কোথাও স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে কাঠামোর খড়। জলের মধ্যে ডাঁই হয়ে পড়ে ফুল, বেলপাতা থেকে প্রতিমার সাজসজ্জা, প্লাস্টিকের প্যাকেট, ফলমূল। কোথাও আবার ঘাটের চেহারা সাফসুতরো। ফুল-মালা নির্দিষ্ট জায়গায়। কাঠামো পাড়ে।
দুর্গাপুজোর ভাসানের পরে জলদূষণ রুখতে গত কয়েক বছর ধরে তৎপরতা দেখিয়েছিল হুগলি। তাতে কিছুটা সাফল্যও এসেছে। তবে তা শুধুমাত্র শহরাঞ্চলেই। |
শ্রীরামপুরের একটি ঘাট। — নিজস্ব চিত্র। |
শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া-কোতরং, রিষড়া, বৈদ্যবাটি, চন্দননগর, চুঁচুড়া সব পুরসভাই প্রতিমা নিরঞ্জনের অধিকাংশ ঘাটে ফুল-মালা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা রাখা করেছিল। উত্তরপাড়া-কোতরং পুর এলাকায় শ’খানেক পুজো হয়। বিসর্জন হয় দোলতলা, শিমূলতলা, শিবতলা-সহ কয়েকটি ঘাটে। জলদূষণ রোধে পুরসভার তরফে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও অনেকেই গঙ্গায় ফুল ফেলেছেন। মঙ্গলবারেও তাই সাফ হয়নি এখানকার গঙ্গার ঘাট। একই চিত্র দেখা গেল শ্রীরামপুরের রায়ঘাটে। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “মঙ্গলবার সব তোলা যায়নি। যেটুকু বাকি আছে, বুধবারের মধ্যে তুলে ফেলার চেষ্টা করছি।” একই দাবি করেছেন উত্তরপাড়া পুরসভার জনস্বাস্থ্য ও পরিষেবা দফতরের চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদব। রিষড়ার প্রেমমন্দির, বাঁশতলা-সহ কয়েকটি ঘাটে নিরঞ্জন হয়েছে। তবে মঙ্গলবারেও গঙ্গা থেকে সব কাঠামো তুলতে পারেনি পুরসভা।
তুলনায় বৈদ্যবাটি, চন্দননগর, চুঁচুড়া পুরসভা অনেকটাই সফল। চুঁচুড়ার অন্নপূর্ণা ঘাট, জোড়াঘাট, ময়ুরপঙ্খী ঘাট-সহ বিসর্জনের জায়গাগুলিতে পর্যাপ্ত পুরকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। নিরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা জল থেকে কাঠামো টেনে তুলেছেন। পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় জানালেন, নৌকায় প্রচার চলেছে জলদূষণ রুখতে। চন্দননগরের রানিঘাটে জলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঠামো তুলে ফেলা হয়েছে। বৈদ্যবাটির ছাতুগঞ্জ, শুঁড়িঘাট, মুখার্জি ঘাট-সহ ৬টি ঘাটে শতাধিক প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। সব ক’টি ঘাটেই পুরসভার তরফে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বেচ্ছ্বাসেবক নামানো হয়েছিল। পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, “জলদূষণ নিয়ে রাজ্যের যে নির্দেশ রয়েছে, প্রতিবারেই তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। এ বারও তাই করেছি।”
শহরের এই পরিস্থিতির পাশে বুধবার গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি ছিল বেহাল। গঙ্গায় শ্রীপুর-বলাগড়, জিরাট ও গুপ্তিপাড়া খেয়াঘাটে প্রচুর প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। অথচ কোনও ঘাটেই ফুল-বেলপাতা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা ছিল না বললেই চলে। |