পঁচিশ বছর আগে আজাদ ময়দানে যে রূপকথা শুরু হতে দেখেছিলেন নিজের চোখে, সেই রূপকথা শেষ হতে চলেছে শুনে রীতিমতো চমকে উঠলেন বিনোদ কাম্বলী। “টিভিতে খবরটা দেখে প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। পরে যখন বুঝলাম, সত্যিই সচিন টেস্ট জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তখনও বুঝতে পারছিলাম না, কেন এমনটা করল ও”, ফোনের ওপারে, মুম্বইয়ে, প্রায় এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললেন সচিনের ক্রিকেট জীবনের ভোরের সঙ্গী।
আজাদ ময়দানে হ্যারিস শিল্ড সেমিফাইনালে দুই বন্ধুর সেই বিখ্যাত ৬৬৪-র পার্টনারশিপের কথা আর কে-ই বা ভুলতে পেরেছেন? সচিনের ৩২৬-এ ও কাম্বলীর ৩৪৯-এ অপরাজিত থাকা সেই ইনিংস আজ ইতিহাস। সে সব দিন পেরিয়ে সচিন ও কাম্বলীর বন্ধুত্বে নাকি আজ ভাটার টান। গত বছর এক টিভি অনুষ্ঠানে সেই যে কাম্বলী বললেন, “সচিন ক্রিকেট জীবনে আমাকে কোনও দিনই সে ভাবে সাহায্য করেনি”, তার পর থেকে দুজনের দূরত্ব বেড়েছে বই কমেনি বলেই মনে করে মুম্বইয়ের ক্রিকেট মহল। |
সেই কাম্বলী এখন সচিনের টেস্টে অবসর ঘোষণার খবর শুনে বলছেন, “এর পর আর কার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট দেখব।” বিমান ধরার তাড়া। তারই ফাঁকে কাম্বলী বলে চললেন, “সুনীল গাওস্করের পর যে বিশাল শূণ্যস্থান তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করেছিল তেন্ডলিয়া (সচিনকে ওই নামেই ডাকেন কাম্বলি)। কিন্তু এখন সচিনের জায়গা ভরাট করবে কে বলুন তো? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ বছর টিকে থাকার মুরোদই হবে না কারও। আমি ভেবেছিলাম, ও দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ করে তবেই ছাড়বে। ২০০ টেস্টেই ওর মন ভরে যাবে, ভাবিনি।” অনেক বিশেষজ্ঞই যে বলতে শুরু করেছিলেন, সচিনের রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। কাম্বলী তাঁদের এক হাত নিয়ে বললেন, “রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সচিনের! ও সব বাজে কথা। রিফ্লেক্স ওর সহজাত। ওটা নষ্ট হওয়ার নয়। আসলে সবার মতো সচিনেরও একটা ব্যাড প্যাচ চলছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই সেটা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল। তা হলে কেন এই সিদ্ধান্ত, বুঝলাম না। সে জন্যই তো খবরটা শুনে চমকে গিয়েছি।”
জীবনের শেষ টেস্ট সিরিজে যে চেনা সচিনকে পাওয়া যাবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত কাম্বলী। বললেন, “এই তো সে দিনই ওকে ফর্মে ফিরতে দেখলাম (ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর বিরুদ্ধে ৩১ বলে ৩৫)। তার পর আমি নিশ্চিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সচিন দারুণ খেলে তবেই বিদায় জানাবে। যারা এত দিন প্রশ্ন তুলছিল, কেন সচিন রিটায়ার করছে না, তাদের যোগ্য জবাব দেবে আমার বন্ধু।”
কিন্তু কোথায় হবে সেই বিদায়ী সিরিজ, সেটাই তো জানাতে পারেনি বোর্ড। কাম্বলীর জবাব, “সচিন ও মুম্বই। এই দুটো শব্দের মধ্যেই তো মিল বেশি, না কি? সচিন যেমন মুম্বইয়ের কাছে ঋনী, তেমন সচিনের কাছে মুম্বইয়ের ঋনও কম নয়। মুম্বইয়ে হলে ম্যাচটায় আমি যাচ্ছিই। আপনাদের ইডেনে হলে ভেবে দেখব। তবে যেখানেই হোক, সচিন উইল সার্টেনলি রক।” |