পটের দুর্গায় ভেষজ রং, প্রতিমায় ব্রাত্য
দুর্গার গায়ের রং তৈরি হয়েছে হলুদ বেটে। কার্তিকের বাবরি চুল ও সরু গোঁফ জোড়া এসেছে লণ্ঠনের ভুষো কালি ঝেড়ে। অসুরের সবুজ দেহ রাঙিয়েছে গাছের পাতা বাটা।
প্রকৃতি থেকে পাওয়া নানা উপকরণ থেকে ভেষজ রং তৈরি করে বিশাল পটের দুর্গা তৈরি করছেন বিষ্ণুপুরের ঢেলাদুয়ার এলাকায় শিল্পী প্রদীপ দাস। সেই পটের দুর্গার পুজো হচ্ছে রাঁচি শহর লাগোয়া লালপুরচকের সেনবাড়িতে। রবীন্দ্র ভারতীর ফাইন আর্টসের প্রাক্তনী প্রদীপবাবু বলেন, “রাসায়নিক রং বাজারে গেলেই পাওয়া যায়। কিন্তু তা পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। সে তুলনায় এই ভেষজ রং তৈরি করতে পরিশ্রম হলেও এতে এতটুকুও ক্ষতির আশঙ্কা নেই।” বিষ্ণুপুরেই মল্লরাজ বাড়ির দুর্গাপুজো হয় পটচিত্রে। সেখানেও ভেষজ রঙের ধারা বজায় রাখা হয়েছে। কিন্তু এই শহরের বারোয়ারি কিংবা অন্য পারিবারিক পুজোর প্রতিমা তৈরিতে ভেষজ রঙ ব্যবহার করা হয় না। শিল্পীরা তো বটেই, পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যেও এ নিয়ে আগ্রহ দেখা যায়নি।
মগ্ন শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।
প্রদীপবাবুর তৈরি পটচিত্র পৌঁছে গিয়েছে রাঁচিতে। সপ্তাহ দুয়েক ধরে নিজের স্টুডিওতে তিনি এই পটের দুর্গা তৈরি করেন। শিল্পী জানান, হলুদ, ভুষো কালি ও গাছের পাতা ছাড়াও খড়ি মাটি এবং গিরিমাটি গুলেও রং তৈরি করেছেন। ওই সব রং মিশিয়ে তৈরি করেছেন আরও অনেক রং। সেই রঙে তুলি ডুবিয়ে নিজের স্টুডিওতে ছ’ফুট চার ইঞ্চির লম্বা কাপড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন অসুরদলনী দুর্গা। উপরের চালচিত্রে মহাদেব থেকে নন্দী-ভৃঙ্গির ছবিও এঁকেছেন তিনি। ভেষজ রঙ দিয়ে প্রতিমা এঁকে মন ভরে? প্রদীপবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, কেন নয়? পটচিত্রের দুর্গার ছবি আগেও এঁকেছি। কেউ তো কম আকর্ষণীয় বলেননি।” ২০০৬ সালে তাঁর আঁকা দুর্গার পটচিত্র ইংল্যান্ডেও দিয়েছে। এ বার রাঁচির সেনবাড়ির অনুরোধে যামিনী রায়ের ধাঁচে দুর্গা থেকে অসুর, সিংহসব কিছুরই পটলচেরা চোখ এঁকেছেন প্রদীপবাবু। সেনবাড়ির অন্যতম সদস্য বিনোদবিহারী সেন টেলিফোনে বলেন, “আমাদের আদি বাড়ি সোনামুখীতে। সেখানে পটের পুজোর প্রচলন রয়েছে। তাই এ বার প্রদীপবাবুকে ভেষজ রঙ দিয়েই পটের দুর্গা আঁকতে অনুরোধ করেছিলাম। তাঁর কাজ দেখে আমরা খুশি।”
প্রাচীনকালে লিখিত বিভিন্ন কাব্যে পট্ট বা পটের উল্লেখ পেয়েছেন ইতিহাসবিদরা। সেই সময় থেকে বিষ্ণুপুর মল্ল রাজবাড়ি-সহ রাঢ়বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় পটের পুজোও শুরু হয়। মল্ল রাজবাড়ির এক সময় রাজ পুরোহিত ছিলেন বিষ্ণুপুর গোপালগঞ্জ ষষ্ঠীবটতলার বাসিন্দা মহাপাত্র পরিবার। ওই পরিবারের বংশধর ধনপতি মহাপাত্র বলেন, “২০০ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের বাড়িতে ভেষজ রক্ষে আঁকা পটের পুজো চলছে। এর পিছনে বিজ্ঞানমনস্কতা রয়েছে বলে মনে হয়।” প্রতিমা জলে বিসর্জনের ফলে জল দূষিত হচ্ছে বলে ইদানীং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বার বার রাসায়নিক রং ব্যবহার করতে বারণ করছেন। কিন্তু শুনছে কে? পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি করছেন, ভেষজ রঙে সেই জোলুস নেই। প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন, রাসায়নিক রঙের খরচও তুলনায় কম। তা হলে কি ভেষজ রঙের ব্যবহার শুধু পটচিত্রই আঁকড়ে থাকবে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.