অনুপ্রবেশ রুখতে এ বার বিজয়া দশমীর দিন টাকি-সহ ইছামতীর বিভিন্ন পাড়ে ছিল কড়া প্রশাসনিক নজরদারি। তার জেরে বিসর্জনের জন্য এ পাড়ের কয়েকটি নৌকা-সহ প্রতিমা ইছামতীতে নামলেও বাংলাদেশের প্রায় কোনও নৌকাই নদীতে নামেনি। প্রতি বছর যেখানে বিজয়ায় প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে মাঝনদীতে দুই বাংলার মানুষের মিলন হয়, এ বছর তা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশ ও দর্শনার্থীরা।
তবে টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিজেদের জলসীমার মধ্যে থেকে যাতে মানুষ আনন্দ করতে পারেন, তার জন্য দু’দেশের সীমান্তরক্ষী-সহ প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বসা হয়েছিল। নজরদারি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের একটা নৌকাও জলে নামেনি, দুর্ভাগ্যজনক।” |
প্রতি বছর বিজয়া দশমীকে কেন্দ্র করে বসিরহাট শহরে ইছামতীর দু’ধার ঘেঁষে মেলা বসে। দুপুরে দু’টো নৌকা জুড়ে তার উপর প্রতিমা তোলা শুরু হয়ে যায়। শতাধিক প্রতিমা ওঠে নৌকায়। বিসর্জন দেখতে ইছামতীর পাড়ে ঢল নামে মানুষের। নদীর বুক চিরে সারি দিয়ে চলে জোড়া নৌকার আসা যাওয়া। নাচ-গান, সাঁতার আর জয়ধ্বনিতে এই দিন ইছামতীতে বিসর্জনের পাশাপাশি দুই বাংলার মানুষের কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টিমুখ-- সবই চলছিল এত দিন। কিন্তু ২০১১ সালে দশমীর প্রতিমা নিরঞ্জনের সময়ে হাজার হাজার বাংলাদেশী এ পার বাংলায় অনুপ্রবেশ করেন। অনুপ্রবেশ রুখতে টাকি নাগরিক কমিটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়। তার পরের বছর দু’দেশের প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দেশের জল সীমার মধ্যে থেকে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। এ বছরও বিসর্জনকে কেন্দ্র করে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনী ও উচ্চস্তরের প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে দুই দেশের প্রশাসনের তরফেই কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। তাই সোমবার, বিসর্জনের দিন এ পারে বিএসএফ এবং ও পারে বিবিজির কড়া প্রহরা ছিল। বিএসএফের লঞ্চ, স্পিড বোট, যন্ত্রচালিত নৌকা, জাহাজকে নদীতে টহল দিতে দেখা গিয়েছে। অন্য দিকে, স্পিড বোটে হাজির ছিল বিবিজি। এ পারে জলে নেমেছিল সাকুল্যে ৫-৬টি নৌকা। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে একটি নৌকাও টাকির ইছামতীতে নামতে দেখা যায়নি। অথচ ইছামতীর ওই পারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্রীপুর, ঘলঘলে, ভাতশালা, শাকরা, পারুলিয়া, দেভাটা গ্রামে বেশ কয়েকটি দুর্গা পুজো হয়েছে। তবে হিঙ্গলগঞ্জের দিকে ইছামতীর অন্য পাড়ে খুলনা ও বসন্তপুর গ্রামের কয়েকটি প্রতিমার বিসর্জন হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু বাইচ প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। তবে ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে আতসবাজির প্রদর্শনী হয়েছে।
স্বভাবতই এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কলকাতা ও রাজ্যের অন্যান্য প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। টালিগঞ্জ থেকে টাকিতে দু’দেশের বিসর্জন দেখতে এসেছিলেন কমল ভট্টাচার্য, রতন পরামানিক, মালবিকা চট্টোপাধ্যায়রা। বাংলাদেশের নৌকা না আসায় ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। মালবিকারা বলেন, “বাংলাদেশে তো বাপ-ঠাকুরদার ভিটে ছিল। একটা দিনও যদি সেই দেশের মানুষের পরশ পেতাম, মনটা ভরে যেত। প্রশাসনের জন্য সেটাও হল না।”
টাকির পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশও ক্ষুব্ধ প্রশাসনের উপর। তাঁদের কথায়, “বিজয়া দশমীর একটা দিনে যত স্পিড বোট, লঞ্চ আর জাহাজ ঘুরেছে, তা যদি বছরের অন্যান্য দিনগুলিতে থাকত তবে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যেত। চোরা-চালানও রোখা যেত। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে মাঝনদীতে দু’দেশের মানুষের মিলনের পরম্পরাটা আর রাখা গেল না।” |