দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে পড়ে থাকা জমিতে শিল্পতালুক গড়ার পরিকল্পনা করল জেলা পরিষদ। কালনা ২ ব্লকের পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের বন্দেবাজ এলাকায় এই পার্ক হবে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে খবর। এ ছাড়াও ভাতারের ওরগ্রামে সমন্বয়ী প্রকল্প পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ চলছে বলেও জানানো হয়েছে।
কালনা শহর ঘেঁষা বারাসত মৌজার অন্তর্গত এই বন্দেবাজ এলাকা। স্থানীয় সূত্রে খবর, ১৯৯০ সালে পাকা রাস্তার লাগোয়া প্রায় ২৫ বিঘা জমি কিনে নেয় জেলা পরিষদ। কিন্তু তার পরে জমিটি অব্যবহৃত পড়েছিল। অনেকে সেখানে জায়গা জবরদখল করে বসবাস শুরু করেন। জমি বিক্রি করেও কেউ কেউ বাস করছিলেন। পাঁচিল না দেওয়ায় ফাঁকা এই জমিতে মাটি মাফিয়াদের দাপাদাপিও চলে। পড়ে থাকা জমির অনেকটা অংশ ঢেকে গিয়েছে ঝোপঝাড়ে।
জেলা পরিষদের নতুন বোর্ড গঠন হওয়ার পরেই এই জমিটি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়। সম্প্রতি বন্দেবাজ এলাকায় জমিটি দেখতে যান জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু ও অতিরিক্ত জেলাশাসক হৃষিকেশ মোদী। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার, বিদ্যুৎ এবং পূর্ত বিভাগের বেশ কিছু আধিকারিক। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ওই জমিতে শিল্পতালুক গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে দূষণমুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হবে। পাঁচিল দিয়ে জমি ঘিরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে। পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলে প্রকল্পের জমি আবেদনের ভিত্তিতে শিল্পোদ্যোগীদের মধ্যে বিলি করা হবে। |
এই জমিতেই হবে শিল্পতালুক। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
জমি পর্যবেক্ষণের সময়ে জেলা সভাধিপতি এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কোথায় রাস্তা হবে, বিদ্যুতের ব্যবস্থা শীঘ্র করার জন্য কী প্রয়োজন, জমির দখলদারদের কী ভাবে পুনর্বাসন দেওয়া যায়, সে নিয়ে আলোচনা করেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক কালনা ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে লক্ষ্মীপুজোর পরে জমিটির ব্যাপারে একটি ২৫ অক্টোবরের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। জেলা সভাধিপতি বলেন, “জেলা পরিষদের জমি পড়ে নষ্ট হচ্ছিল। তা জানার পরেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ার উদ্যোগ হয়। তবে কিছু পরিবার জমির একটি প্রান্তে দীর্ঘ দিন বাস করছেন। তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।” তাঁর দাবি, “প্রকল্পটি হলে বেশ কিছু শিল্প হবে এলাকায়। ইতিমধ্যে কয়েক জন এ ব্যাপারে কয়েক জন আগ্রহ দেখিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বহু তরুণ-তরুণী চাকরি পাবেন।”
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ভাতার ব্লকে প্রায় ২০০ একর জমির উপরে ওরগ্রাম সমন্বয়ী প্রকল্প রয়েছে। তার মধ্যে মৎস্যচাষ, বেকারি উন্নত বীজ তৈরি-সহ নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে মন্দা চলছে। অনেকে ব্যবসা বন্ধও করে দিয়েছেন। জেলা পরিষদের জমিতে ধুঁকতে থাকা এই প্রকল্পটিও ঘুরে দেখেন জেলা সভাধিপতি দেবুবাবু। তিনি জানান, প্রকল্পটির অবস্থা শোচনীয়। তাই সেটির পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বেকারি-সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান যাতে শীঘ্র চালু করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ হয়েছে। দেবুবাবু বলেন, “প্রকল্পটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখানকার ৩৭ জন কর্মচারীর চার মাসের বেতন বকেয়া হয়ে পড়েছিল। তা জানার পরে পুজোর আগে জেলা পরিষদের তহবিল থেকে তা মেটানো হয়।” |