|
|
|
|
উদ্বোধনের পর পেরিয়েছে পাঁচ মাস |
উৎসবেও আঁধার রেলশহরের উড়ালপুল |
দেবমাল্য বাগচি • খড়্গপুর |
শারদোৎসবে আলোর রোশনাইয়ে ভাসছে গোটা শহর। অথচ বোধনের আগের সন্ধ্যাতেও আইআইটি-পুরীগেট উড়ালপুলের পথবাতি জ্বলল না। খড়্গপুরের মানুষ গত পাঁচ মাস ধরে ঝুঁকি নিয়েই প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ওই আঁধার পথে যাতায়াত করেছেন।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রেলশহর খড়্গপুরে কেশিয়াড়ি বাইপাসে আইআইটি ঢোকার মুখে পুরীগেট দিয়ে যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। রেলগেটে দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও যানজটে আটকে থাকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রোজকার ভোগান্তি। আইআইটিতে আসা বিশিষ্ট জনেরাও বিভিন্ন সময়ে এই সমস্যায় পড়েছেন। সঙ্কট কাটাতে দাবি উঠেছিল উড়ালপুলের। সেই অনুযায়ী আইআইটি, রেল ও রাজ্যের সম্মিলিত উদ্যোগে ঠিক হয় অত্যাধুনিক মানের উড়ালপুল গড়া হবে। দায়িত্ব দেওয়া হয় মেট্রো রেলকে। রাজ্যের একটি ঠিকাদার সংস্থা বরাত পায়। ১১১ কোটি ৯০ লক্ষ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে উড়ালপুলের নির্মাণকাজ চলে প্রায় আড়াই বছর ধরে। শেষমেশ প্রতীক্ষার অবসান হয় চলতি বছরের ১০ মে। উদ্বোধন হয় উড়ালপুলের। তারপর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। এখনও ওই পথে আলো লাগানো হয়নি। খড়্গপুর স্টেশন, গোলবাজার থেকে যাতায়াতকারী আইআইটির পড়ুয়া, আবাসিক, তালবাগিচা, প্রেমবাজার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে রোজ উড়ালপুল পেরোতে হচ্ছে। আইআইটির কর্মী গৌতম রায়, তালবাগিচার ব্যবসায়ী কমল দত্ত বলে, “ফাঁকা রাস্তা হওয়ায় ওই উড়ালপুল দিনের বেলাতেও নির্জন। রাতে আলো না থাকায় গাড়ির আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। পুলিশি টহলদারিও দেখি না।” |
|
পথবাতি নেই। খড়্গপুর আইআইটি-পুরীগেট উড়ালপুল অন্ধকার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
খড়্গপুরে বেশ কিছু বড় বাজেটের পুজো হয়। তা দেখতে মেদিনীপুর-খড়্গপুর তো বটেই, জেলারও বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভিড় জমান। রাতভর চলে ঠাকুর দেখা। পুজোর সময় রাতের অন্ধকারে ওই উড়ালপুল দিয়ে যাতায়াত করা সমস্যা হবে বলেই আশঙ্কা। ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা আইআইটির টেক-মার্কেটের ব্যবসায়ী কার্ত্তিক দত্ত বলেন, “কয়েকদিন আগেও শুনছিলাম ছিনতাই হচ্ছে। প্রতিদিনই রাতে বাড়ি ফিরি। সঙ্গে টাকাও থাকে। রীতিমতো আতঙ্কে থাকি। ভেবেছিলাম অন্তত পুজোর আগে আলো লাগানো হবে। কিন্তু কোথায় কী?”
উড়ালপুল গড়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বসানো হয়েছিল বাতিস্তম্ভ। তবে এখনও আলো লাগানো হয়নি। আসেনি বিদ্যুৎ সংযোগও। উড়ালপুলের পথবাতির বিদ্যুৎ বিল কে বহন করবে তা নিয়েই জল্পনা চলছিল। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ গোটা বিষয়টি রাজ্য পূর্ত দফতরের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ জন্য মেট্রো রেল প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা পূর্ত দফতরকে দিয়েছে। প্রায় ৭৬টি ‘সোডিয়াম ভেপার’ বাতি লাগানোর কথা ওই উড়ালপুলে। সম্প্রতি ঠিক হয়েছে বিদ্যুতের খরচ বহন করবে পুরসভা। মেট্রো রেলের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় বলে, “এই আলোর ভার আমরা রাজ্য পূর্ত দফতরকে দিয়েছি। টাকাও আমরাই দিয়েছি।” এ কথা স্বীকার করে নিয়ে পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র(ইলেকট্রিক্যাল) প্রণব সামন্তের বক্তব্য, “আসলে খড়্গপুর পুরসভায় বোর্ড নিয়ে গন্ডোগোল চলায় বিদ্যুৎ বিলের অনুমতি নিতে সময় লেগেছে। সবিদ্যুতের ‘সার্ভিস কানেকশন বিল’ আমরা খুব শীঘ্রই জমা দেব। তবে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে আমরা মেট্রো রেলকে জানিয়েছি আশা। রাখছি পুজোর পরেই কাজ চালু হবে।”
এখন এই আশাতেই বুঁক বাঁধছেন আঁধার পথের যাত্রীরা।
|
|
|
|
|
|