত্রাণ শিবিরেও
ল নেমেছে অনেকটাই। তবু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় বন্যা দুর্গতদের আশ্রয়স্থল ত্রাণশিবির। দাঁতনের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এ দিন বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে গিয়ে বন্যা দুর্গতদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন তিনি।
সুব্রতবাবু এ দিন সকাল এগারোটা নাগাদ প্রথমেই দাঁতনের পানশণ্ডপুরে তররুই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে পৌঁছন। সেখানে গিয়ে বন্যা দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর পর নৌকায় করে কোটপাদা, পলাশিয়া, পানশুলার বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে মন্ত্রী। বন্যা দুর্গতদের আলু, চাল-সহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রীও বিলি করেন তিনি। আঙ্গুয়ার একটি শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শম্ভু প্রামাণিক, জয়ন্তী বাশিদের কথায়, “ঘরের লোকেদের নিয়ে কোনও রকমে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছি। বন্যা পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান চাই আমরা।”
দাঁতনের শিবিরে দুর্গতদের হাতে ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে মায়ের সঙ্গেই শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন স্বামী পরিত্যক্তা সোমা প্রামাণিক বড়ু। তাঁর কথায়, “স্বামী ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে মায়ের কাছেই ছিলাম। সেই আশ্রয়টুকুও জলে চলে গেল। এখন খোলা আকাশেই ছোট মেয়েকে নিয়ে রয়েছি।” গত অগস্টের বন্যাতেই দাঁতন হাসপাতালের কাছে শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে বারোসতী গ্রামের ইটভাটায় আশ্রয় নিয়েছিলেন ইটভাটা শ্রমিক সস্ত্রীক কানাই হেমব্রম। সেখানেই শুক্রবার একটি শিশুকন্যার জন্ম দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মুঙ্গরী হেমব্রম। কানাইবাবুর কথায়, “বন্যায় বাস্তুহারা হয়েছি। শনিবার নৌকোয় করে সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে আঙ্গুয়ার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছি।” বন্যার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করে এ দিন সুব্রতবাবু বলেন, “বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে জল ছাড়া হয়েছে। আমাদের আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। এটি মানুষের তৈরি বন্যা। তবে ত্রাণের কোনও অভাব হবে না।” মন্ত্রী জানান, “ত্রাণে শুধু চাল, চিঁড়ে, আলু ছাড়াও ওষুধপত্র, বাচ্চাদের জামাকাপড় সবই দেওয়া হবে। আঙ্গুয়া থেকে মন্ত্রী সাস্তানগরে অন্য একটি ত্রাণ শিবিরে যান। তারপর কোলাঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের সময় এলাকার রাস্তার খারপ অবস্থা নিয়েও সরব হন মন্ত্রী। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে দাঁতনের অধিকাংশ রাস্তাই বেহাল। বন্যায় রাস্তাগুলির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। রাস্তার এই হালের জন্য বিগত বাম সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “রাস্তা আমরা সংস্কার করব। আগামীদিনে সব রাস্তাই পাকা হবে। রাজ্য সরকার দুর্গতদের পাশে আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন এলাকার ৩০০ জনের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। দাঁতন ব্লকের ৩১টি ত্রাণ শিবিরে পাঁচ হাজার মানুষ রয়েছেন। এছাড়াও ব্লকে চারটি স্বাস্থ্য শিবিরও খোলা হয়েছে। দাঁতনের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক গৌতম সিংহ বলেন, “বন্যার সময় জলবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তাই আগাম সতকর্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিবির চালু করা হয়েছে।”
তবে মুখ্যমন্ত্রী নিজে একবার দাঁতনে আসবেন এমনটাই আশা ছিল এলাকাবাসীর। সেই আশাতেই জাতীয় সড়কের ধারে ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকে। গাজিপুর পাটনার শ্রীনিবাস ঘড়াই গাজিপুর হাইস্কুলের ক্যাম্প থেকে এ দিন এসেছিলেন ঘোলাইয়ে। তিনি বলেন, “এখানে মুখ্যমন্ত্রী আসবেন শুনেছি। আমাদের অসুবিধার কথা বলার জন্য এখানে ছুটে এসেছি।” তবে ঝাড়গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি দেখার পর এ দিন মুখ্যমন্ত্রী আর দাঁতনে আসতে পারেননি। দাঁতন থেকেই তিনি কোলাঘাটের উদ্দেশে রওনা দেন।
কোলাঘাটে প্রশাসনিক বৈঠক থাকায় কেশিয়াড়িতেও এ দিন যেতে পারেননি সুব্রতবাবু। তবে সকাল থেকেই পঞ্চায়েতমন্ত্রীর আসার খবরে ত্রাণ বিলির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন কেশিয়াড়ি ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। পরে এ দিন বিকেলে নছিপুরের ভসরাঘাটে ১০০ জন বন্যা দুর্গতের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। কেশিয়াড়ির বিডিও অসীমকুমার নিয়োগী বলেন, “কোলাঘাটে বৈঠকের কারণে সুব্রতবাবু আসতে পারেননি। তাই আমরাই ত্রাণ বিলি করেছি।” আজ, বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কেশিয়াড়ি যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মহকুমাশাসক আর বিমলা জানান, জল নেমে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। অনেকে ঘরে ফিরতে চাইলেও বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করতে ত্রাণ শিবির চালিয়ে যাওয়া হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.