নারী শক্তির বোধন এ বার ফেডারেল রিজার্ভে। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হিসেবে জেনেট ইয়েলেনকে মনোনীত করলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সেনেটে মনোনয়ন পাশ হলে, আগামী বছরের গোড়াতেই ফেড রিজার্ভের শীর্ষ পদে বসবেন ৬৭ বছরের জেনেট। ব্যাঙ্কের ১০০ বছরের ইতিহাসে তার প্রথম মহিলা কর্ণধার হবেন তিনি।
ভারতের যেমন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আমেরিকার তেমনই ফেডারেল রিজার্ভ। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কটির নীতির দিকে প্রতিদিন উদগ্রীব চোখ রাখে সারা বিশ্বের শেয়ার বাজার। অনেক সময়ই তার দিকে তাকিয়ে লগ্নির ঘুঁটি সাজায় শিল্প সংস্থাগুলি। এ হেন ফেড রিজার্ভের শীর্ষ পদে এত দিন নাম দেখা যায়নি কোনও মহিলার। শুধু আমেরিকাতেই বা কেন? বিশ্বের সব থেকে শিল্পোন্নত সাতটি দেশের (আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, কানাডা, ব্রিটেন, ইতালি) কোথাও কখনও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হিসেবে দেখা যায়নি কোনও মহিলাকে। সেই অর্থে ফেডারেল রিজার্ভের শীর্ষ পদে জেনেটের আরোহণ অবশ্যই ইতিহাস, রূপকথাও।
বাস্তবেও জেনেটের জীবন রূপকথারই মতো। ডাক্তার বাবার মেয়ে। নোবেলজয়ী জেমস টোবিনের বক্তৃতা শুনে অর্থনীতির সঙ্গে প্রথম প্রেম। সিদ্ধান্ত অর্থনীতিবিদ হওয়ার। পরে সেই টোবিনের কাছেই ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি। ১৯৭৭-এ ফেড রিজার্ভের ক্যাফেটেরিয়ায় আলাপ জর্জ অ্যাকারলফের সঙ্গে। |
এক বছরের মধ্যে বিয়ে। তার পর দু’জনেই দীর্ঘ দিন পড়িয়েছেন লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স এবং বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনাবাসী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ মেঘনাদ দেশাইয়ের মতে, অ্যাকারলফ শুধু ২০০১-এর নোবেলজয়ীই নন, অর্থনীতির জিনিয়াস। সম্ভবত সেই কারণেই তাঁর ছায়ায় অনেক সময়ই ঢাকা পড়ে গিয়েছেন জেনেট। অবশ্য অনেকেই রসিকতা করে বলেন, ২০১০ সালে ফেড রিজার্ভের ভাইস চেয়ারের পদে উঠে আসার পর স্বামীর তুলনায় বেশি প্রচারের আলোয় থেকেছেন জেনেট। নোবেলজয়ীর ততোধিক বিখ্যাত বউ এমনটা সচরাচর ঘটে না।
অবশ্য ব্যক্তিগত পরিচিতির অনেক আগে অর্থনীতিবিদ ও প্রশাসক জেনেটকে কুর্নিশ করে দুনিয়া। যেমন নাম ঘোষণা করতে গিয়ে খোদ ওবামাই বলেছেন, “ওঁর হাতে কোনও জাদুকাঠি নেই। কিন্তু বাজার এবং অর্থনীতি সম্পর্কে জেনেটের ধারণা জলের মতো স্বচ্ছ। চোখে পড়ার মতো তাঁর দূরদৃষ্টি। আর সেই সঙ্গে রয়েছে ঐকমত্য তৈরি করার ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা। যাঁর উত্তরসূরি হিসেবে জেনেট আসছেন, সেই বেন বার্নানকেরও মত একই।
এর আগে বিল ক্লিন্টনের আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা জেনেট আর অ্যাকারলফ অর্থনীতিবিদ হিসেবে একই ঘরানার। জেনেটের বিশ্বাসের মূল প্রতিপাদ্য, বেকারত্বের হার কম থাকা জরুরি। তার জন্য সরকারি ত্রাণ লাগলেও, তা-ই সই। শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হিসেবে অবশ্যই মূল্যবৃদ্ধির উপরে নজর রাখবেন। কিন্তু গুরুত্ব দেবেন বৃদ্ধি ও চাকরি তৈরিকে।
তাই তাঁর নাম ঘোষণায় ভারত-সহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই আশ্বস্ত। কারণ তাদের ধারণা মার্কিন অর্থনীতির চাকায় পুরোদস্তুর গতি ফেরার আগে ত্রাণ বন্ধ করবেন না জেনেট। অন্তত তাড়াহুড়ো তো করবেনই না।
গড়পড়তা মানুষ যেখানে ষাটেই অবসর নেন, সেখানে সাতষট্টিতে নতুন ইনিংস শুরু করছেন জেনেট! চ্যালেঞ্জ অর্থনীতির হাল ফেরানো। |