পুর নির্বাচনে ৩৫-০। বাইরের শত্রু নেই। কিন্তু বর্ধমান শহরের পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান নির্বাচনের ঠিক আগে ঘরের কোন্দল নিয়েই ব্যতিব্যস্ত তৃণমূল। একই ভাবে ১১-৫ আসনে জেতা গুসকরা পুরসভাতেও নেতা বাছা নিয়ে দোলাচল চলছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২২ কিংবা ২৩ অক্টোবর এই দুই পুরসভার পদাধিকারীদের শপথগ্রহণ হতে পারে। তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “দলের সব গোষ্ঠীই নিজেদের পছন্দের লোককে পুরপ্রধান বা উপ-পুরপ্রধান করতে চেয়ে কলকাতায় দলের সদর দফতরে আসছে। দলনেত্রী এখনও সময় দিতে না পারায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
জেলা ও রাজ্য তৃণমূল সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত বর্ধমান পুরসভার প্রধান পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী সমীর রায় এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতা পরেশ সরকার। টানা আট বার জিতে আসা সমীরবাবু তৃণমূলের সবচেয়ে পুরনো কাউন্সিলর। ২০০৩ সালের পুরভোটে যখন সিপিএম ৩৪ আসনে জেতে, এক মাত্র তিনিই তৃণমূলের দেউটি জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল কাউন্সিলরদের একটা বড় অংশের প্রথম পছন্দ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের ঘনিষ্ঠ পুরনো নেতা পরেশবাবু। সে কথা তাঁরা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে লিখিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছেন। |
দুই নেতাই অবশ্য এখন প্রকাশ্য বলছেন, তাঁরা পুরপ্রধান হতে আগ্রহী নন। পরেশবাবু তৃণমূল কর্মীদের বলছেন, “সমীরবাবুই পুরসভার কাজে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। ওঁর থেকে ভাল কেউ পুরসভা চালাতে পারবে না।” দলের একাংশের প্রতি ক্ষুব্ধ সমীরবাবু আবার বলেন, “এমন কিছু লোক পুরভোটে জিতেছেন, যাঁরা জিতেই নানা স্বপ্ন দেখছেন। চেষ্টা করছেন, নিজের কোলে কতটা ঝোল টানা যায়। পুরপ্রধানের চেয়ারে বসে এঁদের নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল।”
কলকাতার তৃণমূল ভবন সূত্রে শোনা গিয়েছে আরও দু’টি নাম। এঁরা হলেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতা চিকিৎসক স্বরূপ দত্ত ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতা জয়ন্ত দত্ত। স্বরূপবাবু গত বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পেতে পেতেও শেষ মুহূর্তে পিছলে যান। এ বারও খুব বেশি ভোটে জেতেননি। মন্ত্রী রবিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জয়ন্তবাবুও মোটামুটি আনকোরা। সমীর-পরেশ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যদি না মেটে, দুই দত্তের মধ্যে এক জনের কপালে শিকে ছিঁড়তে পারে।
উপ-পুরপ্রধান পদে আবার শোনা যাচ্ছে তিনটি নাম। এঁরা হলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত শিখা দত্ত, ২৩ নম্বর থেকে জেতা খোকন দাস এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী সেলিম খান। প্রথম জন রবিরঞ্জন-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তৃতীয় জন পরিচিত আইএনটিটিইউসি নেতা। বর্ধমান শহর যুব তৃণমূল সভাপতি খোকন দাস গত বারই ‘কাজের কাউন্সিলর’ হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। কিন্তু এ বার ভোটের ঠিক আগেই ‘দিদির আশীর্বাদ’ চাইতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের পথে ঢুকে পড়ে তাঁর ঝুঁকি ও বিরক্তির কারণ হন। |
রাজ্য তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “যদি কাউন্সিলরদের ভোটে পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান নির্বাচনের সুযোগ থাকত, তা হলে পরেশ সরকার এবং খোকন দাসেরই পাল্লা ভারী হত। তবে দলনেত্রী এখন বন্যা পরিস্থিতি দেখতে মেদিনীপুরে। তাই ওই দুই পদ সর্ম্পকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
গুসকরায় আবার পুরপ্রধান পদের জন্য প্রাক্তন প্রধান চঞ্চল গড়াই ও উপ-পুরপ্রধান মল্লিকা চোঙদারের লড়াই চলছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, আর এক নেতা নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় দলের ভিতরে-বাইরে লড়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জিতলেও তাঁকে হয়তো শুধু কাউন্সিলর হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। যদিও দলের বীরভূম জেলা সভাপতি তথা গুসকরার পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের প্রস্তাব, চঞ্চল-মল্লিকা বিরোধ না মিটলে অপেক্ষাকৃত তরুণ কাউকে প্রধান করা হোক।
তৃণমূলের অন্যতম জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাস বলেন, “শুধু পুরপ্রধান বা উপ-পুরপ্রধান নয়। আমরা চাইছি, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সমস্ত সদস্যের নামও এক সঙ্গে তৃণমূল ভবনে চূড়ান্ত হোক। তাতে অনেক সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যাবে।”
বন্যা-ফেরত নেত্রী কাকে ডোবান আর কাকে ভাসান, আপাতত তারই রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষায় জেলা তৃণমূল। |