“মা-কে মনে পড়ছিল খুব।” সুকমলবাবুর সামনে রাখা কাঁসার বাটিতে থরে থরে সাজানো মোচার ঘন্ট, সোনামুগের ডাল আর পোস্তর বড়া। কাঁসার থালার এক কোণে গোল করে সাজানো ধোঁয়া ওঠা সরু চালের সাদা ধবধবে ভাত। কিঞ্চিৎ ঘি। আর এ সবের মাঝখানে ‘তেলে ঝালে চিতল পেটি’র বাটিটা নামাতেই চোখের সামনে যেন ভেসে উঠল রাঙা পিসির মুখটিও। হোটেলে খেতে এসে বহু বছর পর ফেলে আসা দিনগুলি যেন ফিরে ফিরে আসছিল ওই স্কুল শিক্ষকের।
মেনু তালিকায় রয়েছে চালতার টক, মৌরালা মাছের বাটিচচ্চরি, খয়রা আর পুঁটির ঝাল। তেল কই আর পোস্ত ইলিশ যেন বারবার জানান দিচ্ছিল একটা প্রজন্ম বুঝি শেষ হয়ে গেল। আর নিজের অজান্তেই বাঙালি যেন সেই সব হারিয়ে যেতে বসা জিনিসগুলোকেই মনপ্রাণ দিয়ে আঁকড়ে থাকতে চাইছে। ২৬ বছরের হোটেল ব্যবসার অভিজ্ঞতা দিয়ে সেটা অনুভব করছেন কৃষ্ণনগর শহরের একটি নামী হোটেলের ম্যানেজার সঞ্জয় চাকি। আর অনুভব করেছেন বলেই তিনি ‘বাঙালি খানার’ একটি আলাদা বিভাগই বানিয়ে ফেলেছেন। সেখানে মিলবে নানা পদের সব সাবেকি বাঙালি খানা। বাটা মশলা দিয়ে রান্না হবে। |
পুজোর সময়ে বাঙালি ব্যতিক্রমী খাবারের স্বাদ খোঁজ করে উৎসবের দিনগুলিতে। তাই শহরের আর একটি হোটেলেও উৎসবের দিনে আয়োজন করছে ডাবচিংড়ি, কইপাতুরি আর বাঙালি মাত্রই জিভে জল আসা ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুশাক। আর এ সবের বাইরে প্রায় প্রতিটি হোটেলেই থাকছে পাবদা, ইলিশ, রুই, কাতল, চিতল, পমপ্লেট, ভেটকি, চিংড়ি, আড় মাছ। থাকবে বেগুন ভাজা, আলুপোস্ত, ধোঁকার ডালনা, ছানার ডালনা। চিংড়ি পটল, ভাপা ইলিশ? ‘সবই আছে।” বলছিলেন হোটেল মালিকেরা। উৎসব শুধু আলাদা পোশাকেরই নয়, আলাদা মেজাজেরও বটে। জিনস থেকে পাঞ্জাবি, গরদের শাড়ির বাঙালি যেন এই ক’টা দিন আরও আরও বেশি করে বাঙালি হয়ে উঠতে চায়। মোগলাই, চাইনিজ ছেড়ে কব্জি ডোবাতে চায় চন্দ্রমুখী আলু দিয়ে রান্না খাসির মাংসের বাটিতে। মায়ের হলুদ মাখা আঁচলের গন্ধের সঙ্গে যার গন্ধ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, এ সবের জন্য গাঁটের কড়ি একটু বেশিই খরচ হবে কিন্তু। |