সরকারি-বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে রোগীর দেহে গুরুতর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আকছার ওঠে। এ বার মেয়াদ পেরোনো দু’বছরের পুরনো রক্ত এক ক্যানসার রোগীকে দেওয়ার অভিযোগ উঠল রাজ্যের সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। শেষ মুহূর্তে রোগীর বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানতে পারায় রোগীকে অবশ্য ওই রক্ত আর দেওয়া হয়নি।
ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মেয়াদ পেরোনো রক্ত দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, রক্ত পুরনো নয়। তারিখটা ভুল লেখা হয়েছে। বিষয়টিকে ‘স্লিপ অফ পেন’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা। যদিও এমন ভুলের পরিণতি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, এতে সুস্থ ও নিরাপদ রক্তের ধারণাটাই ধাক্কা খায়।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে বিষয়টি খুবই গুরুতর। তাই যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই তা খতিয়ে দেখা হবে। |
উত্তর কলকাতার এক নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা এক ক্যানসার রোগীর জন্য তাঁর পরিবারের লোকেরা মঙ্গলবার ইনস্টিটিউট অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিক্যাল অ্যান্ড ইমিউনো হেমাটোলজি (সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক) থেকে রক্ত নিতে এসেছিলেন। তাঁদের দরকার ছিল এ পজিটিভ গ্রুপের এক ইউনিট রক্ত। তাঁদের যে রক্তের ব্যাগটি দেওয়া হয়, সেটি ২০১১ সালে একটি ক্যাম্প থেকে সংগৃহীত। রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার ঠিক আগে বিষয়টি নজরে আসে পরিবারের লোকেদের। তখনই এ নিয়ে হইচই শুরু হয়। মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওই রক্ত সঙ্কটজনক অবস্থার ওই রোগীর শরীরে প্রবেশ করলে তাঁর মৃত্যুও হতে পারত বলে অভিমত চিকিৎসকদের।
রক্তের ব্যাগটি নিয়ে পরিবারের লোকেরা ফের সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলে গোড়ায় অভিযোগ মানতে চাওয়া হয়নি। বরং কেন তাঁরা রক্ত নিয়ে চলে যাওয়ার আগে তারিখ দেখে নেননি, সেই প্রশ্নও করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা সৌরেন্দ্রনাথ গুছাইত বলেন, “মেয়াদ ফুরোনো রক্ত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কোনও ভাবে তারিখটা ভুল লেখা হয়েছে। সেটা শুধরে নেওয়া হবে।”
কী ভাবে এমন ভুল হল এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে তাঁরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তা জানতে চাওয়া হলে সেখানকার অধিকর্তা অবশ্য কিছু জানাতে পারেননি।
সাধারণ ভাবে সংগ্রহ করার পরে কত দিন পর্যন্ত রক্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে?
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাধারণ ভাবে এই মেয়াদ ৩৫ দিন। তার পরে ওই রক্ত কোনও রোগীর শরীরে প্রবেশ করলে কী হতে পারে? হেমাটোলজিস্ট আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “তখন ওই রক্ত আর কোনও কাজেই আসবে না। কারণ মেয়াদ পেরোনোর পরে রক্তের উপাদানগুলি ভেঙে যায়। রোগীর জন্ডিস হতে পারে। মেয়াদ পেরোনো রক্ত খুব বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে কিডনিও বিকল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” |