প্রতিমার বায়না থেকে বিসর্জন, সবেই খুদেরা
পুজোর সম্পাদকের বয়স ১২ বছর। সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পুজো কমিটির প্রায় সব সদস্যই প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরায়নি। দু’একজন হাইস্কুল। তাতে কী? খুদেরা কী পুজো কর্তা হতে পারে না?
গল্প নয়। সত্যি।
বেশ কয়েক বছর ধরে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর এলাকার কয়েকশো কচিকাঁচা মিলে আয়োজন করছে দুর্গাপুজো। বড়রা শুধুই পাশে থেকে সাহায্য করে। পুজোর পুরোহিত ছাড়া সবেতেই আসে তারা। কেউ ঢাক বাজায়। কেউ হিসেব রাখে। কারও কাজ পুজোর জোগাড় করা। পুজোর ক’দিন খুদে পুজো উদ্যোক্তাদের বাড়ি ফেরার অবসরটুকুও মেলে না। তবে, শুধু খাটুনিই নয়, সাজগোজেও সমান সচেতন তারা। ষষ্ঠীর সকালে নাপিত আসেন। খুদেদের চুল কাটবার জন্য। এরপর পুজো কমিটির বড়দের উদ্যোগে ছোটদের দেওয়া হয় নতুন পোশাক।
বছর বারো আগে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের গঙ্গানন্দপুর, বিদ্যানগর, কোবলা, দক্ষিণ শ্রীরামপুর এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের নিয়ে শিশুমেলা কমিটি তৈরি করেছিলেন অধুনা রাজ্যর মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। স্থানীয় বিদ্যানগর গয়ারাম দাস বিদ্যামন্দিরের এই পুজোয় প্রথম বছর ছিল জনা ৫০ খুদে। তারপর থেকে এই পুজোয় ছেদ পড়েনি। একটা করে বছর গড়িয়েছে, বেড়েছে পুজোয় যোগ দেওয়া কচিকাঁচার সংখ্যা। এদেরপ্রায় সবার বাড়িতেই দিন আনি দিন খাই অবস্থা। কারও বাবা ভ্যান চালায়, কেউ বাজারে সব্জি বিক্রি করেন। তবে এখন শুধু দরিদ্র পরিবারই নয়, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েও এই পুজোর সক্রিয় সদস্য। পুজো দেখতে আশপাশের গ্রামবাসী ছাড়াও ভিড় করেন সরকারি আধিকারিকেরা।
শিশুমেলা কমিটির পুজোয় ভিড় খুদেদের। রয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। —নিজস্ব চিত্র।
শিশুমেলা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, মণ্ডপ সাজানো থেকে শুরু করে প্রতিমা আনা, ঢাক বাজানো এমনকি ভাসানসবই করে শিশুমেলা কমিটির কচিকাঁচারা। তাদের ব্যস্ততার শুরু হয় স্থানীয় পালবাড়িতে প্রতিমার বায়না দেওয়া থেকে। স্কুলের টিফিনের ফাঁকে কিংবা ছুটির দিনে প্রতিমার কাজ কতটা হল, সেটার খোঁজ নিতে থাকে তাঁরা। পাড়ার বড়দের পুজোর নিমন্ত্রন করে। নিজেদের হাতে সাজায় মণ্ডপ। রঙ-তুলিতে রাঙিয়ে তোলে আশেপাশের দেওয়ালগুলো। ঠাকুর আনা ও বিসর্জন দুটোই হয় খুদেদের কাঁধে।
পুজো মণ্ডপে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিমার উচ্চতা চার ফুট। ছোটদের পুজো, তাই প্রতিমার উচ্চতাও ছোট। রয়েছে বাল্যবিবাহ বন্ধ-সহ বেশ কিছু ফেস্টুন। রয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বস্ত্র বিতরণ ও ছৌ নাচ। আশেপাশের দেওয়ালে অপটু হাতে আঁকা হয়েছে দুর্গাঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মুখ। মণ্ডপে চলছে খুদেদের তুমুল হাঁকডাক।
পুজোর প্রত্যেক দিন দেখানো হবে শিশু চলচ্চিত্র। থাকছে রূপকথার গল্পের আসর। পুজো উদ্বোধনেও এই পুজো ব্যতিক্রমী। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় এ বারের পুজোয় উদ্বোধন করেন পাঁচ বছরের শিশু জয় সর্দার। শিশুমেলা কমিটির সদস্য বারো বছরের বিপ্লব চৌধুরীর কথায়, “জয়ের মা, বাবা নেই। পিসির কাছেই ও বড় হচ্ছে। আমাদের কাছে ওই তারকা।” পুজো মণ্ডপে দাঁড়িয়ে পলাশ বিশ্বাস, রত্না সাহারা জানায়, ফল, সব্জি আনা থেকে শুরু করে সব কাজই তারা নিজে হাতে করে। পুজোর কটা দিন তাদের কাছে আলাদা।
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, গ্রামের কেউ সব্জি, কেউ দুধ, কেউ পোশাক দিয়ে এই পুজোয় সাহায্য করেন। তিনি এখন মন্ত্রী। তাই জেলা ও জেলার বাইরের বহু পুজো কমিটির নিমন্ত্রণ আসে তাঁর কাছে। তবে খুদেদের পুজোর আমেজ যে অন্য পুজোয় পাওয়া মুশকিল। তাই নিরাশ হতে হয় বেশিরভাগ পুজো কমিটিকেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.