পুজো শেষেও টলিউডে মহাপঞ্চমী
১০ টা এন্ট্রি। তার মধ্যে মাত্র ২৫টি ফিচার ফিল্ম নির্বাচিত হয়েছে ইন্ডিয়ান প্যানোরামায়। আর এর মধ্যে টলিউডের পাঁচটা সিনেমা। ফারহান আখতারের ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ থেকে নাসিরুদ্দিন শাহ অভিনীত ‘দ্য কফিন মেকার’, আনন্দ গাঁধীর ‘শিপ অব থেসিয়াস’ থেকে উমেশ শুক্লর ‘ওহ্ মাই গড’ এগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচিত হয়েছে পাঁচটা বাংলা ছবি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অপুর পাঁচালি’, অঞ্জন দাসের ‘অজানা বাতাস’, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ‘ফড়িং’ আর ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘সত্যান্বেষী’। এ যেন বিজয়া দশমীর পরেও টলিউডের উৎসব!

সত্যজিৎ আর ঋত্বিকের সৃষ্টির উপস্থিতি থাকছে প্যানোরামাতে
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
এই নিয়ে পর পর চার বার আমার সিনেমা ইফি-র প্যানোরামাতে দেখানো হচ্ছে। এর আগে ছিল ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’, ‘ল্যাপটপ’ আর ‘শব্দ’। ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ তো সিলভার পিককও জিতেছিল। আমার যে ক’টা সিনেমা ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে দেখানো হয়েছে, তার প্রত্যেকটির বিষয় একটু আলাদা। এই স্বীকৃতিটা পেয়ে মনে হচ্ছে যে ঠিক ধরনের বিষয় বাছতে পেরেছি আমি। কমলেশ্বরের জন্যও আমি খুশি। এক দিকে ‘অপুর পাঁচালি’ অন্য দিকে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সত্যজিৎ রায় আর ঋত্বিক ঘটকের সৃষ্টির একটা উপস্থিতি থাকছে ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে। অঞ্জনদার ছবি এর আগেও দেখেছি ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে। কিন্তু কবি (ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী)-র জন্য এটা প্রথম। কবি এত দিন কেন সিনেমা বানাচ্ছিল না বলে আমার খারাপ লাগত। ‘এক মুঠো ছবি’র মধ্যে ওর পরিচালিত ছবিটা অন্যতম ভাল ছবি ছিল। আর ঋতুপর্ণ তো আনবিটেন-ই থেকে গেলেন শেষ পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে একটা স্ট্যান্ডার্ড মেনটেন করার ক্ষমতা যে তাঁর ছিল, সেটা উনি প্রমাণ করে দিলেন। ইফি প্যানোরামা নিয়ে তো অনেক জল্পনা হয়। ঋতু আজ নেই। নিজের ছবির জন্য তো কথা বলেননি উনি। তবু ‘সত্যান্বেষী’ প্যানোরামাতে!
আনন্দplus এক্সক্লুসিভ ছবি

‘অপুর পাঁচালি’ | ছবি: নীলাঞ্জন দাস
ইফিতে ডেবিউ করে ভাল লাগছে
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
প্রথমবার আমার ছবি ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে যাচ্ছে। এটা একটা বড় অ্যাকনলেজমেন্ট। এই স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল। যে ক’টা বাংলা ছবি বাছা হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটির জন্য আমি গর্বিত। বাংলা ছবি বানানোর ট্রেন্ডটা খানিকটা পালটেছে কয়েক বছর ধরে। সেটা দেখে ভাল লাগছে। যাঁদের ছবি ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে গিয়েছে তাঁদের প্রত্যেককেই অভিনন্দন। ইফির প্যানোরামাতে ডেবিউ করে আমি খুশি। ভাল লাগছে যে আমার প্রযোজক শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস এই ধরনের একটি ছবি বানানোর সাহস দেখিয়েছে। ‘অপুর পাঁচালি’ দেখিনি। তবে জানি যে গল্পটা অসাধারণ। কৌশিকদার অ্যাপ্রোচটা খুবই মানবিক। সেটা আমাকে নাড়া দিয়েছে। সবে সাউথ আফ্রিকা থেকে ফিরেছি। তাই ‘ফড়িং’ দেখিনি। আমার বিশ্বাস কবি ভাল ছবি বানাবে। আক্ষেপ রয়ে গেল যে ঋতুদা ‘সত্যান্বেষী’র সাফল্যটা দেখে যেতে পারলেন না। অঞ্জনবাবুর (দাস) ছবিটির ব্যাপারে আমি জানি না। তবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি সেটা দেখার। আর একটি আর্জি থাকল। কোনও জাতীয় ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে হিন্দি ছবিকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। যখন ইন্ডিয়ান ফিল্মের অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ইফি, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রদেশের ছবিকেই পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা উচিত।


‘ফড়িং’ |

‘মেঘে ঢাকা তারা’ |

ইফিতে এই নিয়ে পাঁচবার

অঞ্জন দাস
এই নিয়ে পাঁচবার ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে আমার সিনেমা দেখানো হচ্ছে। প্রথম গিয়েছিল ‘সাঁঝবাতির রূপকথা।’ তার পর ‘ইতি শ্রীকান্ত’, ‘যাঁরা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’, আর ‘অচিন পাখি।’ ‘অজানা বাতাস’ যখন পাঠালাম, তখন খুব কিছু আশা করিনি। অনেক ভাল ভাল ছবি হচ্ছে। শুনেছিলাম প্যানোরামাতে একটা দুটো সিনেমা যায়। সেখানে এই ‘অজানা বাতাস’ যাবে? আমি লবি করতে পারি না। কোনও দিন করিনি। আড়াইটা বছর সিনেমা করিনি ‘বাঁশিওয়ালা’র পর। আজ খুব ভাল লাগছে এই স্বীকৃতি পেয়ে। পাওলি কি অসাধারণ অভিনয় করেছে আমার ছবিতে। আরও একটা ভাল খবর। ওর কোঙ্কনী ছবি, ‘বাগা বিচ’, এ বার ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে। খুব ভাল লাগছে যে ইন্দ্রনীলের (রায় চৌধুরী) ‘ফড়িং’ নির্বাচিত হয়েছে। সিনেমাটা আমি দেখেছি। আমার খুব পছন্দের। ‘অপুর পাঁচালি’ দেখিনি। কৌশিককে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করি। তাই ওর জন্য আমি খুশি। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখা হয়নি। ‘সত্যান্বেষী’র সম্পর্কে বলব, ঋতু বেঁচে থাকলে হয়তো আরও ভাল হত সিনেমাটা। ‘শিপ অফ থেসিয়াস’কে ধরলে হিন্দি থেকে পাঁচটা সিনেমা ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে। আর বাংলা থেকেও পাঁচটা। কী আর বলি, এটা তো টলিউডের উৎসবের সময়।


‘সত্যান্বেষী’ |

‘অজানা বাতাস’ |

তবু চারদিনে ছবি হল থেকে নামানো হয়েছিল

ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী
‘ফড়িং’ ছবিটা প্রচুর কনভিকশন নিয়ে বানানো। ইফি প্যানোরামাতে সিলেকশন হল তার প্রথম স্বীকৃতি। কনভেনশনাল প্রচার মাধ্যম (হোর্ডিং, টেলিভিশন ইত্যাদি) আমরা হয়তো সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। করলে আরও অনেক দর্শকের কাছে সিনেমাটি পৌঁছাত। কিন্তু আমাদের ছবিটা চারদিনের মাথায় তুলে দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলবেলায় হঠাৎ শুনলাম ‘বেশরম’ মুক্তি পাচ্ছে এবং কোনও নোটিস ছাড়াই আমার সিনেমাটা মাল্টিপ্লেক্স থেকে তুলে নেওয়া হয়। ‘ফড়িং’ কোনও তারকাখচিত সিনেমা নয়। এক সপ্তাহ যদি তা দেখাতে না দেওয়া হয়, তা হলে এ ধরনের সিনেমার ভবিষ্যৎ কোথায়? পশ্চিমবঙ্গে আমার থেকেও ট্যালেন্টেড পরিচালকেরা ছবি বানাবেন কোন সাহসে? যে ভাবে মহারাষ্ট্রে মরাঠি ছবিকে সাপোর্ট করা হয়, আমাদের এখানেও বাংলা সিনেমাকে সে ভাবেই সাপোর্ট করা দরকার। ‘দ্য লাঞ্চবক্স’য়ের মতো সিনেমাও লোকে সেকেন্ড উইক থেকে দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু আমরা সে সুযোগটাই পেলাম না। ব্যক্তিগত ভাবে ব্যাপারটা দুঃখের। দুঃখটা শুধু আমার নয়। আমার মতো ভাল বাংলা সিনেমার সমর্থকদের হতাশ করেছে এটা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.