|
|
|
|
শান্তির বার্তা দিতে অন্য পুজো |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
হিংসার উগ্রতায় ওদের অনেকেই আজ অনাথ। তবু প্রতিহিংসার পথে না গিয়ে শান্তির বার্তা দিতে চায় উমানজয় রিয়াং, মিত্র চাকমারা।
ত্রিপুরা, অসম ও মিজোরামের পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি হানায় অনাথ ২৯ জন শিশু-কিশোরের ঠিকানা এখন ঝাড়গ্রাম শহরে বলরামডিহিতে একটি সেবাব্রতী প্রতিষ্ঠানের আশ্রমের হস্টেল। ঝাড়গ্রামেরই শিল্পী জয়ব্রত ঘোষের পরিকল্পনায় সেখানে শহিদ রিয়াং, কালায়ন চাকমা, মলেন্দ্র রিয়াংরা খড় ও কাগজের মণ্ড দিয়ে দুর্গার মূর্তি গড়েছে।
ওদের কল্পনার সেই দশভুজা ছবি আঁকেন। তাই তাঁর হাতে অস্ত্রের বদলে রং-তুলি। পরনে উপজাতীয় পোষাক। উপরে তুলে ধরা দুই হাতে প্রতীকী ত্রিশূলের উপর বসে সাদা পায়রা। ত্রিশূলের গায়েই লেখা ‘নারীশক্তি’। দেবীর হাতে ধর্ষণ ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার বাণী। কন্যাশ্রী প্রকল্পের কার্ডও।
চিন্তাটা শুধু মূর্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়। আশ্রম প্রাঙ্গণেই ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত ‘নারীশক্তি ও দুর্গা’ শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে। সেখানে থাকবে মূল প্রতিমাটি। এ ছাড়াও আবাসিকেরা প্রত্যেকে নিজেদের ভাবনায় বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে ছোট ছোট আরও ২৯টি দুর্গা গড়েছে। তার সঙ্গে জয়ব্রতবাবু ও আবাসিকদের আঁকা বেশ কিছু ‘নারীশক্তি ও দুর্গা’ বিষয়ক ছবিও থাকছে। |
|
জামদায় অনাথ শিশুদের পুজো। দেবরাজ ঘোষের ছবি। |
মলেন্দ্র রিয়াংয়ের বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। আজও তিনি নিখোঁজ। অশান্তির কারণে পরিবার-পরিজন হারিয়েছে শহিদ রিয়াং, মিত্র চাকমাও। বছর দশেক আগে বাবা-মাকে হারিয়ে উমানজয় রিয়াং, অনঙ্গ রিয়াংদের ঠাঁই হয় ঝাড়গ্রামের এই প্রতিষ্ঠানে। ‘মানব সেবা প্রতিষ্ঠান’ নামে ওই সংস্থাটির ঝাড়গ্রাম শাখার কার্যালয় এবং আশ্রম হস্টেল দুই-ই বলরামডিহির কেডিয়া ভবনে। সব আবাসিকই ঝাড়গ্রাম ও বিনপুরের বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশুনো করে।
ঝাড়গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে অনঙ্গ। দহিজুড়ির একটি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র উমানজয়। সাত বছরের মিত্র চাকমা, আট বছরের শহিদ রিয়াং, নয় বছরের কালায়ন চাকমারা ঝাড়গ্রাম শহরেরই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। এত দিন ওদের পুজো বলতে ছিল শুধু মহাষ্টমীতে দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। অনঙ্গ, মিত্র, কালায়নদের কথায়, “পুজোর দিনে সবাই কত আনন্দ করে। আমাদের ভীষণ কান্না পেত। সেই কথা আঁকার স্যারকে জানিয়েছিলাম।” |
|
|
|
|
|