ষষ্ঠীতেই জনজোয়ার, টক্কর দক্ষিণের সঙ্গে উত্তরের
কের বিরুদ্ধে পাঁচ!
মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মেয়র পারিষদ!
তবে ভোটে নয়, পুজোর ভিড় টানার লড়াইয়ে। গত কয়েক বছর ধরে পুজো ময়দানে নিউ আলিপুর সুরুচির দাপট দেখেছে মহানগরী। আর এই পুজোকে কলকাতার ময়দানে কার্যত এগিয়ে নিয়ে এসেছেন আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এ বার সেই দাপটকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে হাতিবাগানের পাঁচটি পুজো। যার মধ্যে চারটির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। পুলিশের হিসেবে ষষ্ঠীর দিন প্রায় সমানে সমানে নিউ আলিপুর-সহ দক্ষিণের হেভিওয়েট পুজোগুলিকে টক্কর দিয়েছে উত্তর কলকাতা। বোধনের দিনেই কার্যত নেমে এসেছে অষ্টমীর ঢল।
আঁচ অবশ্য মিলেছিল পঞ্চমী থেকেই। মহালয়া থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি রেহাই দিতেই বুধবার শহরের বহু ছোট-মাঝারি মণ্ডপে ঢুঁ মেরেছিলেন মানুষ। বৃহস্পতিবার, বোধনের সন্ধ্যায় সেই ঢল গিয়ে পৌঁছল শহরের নামী পুজোগুলিতেও। অনেকেই বলছেন, নবমী থেকে ফের বৃষ্টি হতে পারে। তাই এ বার আগে-ভাগেই ঠাকুর দেখা সেরে রাখা ভাল।
এ দিনটা অবশ্য অন্য ভাবে কাটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে রাজ্য প্রশাসনের নতুন সদর দফতর নবান্ন থেকে বেরিয়ে তিনি নবনীড়ে যান। প্রতি বারের মতো এ বছরও ওই বৃদ্ধাবাসের শ’খানেক প্রবীণ-প্রবীণার হাতে তুলে দেন নতুন পোশাক। প্রবীণাদের দেওয়া শাড়িগুলির প্রায় সব ক’টি মুখ্যমন্ত্রী উপহার পেয়েছিলেন। গেয়ে শোনান ‘পুরনো সেই দিনের কথা।” নবনীড়ের বাসিন্দাদের অষ্টমীর দিন সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুজো দেখানোর জন্য পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কোনও পুজো মণ্ডপে না গেলেও দুপুর থেকে প্রতিমা দর্শন শুরু করে দেন শহরবাসী।
মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় উৎসবের শহর। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
বেলা বারোটা, দমদম মেট্রো স্টেশন। টিকিট কাউন্টার থেকে লাইন পৌঁছে গিয়েছে প্রায় দমদম রোড পর্যন্ত। নতুন পোশাকে উঠতি বয়সীদের ভিড়ই বলে দিয়েছে, গন্তব্য মণ্ডপ। এর পর থেকে বেলা যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। কোনও দল শ্যামবাজার কিংবা শোভাবাজারে নেমে উত্তরের মণ্ডপগুলিতে ভিড়ে গিয়েছে। অন্যরা কালীঘাট, টালিগঞ্জ কিংবা গীতাঞ্জলি গিয়েছেন। আর এই ভিড়েই কার্যত থমকে গিয়েছে শহরের রাজপথ। ভরদুপুরে গাড়ি নিয়ে হাতিবাগান মোড় থেকে শ্যামবাজার পৌঁছতে প্রায় আধ ঘণ্টা লেগেছে। দুপুর একটা নাগাদ গাড়ি নিয়ে নিউ আলিপুর গিয়েছিলেন দেবাশিস ঘোষ। চেতলা ব্রিজ পেরোতে অন্তত ২০ মিনিট দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে।
দুপুরে যা ছিল ভিড়, সন্ধ্যা গড়াতেই তা প্রায় জনপ্লাবন। আলোয় সেজে ওঠা রাস্তায় তখন শুধুই কালো কালো মাথা। উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে উত্তরের ভিড় গিয়েছে করবাগান, তেলেঙ্গাবাগান, সংগ্রামী, লালাবাগান নবাঙ্কুরে। গত কয়েক বছর তেমন ভাল কাটেনি শিল্পী প্রশান্ত পালের। এ বার নবাঙ্কুরে তাঁর দুর্গাদর্শনের থিম নজর কেড়েছে দর্শকের। পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি, কাঁকুড়গাছি মিতালীর মতো নামী পুজোর পাশাপাশি ভিড় টেনেছে নারকেলডাঙার পূর্ব কলকাতা সর্বজনীনও। বোধনের সন্ধ্যাতেই এমন পারফরম্যান্স আশা করেননি ওই পুজোর কর্তারা। তবে উত্তরে ভিড় টানার লড়াইয়ে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে হাতিবাগানের পঞ্চপাণ্ডবনলিন সরকার স্ট্রিট, নবীনপল্লি, হাতিবাগান সর্বজনীন, সিকদারবাগান ও কাশী বোস লেন। বস্তুত, মানুষের ভিড়েই সন্ধ্যায় অরবিন্দ সরণিতে কার্যত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সন্ধ্যা সাতটায় ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত নলিন সরকার স্ট্রিটের কর্তা সিদ্ধার্থ সান্যাল। বললেন, “ষষ্ঠীর সন্ধ্যাতেই যদি এমন হয়, অষ্টমীর ভিড় সামলাতে তো কালঘাম ছুটে যাবে।”
বছর দুয়েক ধরে হেভিওয়েট শিল্পী ভবতোষ সুতারকে পুজোর দায়িত্ব সঁপেছে সিকদারবাগান। ভিড়ের চেহারা দেখে তৃপ্ত পুজোকর্তা গৌরীশঙ্কর রায়চৌধুরী। সাড়ে সাতটায় কাশী বোস লেনের সোমেন-প্রদীপ্তরা দড়ি ফেলে ভিড় সামলাতে ব্যস্ত। আর এই ভিড় দেখেই কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলছেন, “হাতিবাগানই এখন কলকাতার ব্যস্ততম পুজো বেল্ট। এখানের পাঁচটি পুজো কার্যত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘকে।”
পাল্টা বাণ মেরেছেন সুরুচি-কর্তা অরূপ বিশ্বাসও। বলেছেন, “সুরুচি হল কলকাতার পুজোর সচিন তেন্ডুলকর।” ভারতীয় ক্রিকেটে সচিন যেমন ধরাছোঁয়ার বাইরে, তেমনই সুরুচিকে ভিড় টানার লড়াইয়ে অপ্রতিরোধ্য বলছেন আবাসনমন্ত্রী। বস্তুত, ষষ্ঠীর দুপুর থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপে। সন্ধ্যায় উপচে পড়া ভিড় সামলাতে কার্যত নাজেহাল স্বেচ্ছাসেবকেরা। রাত দশটাতেও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মানুষ। সুরুচির পাশাপাশি দক্ষিণে ভিড় টানার লড়াইয়ে সামিল হয়েছে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন, একডালিয়া এভারগ্রিন, সন্তোষপুর লেক পল্লি, চেতলা অগ্রণীর মতো বড় পুজোগুলি। রাত সাড়ে ন’টায় লেক পল্লির কর্তা সোমনাথ দাসের চোখ টকটকে লাল। বললেন, “ভিড় সামলাতে নাজেহাল হচ্ছি।”
পিছিয়ে নেই হরিদেবপুর-বেহালাও। বেহালার বড়িশা ক্লাব, নূতন দলে লাইনে দেখা গেল শুধু সার-সার মাথা। হরিদেবপুরে অজেয় সংহতি থেকে দলে দলে মানুষ গিয়েছেন ৪১ পল্লির মণ্ডপে, যার থিম ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ।
ভিড়ের সঙ্গে এ দিন পাল্লা দিয়ে ছিল যানজটও। তবে সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে। বস্তুত, এ দিন থেকেই পুরো উদ্যমে মাঠে নেমে পড়েছে কলকাতা পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, নিউ আলিপুরে রাত পর্যন্ত যানজট ছিল। তবে বিকেলের পর থেকেই শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যানজট কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। উত্তর ও পূর্ব কলকাতার একাধিক রাস্তা থমকে না গেলেও গাড়ি চলেছে খুব ধীরে।
তবে যানজটে জেরবার হয়েছে বেহালা। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, বেহালার রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তার উপরে এই এলাকায় একাধিক বড় পুজো থাকায় গাড়ি ও মানুষের ভিড় বেড়েছে। ফলে ওই এলাকায় হাজারো চেষ্টা করেও যান চলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়নি। তবে লালবাজারের কর্তাদের আশা, সপ্তমী থেকে অতিরিক্ত বাহিনী নামিয়ে বেহালা এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.