রাজ্য ভাগ নিয়ে অশান্ত অন্ধ্রপ্রদেশ। বাংলাদেশেও মাছের জোগান কম। তাতেই পুজোর মুখে টান মাছের বাজারে।
তার ধাক্কায় রুই-কাতলার দাম ইতিমধ্যেই কিছুটা বেড়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা মাছ ব্যবসায়ীদের। রাজ্য ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শেখ আনোয়ার বলেন, “কয়েক মাস ধরেই মাছের জোগান নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তার জেরে দাম বেড়েছে। আগামী কয়েক দিনে জোগানে সমস্যা হবে। ফলে দামের উপরে প্রভাব পড়বে।”
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ অবশ্য বলেন, “মাছের বাজার ঠিক রাখতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। ভিন্ রাজ্য থেকে মাছ আনার চেষ্টা হচ্ছে। পুজোয় মাছের জোগানে কোনও সমস্যা হবে না।” তবে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে দায় চাপিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্র সরকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। রাজ্য সরকারের এ নিয়ে কার্যত কিছু করার নেই।”
রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, পুজোর সময়ে রাজ্যে রুই ও কাতলা মাছের প্রয়োজন প্রতি দিন প্রায় আড়াই হাজার টন। ইলিশ মাছের চাহিদা থাকে দৈনিক প্রায় চারশো টন। রুই-কাতলার বেশির ভাগটাই আসে অন্ধ্র থেকে। বর্তমানে প্রায় প্রতি দিন পাঁচশো টনের বেশি সেই মাছ আসছে না। আগামী কয়েক দিনে মাছ কার্যত আসবে কি না, তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে। জেলায়-জেলায় বাজারে দাম বাড়ছে।
কয়েক দিন আগেই পাইকারি বাজারে রুইয়ের দাম ছিল ১০০ টাকা, কাতলা ১৩০ টাকা। এই সপ্তাহের শুরুতে এক কেজি ওজনের রুই মাছের পাইকারি বাজারে দাম ছিল ১২০ টাকা। কাতলার দাম ১৫০ টাকা। পুজোর সময়ে তা আরও বাড়ছে। শুধু রুই-কাতলা নয়, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে যে ইলিশ আসে তার জোগানও কমেছে। পুজোর সময়ে ৫০ টনের বেশি ইলিশ চোরাপথে আসবে না বলেই আশঙ্কা মাছ ব্যবসায়ীদের। সেই মাছ কলকাতার বাজারে থাকলেও জেলার বাজারে পৌঁছবে না। পাবদা, ভেটকি, ট্যাংরা মাছেরও অনেকটা বাংলাদেশ থেকে আসে। সে সব আসার সম্ভাবনাও কার্যত নেই।
পুজোর বাজার ঠিক রাখতে মাছ ব্যবসায়ীরা মহারাষ্ট্র, কেরল এবং তামিলনাড়ুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মায়ানমারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে তাতে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁদের। মাছ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বাজারে মাছের দাম ধরাছোঁয়ার মধ্যে রাখার জন্য সব সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। কিন্তু দূর থেকে মাছ আনলে পরিবহণ খরচ বাড়বে। তাই দামও বাড়বে। মৎস্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছি, কোনও অজুহাতেই বেশি দাম নেওয়া যাবে না।”
তবে রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, বাজারে মাছের জোগান ঠিক রাখতে সরকার নির্দিষ্ট দামে মাছ বিক্রি করবে। সে কারণে মৎস্য দফতরের অফিসারেরা বেশ কয়েকটি রাজ্যে গিয়েছেন। সেখানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে মাছ আনার চেষ্টা করছে সরকার। তবে এই পুজোয় মধ্যবিত্ত বাঙালির মাছ-ভাতের স্বস্তি ফিরবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। |