|
|
|
|
নিয়মমতে চলে আডবাণীর কথায় সায় প্রণবের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বরাবরই রুল-বুক মেনে চলেন তিনি। অর্ডিন্যান্স বিতর্কের সময়ও সংবিধানের বাইরে পা রাখেননি। এ বার বিরোধী দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন ফোন করলেন, তখনও তার অন্যথা করলেন না রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
ঘটনার সূত্রপাত রাজস্থানে রাজ্যপালদের একটি বৈঠক ঘিরে। রাজ্যে ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। অথচ জয়পুরের রাজভবনে আদিবাসী উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন রাজস্থানের রাজ্যপাল মার্গারেট আলভা। গুজরাত-ছত্তীসগঢ়-হিমাচল-ঝাড়খণ্ড-মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপালরাও সেখানে আমন্ত্রিত। বৈঠক করে তাঁরা রিপোর্ট দেবেন রাষ্ট্রপতিকে। এ ধরনের বৈঠকে রাজ্যের আমলারাও যেতে বাধ্য। বিরোধীদের বক্তব্য, নির্বাচনবিধি জারি হয়ে যাওয়ার পরে এমন পদক্ষেপ প্রভাব ফেলতে পারে নির্বাচনে।
চুপ করে বসে থাকলেন না মহারানি বসুন্ধরা রাজে। এ বারের ভোটে অশোক গহলৌতকে উৎখাত করে ফের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসতে চান তিনি। রাজ্যপালের এই বৈঠক বাতিল করাতে সটান দিল্লিতে ফোন করলেন দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। বসুন্ধরার ফোন পেয়ে প্রথমে আডবাণী বিষয়টি জানালেন দলের সাংসদ রঙ্গসায়ি রামকৃষ্ণকে। কারণ, বিজেপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তিনিই। রামকৃষ্ণ বিষয়টি জানালেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, রাজ্যপালের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির এক্তিয়ারে পড়ে। নির্বাচন কমিশনের এখানে কিছু করার নেই।
রাষ্ট্রপতিকে কী ভাবে জানাবেন? সেই সময় বিদেশ সফরে রয়েছেন প্রণব। যে দিন ফিরছেন, তার পর দিনই জয়পুরে বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। ও দিকে বসুন্ধরা নাছোড়। ফলে রাষ্ট্রপতি দেশে ফিরতেই ফোন করলেন আডবাণী। জানালেন গোটা বিষয়টি। সঙ্গত কারণেই বিদেশে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না প্রণব। এখন সচিবালয়ের থেকে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিলেন তিনি। কিন্তু তত ক্ষণে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য অন্য রাজ্যের রাজ্যপালরা পৌঁছে গিয়েছেন জয়পুরে।
অতএব? রাষ্ট্রপতি ফোন করলেন আডবাণীকে। বিকল্প প্রস্তাব দিলেন, বৈঠকটি দিল্লিতেই করা হোক। রাষ্ট্রপতি ভবনেই তার আয়োজন করা যেতে পারে। ফি-বছর রাষ্ট্রপতি ভবনে রাজ্যপালদের বৈঠক এমনিতেই হয়ে থাকে। কিন্তু আডবাণী প্রশ্ন তুললেন, রাজস্থানে যেমন নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে, দিল্লিতেও তো একই সঙ্গে ভোট! তা হলে? শেষ পর্যন্ত রাজ্যপালদের বৈঠকটি বাতিলই করার পরামর্শ দিলেন রাষ্ট্রপতি।
অর্ডিন্যান্স বিতর্কের পর যখন রাহুল গাঁধী গোটা কৃতিত্ব নিতে ময়দানে নেমেছিলেন, সেই সময় অর্ডিন্যান্স আটকানোর কৃতিত্ব যে আসলে ‘প্রণবদা’র সেটি ফলাও করে ব্লগে লিখেছিলেন আডবাণী। বিজেপি মুখপাত্ররাও রাষ্ট্রপতির জয়গান করেছিলেন। তার পর জয়পুরের বৈঠক বাতিলের ক্ষেত্রেও যে ভাবে রাষ্ট্রপতি বিরোধীদের আর্জি মেনে নিলেন, তা নিয়েও এখন চর্চা চলছে বিজেপি শিবিরে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “রুল-বুকের প্রশ্ন যখন ওঠে, সেই সময় কোনও কিছুরই পরোয়া করেন না প্রণববাবু। বিরোধী দলের আর্জি তিনি না-ও মানতে পারতেন। কিন্তু কথাটা যুক্তিগ্রাহ্য বলেই সেটি মেনে নিলেন।” |
|
|
|
|
|