মা দুর্গা ‘লা-জবাব’, তবে মনে ধরেনি বাঙালি খানা
রপ্পা থেকে হাতিবাগানে ফোনটা আসে চতুর্থীর রাতে। তখনই যমজ ছেলেমেয়ে হওয়ার খবর পেয়েছেন হায়দর আলি। শুনে অগ্রজপ্রতিম বন্ধু মমতাজ আহমেদের হাসি আর ধরে না! হায়দরের পিঠ চাপড়ে বলেন, “সাবাস্ এ বার তোর বেটাবেটির নাম গণেশ আর লছ্মিই রেখে দে!”
বলিউডের দৌলতে নাম দু’টো অবশ্য হায়দরদের অজানা নয়। তবে হাতিবাগান নবীনপল্লির মণ্ডপ সাজাতে এসে দুর্গা ও তাঁর চার ছেলেমেয়ের আরও অনেক খুঁটিনাটি জানা হয়ে গিয়েছে। হায়দর এটাও শুনেছেন, দুর্গাপুজো আদতে বাঙালির ঘরে মেয়ের বাপের বাড়ি আসার উৎসব।
পাঁচ হপ্তা কেটে গিয়েছে। হায়দর, মমতাজ ও তাঁদের সহযোগী সদ্যযুবা ইকবাল আহমেদের ঠিকানা এখন কলকাতাই। রাতভর মণ্ডপে থিমের বিচারকদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাঁদের মুখে বাংলার খই ফুটছে। নোমোস্কার! কেমন লাগছে? কেমন আছেন?— তো নস্যি! হায়দর একবার শুভ পাঞোমি, শুভ ষাঠি, সোপ্তুমি আওড়ানোরও চেষ্টা করলেন। শিক্ষক জনৈক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক।
রংবেরঙের নকশায় অতিকায় ট্রাক-লরি সাজিয়ে তোলেন তিন শিল্পী। পাকিস্তানি ট্রাক আর্টের পতাকা নিয়ে বিলেত-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়াও ঘুরে এসেছেন। কিন্তু কলকাতায় এই প্রথম। জোড়া গির্জার কাছে হোটেল থেকে সাততাড়াতাড়ি এসে এতদিন একটু-একটু করে মণ্ডপ সাজিয়ে তুলেছেন। কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল পুজোর দিন দশেক আগে। কিন্তু বেচারা হায়দর মহা ধন্দে পড়লেন।
শোভাবাজার রাজবাড়িতে পাক শিল্পীরা। —নিজস্ব চিত্র।
পুজো দেখতে কলকাতায় থেকে যাবেন? না কি পাকিস্তানে হরপ্পার কাছে সাহিওয়ালে সসুরালে গিয়ে আসন্নপ্রসবা স্ত্রীর পাশে থাকবেন! শেষমেশ ভিসার মেয়াদ ক’দিন বাড়িয়ে নিয়েছেন। কলকাতাই হায়দরের কাছে বেশি নম্বর পেয়েছে।
কলকাতায় অবশ্য সমস্যার অন্ত নেই। হায়দর-মমতাজের রায়, এক খসখসের কাবাব (পোস্তর বড়া) ছাড়া রান্নাবান্না এখানে বড্ড ‘ফিকা’, আলুনি। পুজোকর্তা পিকুদা (দীপ্ত ঘোষ)-র স্ত্রী রূপশ্রী একদিন যত্ন করে খাইয়েছিলেন। তবু করাচির মশলাদার বিরিয়ানি, লাহৌরের চানা মসালার পাশে কলকাতা দাঁড়াতেই পারবে না।
বিচ্ছিরি ট্র্যাফিক জ্যাম হাতিবাগানের পাড়ায়। শিয়ালদহ উড়ালপুল ছাড়া আর কোনও ‘ফ্লাইওভার’ও তো চোখে পড়ল না। প্রধানত পুরনো কলকাতাতেই থেকেছেন। গিয়েছেন বড়জোর বিড়লা তারামণ্ডল বা মিলেনিয়াম পার্ক পর্যন্ত। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালও দেখেছেন দূর থেকে। তবে ভারী পছন্দ হয়েছে হাওড়া ব্রিজ। হায়দর জানালেন, দেশে ফিরে ট্রাকের গায়ে হাওড়া ব্রিজের নকশা ফুটিয়ে তুললে সেটা নির্ঘাত ট্রাকওয়ালাদের মনে ধরবে। প্রতিমার গায়ের শোলার কাজ-টাজও বেশ লেগেছে। তবে মমতাজের মন্তব্য, “আমাদের ট্রাকের গায়ে ঝড়-বৃষ্টিতে এ সব টিকবে না।”
বৃহস্পতিবার বোধনের সকালে শোভাবাজার রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দাঁড়িয়ে তিন শিল্পীর চোখেমুখে ‘বাঃ’ ফুটে উঠল। দেওয়ালের এক ধারে বিসর্জনের একটা ছবিও দেখালেন বাড়ির এক গিন্নি নন্দিনী দেববৌরানি। অষ্টমীতেই তিন পাক শিল্পীর কলকাতা ছাড়ার কথা। তার আগে ভাসানের দৃশ্য দেখে হায়দরের চোখেমুখে অবিশ্বাস, “বলেন কী! এই মূর্তি মোটে পাঁচ দিনের জন্য তৈরি হয়েছে! এমন শিল্পকর্মের পুরোটা আপনারা জলে ডুবিয়ে দেবেন?”
এর আগে সব থিমের ঠাকুর দেখেছেন। পঞ্চমীর রাতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাড়াতেই টুকটাক প্যান্ডেল-হপিং। তবে গোলটা বাধল নলিন সরকার স্ট্রিট ঘুরে সিকদারবাগনে যেতে গিয়েই। ও পাড়ার সঙ্গে হেব্বি রেষারেষি! পিকুদা, থিম-স্রষ্টা গোপাল পোদ্দার কেউ ও দিকে যেতেই রাজি নন। অগত্যা, ক’জন ছোকরা কর্মকর্তা সঙ্গী হলেন।
হাসতে হাসতে বিধান সরণির দিকে নবীনপল্লির তোরণ পেরিয়েই মমতাজের ঠাট্টা, “লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে গেলাম না কি? এ বার বুঝি ওদের এরিয়া?” শুনে কর্মকর্তারা হেসে কুটিপাটি।
হায়দর আনমনে বলে ওঠেন, “ইউরোপের সব দেশ হাজার বছর নিজেরা কাটাকাটি করে এখন ভাব করে ফেলেছে। আর আমরা এত বছর এক সঙ্গে থাকার পরেও খালি ঝগড়া করে মরছি!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.