পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে খাতায়-কলমে। কিন্তু সেই নির্দেশিকা হেলায় উড়িয়ে দুই শহরের পুকুরেই চলছে প্রতিমা নিরঞ্জন। বিসর্জনের পরে এই সব পুকুরের জলে জমে থাকা আবর্জনা এখনও সাফাই করা হয়নি। ভিজে খড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে, দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শহরের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ, বিসর্জন হলে পুকুরের জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি, যাঁরা পুকুরের জল নানা কাজে ব্যবহার করেন, তাঁদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়। কিন্তু কেউই সেই নিষেধাজ্ঞা না মানায় জল দূষণ বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, নির্দেশিকা থাকা সত্বেও কেন পুজো উদ্যোক্তাগুলি তা মানছে না? একাংশ পুজো উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, টানা বৃষ্টি এবং জলাধারের ছাড়া জলে নদীতে এখন হু হু করে জল বইছে। তাই পুজো কমিটির অনেকেই নদীতে বিসর্জন দিতে চাইছেন না। অগত্যা বিসর্জনের জন্য ভরসা সেই পুকুরই। নিরুপায় দুই শহরের পুর-কর্তৃপক্ষও। কর্তৃপক্ষের অবশ্য আশ্বাস, জমে থাকা আবর্জনা সাফাই করা হবে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের কথায়, “বৃহস্পতিবার বিসর্জন-পর্ব মিটবে। শুক্রবার থেকেই সাফাই শুরু হবে। এ জন্য সাফাই কর্মীদের নিয়ে কয়েকটি দল তৈরি করা হবে।” মেদিনীপুর পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্তের কথায়, “শহরের কয়েকটি পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। পুকুরগুলোয় জমে থাকা আবর্জনা পরিস্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” |
মতিঝিলে প্রতিমার কাঠামো। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
পুজোর আগে শহরের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন পুর-কর্তৃপক্ষ। পুজো কমিটিগুলোর কাছে অনুরোধ জানানো হয়, পুকুরে নয়, কংসাবতী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে। মেদিনীপুর পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, “মূলত জল দূষণ ঠেকাতেই পুজো কমিটিগুলোর কাছে এই অনুরোধ জানানো হয়। কারণ, প্রতিমা বিসর্জন হলে পুকুরের জল দূষিত হবেই। এ নিয়ে পুজো কমিটিগুলোকে সচেতন হতে হবে।” কিন্তু, ফি বছরই একাংশ পুজো কমিটি এই নিষেধাজ্ঞা হেলায় উড়িয়ে আশপাশের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন করে। এ বারও সেই একই ছবি চোখে পড়ছে। শহরের দ্বারিবাঁধ এলাকায় মতিঝিল রয়েছে। ওই পুকুরে একাধিক প্রতিমার বিসর্জন হওয়ায় বুধবার এই পুকুরের জলে আবর্জনা জমে ছিল। ফলে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, এলাকার অনেকেই এই পুকুরের জল ব্যবহার করেন। কিন্তু, এখন যে পরিস্থিতি, তাতে পুকুরের জল ব্যবহার করাই যাবে না। কারণ, জলে আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পুরসভার ওই আধিকারিক মানছেন, “শুধু ওই এলাকায় নয়। এই সমস্যা শহর জুড়েই রয়েছে।”
বিসর্জনের জন্য এ বার দু’দিন নির্দিষ্ট করেছে পুলিশ-প্রশাসন। একটি দিন ছিল সোমবার অর্থাৎ, দশমীর দিন। অন্য দিনটি আজ, বৃহস্পতিবার। মেদিনীপুর-খড়্গপুর, এই দুই শহরে প্রায় ৩০০টি পুজো হয়। এর মধ্যে যেমন সর্বজনীন পুজো রয়েছে, তেমনি পারিবারিক পুজোও রয়েছে। সোমবার দুই শহর মিলিয়ে প্রায় ৫০টি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। বাকি প্রতিমা বৃহস্পতিবারই বিসর্জন হওয়ার কথা। অষ্টমী থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে, সোমবারও বহু দর্শনার্থী পুজো দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় করেন। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারও যদি কোনও কমিটি প্রতিমা বিসর্জন না-করে তাহলে পুলিশ-প্রশাসন সেই প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে কোনও দায়িত্ব নেবে না। সেই ক্ষেত্রে বিসর্জন ঘিরে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে দায়ী থাকবে ওই পুজো কমিটিই।
মেদিনীপুর শহরের এক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী নদী। নদীর একদিকে মেদিনীপুর শহর। অন্য দিকে খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকা। কিছু দূরে রেলশহর খড়্গপুর। দুই শহরের অধিকাংশ প্রতিমা কাঁসাই নদীতেই বিসর্জন হয়। এ জন্য পুর- কর্তৃপক্ষ সব রকম ব্যবস্থাও করেন। যেমন, মেদিনীপুর শহরের গাঁধীঘাটে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। গত বছর নদীতে তেমন জল ছিল না। ঘাট থেকে জলস্রোতের অনেকটা ফারাক থাকায় প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। ওই বছর পুজো উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ক্রেন রাখা হয়। ওই ক্রেন দিয়েই প্রতিমার কাঠামো তোলা হয়েছে। কংসাবতী নদী বৃষ্টির জলে পুষ্ট। ফলে, বর্ষার পর জলস্তর এমনিতেই কমতে থাকে। এ বার পরিস্থিতি পুরো অন্য। রবিবার ৪৩.৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার ৪৬.৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে জলাধার থেকে প্রচুর পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে নদীতে এখন হু হু করে জল বইছে। তা সত্বেও কেন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে? একাংশ পুজো উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, শহরের এক পাশে নদী রয়েছে। তাই শোভাযাত্রা সহযোগে এতটা পথ গিয়ে অনেকেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে চান না। শোভাযাত্রা এলাকা ঘোরার পর উদ্যোক্তারা কাছেপিঠের কোনও পুকুরেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে চান। এ ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুকুরে বিসর্জন বন্ধ করা কঠিন। পুর-কর্তৃপক্ষের বরং উচিত, তৎপরতার সঙ্গে পুকুরগুলো পরিস্কার করা। দ্রুত আবর্জনা সাফাই হলে স্থানীয়রা আর সমস্যায় পড়বেন না। |