সম্পাদকীয় ১...
ইহাই বিজ্ঞান
বিজ্ঞান কী? গবেষণা কাহাকে বলে? বুঝাইতে উপমার আশ্রয় লইয়াছিলেন রিচার্ড ফিলিপ ফাইনম্যান। নাস্তিক বিজ্ঞানী ব্যাখ্যায় টানিয়া আনিয়াছিলেন ঈশ্বরকে। বলিয়াছিলেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্রিয়াকলাপ যেন ঈশ্বরের পাশা খেলা। সূর্য ডুবে, চাঁদ উঠে, গ্রহনক্ষত্র আকাশে সন্তরণ করে। এই সবই যেন পাশার ঘুঁটির চলাচল। বিজ্ঞানী দর্শকমাত্র। তিনি দেখিতে পান না ঈশ্বরকে। দেখেন কেবল ঘুঁটির চলাচল। এই চলাচল দেখিয়াই বেচারি বিজ্ঞানীকে জানিতে হয়, আয়ত্তও করিতে হয়, পাশা খেলার নিয়মাদি। অশ্বের চাল কিংবা গজের গমন দেখিয়া চিনিতে হয় পাশার পাটাতন, অর্থাৎ মহাবিশ্বকে। কাজটি কঠিন, কৌতূহলোদ্দীপকও। আর এক বিজ্ঞানী, আলবার্ট আইনস্টাইন, বিজ্ঞান সম্পর্কে বলিয়াছিলেন, তাহার নিকট ব্রহ্মাণ্ডের সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর হইল মানুষের বিশ্ব রহস্য বুঝিতে পারার ক্ষমতা। মানুষ কী এক জীব, না হয় হইলই বা বুদ্ধিমান, কিন্তু সেই বুদ্ধিবলে সে কেন বুঝিতে পারে বিশ্বের চালচলন? মানুষের অনেক কিছু বুঝিবার ক্ষমতা না থাকিলে ব্রহ্মাণ্ডের দিক হইতে কোনওই ক্ষতি হইত না। বিশ্ব চলিত যেমন চলে, আপন নিয়মে। মানুষ কেন রহস্য সমাধান করিতে পারে, সেই মহাগূঢ় ব্যাপার ভাবিয়া আইনস্টাইন বিমূঢ় হইতেন। ‘এই ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য যে বোঝা যায়, তাহাই এই ব্রহ্মাণ্ডে সর্বাপেক্ষা দুর্বোধ্য ব্যাপার।’
পদার্থবিদ্যায় এই বছরের নোবেল পুরস্কারটি দেখাইয়া দিল বিজ্ঞানের সেই দিকগুলি, যেগুলির কথা বলিয়াছিলেন ফাইনম্যান কিংবা আইনস্টাইন। বিশ্বের এক বড় রহস্য অধিকাংশ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার ভর। উহারা ভারী না হইলে ব্রহ্মাণ্ড হইত কেবল আলো এবং তাপের আধার। বস্তু বলিতে সাধারণত আমরা যাহা বুঝি, এমনকী মানুষ, কিছুই থাকিত না। অধিকাংশ কণারা ভারী হইল হিগ্স-বোসন কণার দয়ায়। বিশ্ব হইল তাহার আজিকার রূপের মতো। এ প্রসঙ্গে প্রথমে বলিত হয় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কথা। যিনি আট দশক আগে স্রেফ অংক কষিয়া বলিয়াছিলেন ‘বোসন’ জাতের কণার অস্তিত্বের কথা। যে দুই বিজ্ঞানী এ বৎসর নোবেল পাইলেন, পিটার হিগ্স এবং ফ্রাসোয়াঁ এঙ্গলার্ট, অধিকাংশ কণার ভারী হইবার কারণটি স্রেফ অংক কষিয়া বলিয়া দিয়াছিলেন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে। এই বলিবার মধ্যেও এক কূট ব্যাপার নিহিত। জার্নালে প্রথম পেপার লিখিয়াছিলেন এঙ্গলার্ট ও তাঁহার সহযোগী রবার্ট ব্রাউট (যিনি ২০১১ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত)। এঙ্গলার্ট এবং ব্রাউট কিন্তু তাঁহাদের পেপারে বোসন কণাটির কথা বলেন নাই, কেবল বলিয়াছিলেন বিশ্বব্যাপী পরিব্যাপ্ত এক ‘ফিল্ড’ বা প্রভাবের কথা। ফিল্ড থাকিলে তদুপযোগী যে একটি কণাও থাকিবে, এবং সেই কণা অন্যদের ভারী করিয়া তুলিবে, সেই কথা প্রথম বলিয়াছিলেন হিগ্স। অর্থাৎ দুই দলে বিভক্ত তিন বিজ্ঞানী সমস্যাটিকে দেখিলেন দুই দৃষ্টিকোণ হইতে। সমাধান দিলেন কিন্তু একটিমাত্র সমস্যার। আর, খাতায়-কলমে অর্জিত সেই সমাধান যে বাস্তবেও ঠিক, সে প্রমাণ আসিল ২০১২ খ্রিস্টাব্দে, পূর্বাভাসের অর্ধশতাব্দী পরে। ইহাই বিজ্ঞান। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে অর্জিত কৃতিত্বের স্বীকৃতি নোবেল পুরস্কার রুশ বিজ্ঞানী পিয়োত্র কাপিত্জা পাইয়াছিলেন ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৩০-এর দশকে সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর নক্ষত্রের বার্ধক্য বিষয়ে যে তত্ত্ব পেশ করিয়াছিলেন, মুখ্যত তাহার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে। লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চি চড়া তো দূরের কথা, উড়োজাহাজ চোখেও দেখেন নাই। কিন্তু কোন যুগে তিনি মকসো করিয়াছিলেন আকাশযানের নকশা। আজ যাহা বলা হইল, আজই তাহা সত্য প্রমাণিত হইবে, এমন কথা নাই। কাল, পরশু কিংবা বহু কাল পরে হয়তো মিলিবে প্রমাণ। তাহাতে কী? বিজ্ঞানী সতত সত্যের অন্বেষক, তাঁহার কাজ ব্রহ্মাণ্ডের রহস্যাদি সমাধান। তাঁহার কাজ কৌতূহলের, আর ক্ষমতা মহাবিস্ময়কর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.