ফিরে দেখা
সে দিন দলে ঢুকিয়েছিল ‘হবস-হানিফ’ তাস
প্রেক্ষাপট ১৯৮৯ পাকিস্তান সফর শুরুর দিন কয়েক আগে। ভারতের দল নির্বাচনী বৈঠক।
স্থান শীতের চণ্ডীগড়।
বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে আচমকা আবিষ্কার হল, পাঁচ জাতীয় নির্বাচক অদ্ভুত এক দোটানায় ভুগছেন। নিজেদের মধ্যেই দু’টো টিম কখন যেন তৈরি হয়ে গিয়েছে। দুই নির্বাচক প্রবল ভাবে বলে যাচ্ছেন, ‘এই ছেলেটাকে টিমে ঢোকাও’। আর বাকি দু’জন পাল্টা দিচ্ছেন, ‘কী ভাবে ঢুকবে? বয়সটা দ্যাখো!’
মতান্তর ষোলো বছরের এক কিশোরকে ঘিরে।
মতান্তর সচিন রমেশ তেন্ডুলকরকে ঘিরে!
এবং সে দিনের জীবিত জাতীয় নির্বাচকদের কারও কারও কথা ধরলে, স্যর জ্যাক হবসদের ট্রাম্প-কার্ড না ফেললে নাকি সচিন তেন্ডুলকরের ভারতীয় দলে ঢোকা অনিশ্চয়তায় পড়ে যেত!
ঠিক কী হয়েছিল?

’৮৯-এর সেই সফরের দল নির্বাচনী বৈঠক আজ পুরোপুরি মনে করতে পারেন না গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। “শরীরটা এখন একদম ভাল যাচ্ছে না। কিছু কিছু কথা মনে আছে। সব নয়,” ফোনে বলছিলেন বিশ্বনাথ। যে পাঁচ জাতীয় নির্বাচক সে দিন চণ্ডীগড়ে সচিনের জাতীয় দলে খেলার উপর সিলমোহর দিয়েছিলেন, আজ তাঁদের মধ্যে মাত্র দু’জন জীবিত। চেয়ারম্যান রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরও নেই। বেঁচে আছেন শুধু বিশ্বনাথ এবং আকাশ লাল। এবং বৈঠকের দুই জীবিত প্রতিনিধির কথা শুনলে মনে হবে, ’৮৯-এর ওই কিশোর চব্বিশ বছর চুটিয়ে ক্রিকেট খেলার পরেও কোথাও যেন তাঁদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে ছেলেটা আর খেলবে না! বাকি আর দু’টো টেস্ট...।
জানা গেল, সে দিনের বৈঠকে সচিনের নাম সর্বপ্রথম পেশ করেছিলেন রাজ সিংহ দুঙ্গারপুর। কিন্তু নাম পেশ হওয়ামাত্র দুই নির্বাচক বলতে থাকেন, “এটা কী ভাবে সম্ভব? ছেলেটার বয়স এত কম। এখনই ইমরান খান, ওয়াকার ইউনিসের সামনে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে?” সচিন ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত খেললেও ওই দুই নির্বাচক ভরসা পাচ্ছিলেন না। পাল্টা তখন বলা হয়, বয়সটা কেন দেখা হচ্ছে? স্যর জ্যাক হবস যদি পঞ্চাশ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলতে পারেন, হানিফ মহম্মদ যদি ষোলো বছরের কাছাকাছি বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটাতে পারেন, তা হলে সচিন নয় কেন? আরও বলা হয়, বয়স না দেখে সচিনের পারফরম্যান্স দেখা উচিত। দেখা উচিত ছেলেটাকে এখনই খেলালে কত দিন ভারতকে ও টানতে পারবে। দিল্লি থেকে ফোনে আকাশ লাল বলছিলেন, “পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে আমি সে দিন হবস, হানিফের উদাহরণটা তুলে দিয়েছিলাম। তখন আর কেউ কিছু বলতে পারেনি। তা ছাড়া দুঙ্গারপুরও প্রচণ্ড চাইছিল সচিনকে রাখতে।”
এবং সে দিনের সেই ঐতিহাসিক দল নির্বাচন নিয়ে বলতে গেলে তৎকালীন কোনও নির্বাচক নস্ট্যালজিক, কেউ আবেগে অবরুদ্ধ। বিশ্বনাথ যেমন বলে দিলেন, “আজ এটা নিয়ে না বলে যদি কাল বলি?” আকাশ লাল আবার বললেন, “আমি তো ভাবতেই পারছি না যাকে আমরা সে দিন বেছেছিলাম, সেই সচিন আর মাত্র দু’টো টেস্ট খেলবে। তা-ও সেটা নভেম্বরে।”
কাকতালীয়। আশ্চর্যও বটে।
চব্বিশ বছর আগে করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে যখন আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, সেটা নভেম্বর ছিল।
চব্বিশ বছর পর কোন মাঠে তাঁর ক্রিকেটজীবনের সমাপ্তি হবে, এখনও ঠিক নয়। কিন্তু সেটাও নভেম্বরে।
ইতিহাসের বৃত্তটা আজ সম্পূর্ণ হল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.