গোড়ার দিকে অনেকেই মনে করেছিলেন, এই রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি বেশি দিন চলবে না। আপোসে আসবেই দুই দল। কিন্তু তার বদলে গত দু’সপ্তাহ নাটকীয় স্নায়ুর লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে সারা দুনিয়া। বহু বার মনে হয়েছে, এই বুঝি সমস্যা মিটল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঠিক ভেস্তে গিয়েছে সেই সম্ভাবনা। কারণ, নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলও পিছু হঠতে রাজি হয়নি কোনও পক্ষ। তাই এ ভাবে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর সময়সীমা (১৭ অক্টোবর) যত এগিয়ে এসেছে, তত গাঢ় হয়েছে আতঙ্ক। ফের এক বার মন্দার অশনি সংকেত দেখতে শুরু করেছে মানুষ। শেষে সে আশঙ্কায় দাঁড়ি টেনে বুধবার দু’দলের প্রতিনিধি জানান, শেষ পর্যন্ত রফাসূত্র খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।
এর পর এ দিনই তড়িঘড়ি এই নয়া বিল পাশ করাতে হবে মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সেনেটে। তার পর তাতে সই করবেন ওবামা। এবং এই সব কিছুই হবে ১৭ তারিখের সময় পেরোনোর আগে। তবে আগামী বছরের গোড়ায় ফের বাজেট নিয়ে কথা হবে। ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর জন্যও ফেব্রুয়ারিতে ফের পরীক্ষায় বসতে হবে ওবামাকে।
উল্লেখ্য, মার্কিন সরকারের আর্থিক বছর শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। কিন্তু তার আগে মূলত ওবামা-কেয়ার (কম খরচে প্রায় সবার জন্য চিকিৎসা বিমা) নিয়ে দুই দলের মতানৈক্যে বাজেট পাশ না-হওয়ায় দু’সপ্তাহ আমেরিকায় বন্ধ অনেক প্রশাসনিক কাজকর্ম। গত ১৭ বছরে এই প্রথম। বিল ক্লিন্টনের পর ফের বারাক ওবামার জমানায়। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দেখতে যাওয়ার ফেরি বন্ধ। লিঙ্কনের মূর্তি দেখানোর সরকারি গাইড গরহাজির। নাসায় ছুটিতে। ১৪০টি ন্যাশনাল পার্কের মতো বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানে তালা। দরজা বন্ধ বিভিন্ন সরকারি দফতরে। অবেতন ছুটি ১০ লক্ষ কর্মীর। |
কী খবর আসে! সেনেটের সামনে সংবাদমাধ্যমের ভিড়। |
তার উপর ১৭ অক্টোবরের মধ্যে পাশ করতেই হত ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব। বর্তমানে ১৬.৭ লক্ষ কোটি ডলার পর্যন্ত ধার করতে পারে আমেরিকা। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে এ মাসে তা ফের না-বাড়ালে, অনেক খরচই চালাতে পারত না ওবামার দেশ। মেটাতে পারত না পুরনো ধারও। আতঙ্ক তৈরি হত পৃথিবী জুড়ে।
এই কারণেই এই ক’দিন একরাশ উদ্বেগ নিয়ে হোয়াইট হাউস আর মার্কিন কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে থেকেছে আমেরিকা। ক্ষোভে ফুঁসেছেন সেখানকার মানুষ। সবে মন্দা থেকে মাথা তুলতে শুরু করা মার্কিন অর্থনীতিকে নিয়ে এমন ‘ছিনিমিনি খেলা’য় তাঁরা বিরক্ত। আর এই রাগ যে আগামী দিনে ভোট-বাক্সে পড়তে পারে, তা বিলক্ষণ আঁচ করতে পারছিলেন রিপাবলিকানরা। কারণ, বেশিরভাগ মার্কিনই মনে করছিলেন, দেশের অর্থনীতিকে কার্যত পণবন্দি করছেন তাঁরা। যে কারণে এ দিন দু’পক্ষই সমঝোতা করেছে ঠিকই। কিন্তু সম্ভবত একটু বেশি পিছু হাঁটতে হয়েছে রিপাবলিকানদেরই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেমোক্র্যাটরা সম্ভবত ওবামা-কেয়ার পাচ্ছেন। বদলে দীর্ঘ মেয়াদে বিপুল খরচ ছাঁটাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিতে হচ্ছে তাদের।
|