সারা বছর দেখা হয় খুব কম। দেখা হলেও সময়ের অভাবে শুধু একটু হাসি বিনিময়। কিন্তু বছরের পাঁচটা দিন এঁরাই হয়ে যান এক পরিবার। সকাল থেকে একসঙ্গে শুরু করেন পুজোর আয়োজন। কেউ বসে পড়েন ফুল বা ফল প্রসাদ সাজাতে। কেউ লেগে পড়েন নাড়ু, মোয়া-মুড়কি তৈরির কাজে। একসঙ্গে অঞ্জলি দেন। তার পর খাওয়াদাওয়া। এর পরেও কিন্তু পরিশ্রান্ত হন না ছোট থেকে বড় কেউই। বিকেলে আবার সেজেগুজে প্রস্তুত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নানা রকম প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে যে।
পুজোর শহরে সব আবাসনগুলির চিত্র এ রকমই। যার মধ্যে মেলে পাড়া এবং বাড়ি, দু’রকম পুজোর স্বাদ।
যেমন গড়িয়া মেন রোডের ভিক্টোরিয়া গ্রিন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ সেজেছে টেরাকোটা, পাট, মাটির পাত্র, বাঁশ দিয়ে। ডাকের সাজের প্রতিমা। মণ্ডপে দিনভর গীতা ও চণ্ডীপাঠ। প্রতি সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২৩ বছরে পা দিল বেহালার নিউ জেম্স-অজন্তা পূজা কমিটি। জেম্স লং সরণির নিউ-জেম্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি ও অজন্তা অ্যাপার্টমেন্টস ১৯৯১ সাল থেকে যৌথ ভাবে এই পুজো করছে। এখানকার পুজো সাবেক। ডাকের সাজের একচালার প্রতিমা। চার দিন এখানে চলে বিভিন্ন বয়সী আবাসিকদের হাতের কাজের প্রদর্শনী। চলে আবাসনের মহিলাদের তৈরি নানা রকম খাবারের প্রদর্শনী ও বিক্রি। এ ছাড়া, বসে আঁকো, অন্ত্যক্ষরী, ক্যুইজ, হাউসি, ধুনুচি নাচ তো আছেই।
বিভিন্ন ভাষাভাষীর আবাসিকেরা মিলে পুজো করেন নাগেরবাজারের শ্রাচী গার্ডেনে। ১৬ বছরে পা দেওয়া এই পুজো সাবেক। পুজার দিনগুলিতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাঘা যতীন গ্রিন পার্কের বাসিন্দাদের পুজো হচ্ছে অরুণাচল সঙ্ঘের মাঠে। নবমীতে এখানে দেখা যাবে ধুনুচি নাচ। সোনারপুর গ্রিন পার্ক কমল রেসিডেন্সি তাদের পুজোয় নিজেদের আবাসনকেই তুলে ধরেছে। আবাসনের সাতটি বহুতলের নাম রামধনুর সাত রঙের নামে। তাই মণ্ডপেও সাত রং।
থিমের বাজারে পিছিয়ে নেই বাড়ির পুজোও। উল্টোডাঙার সাধুখাঁ বাড়িতে মণ্ডপ মন্দিরের আদলে। মণ্ডপের সামনে বলিকাঠ, মানত স্তম্ভ।
নিজের নিজের পুজো নিয়ে মেতে উঠেছেন সব্বাই। তারই মাঝে দেখে নিচ্ছেন শহরের ভাল ভাল পুজোগুলোও। মাত্র চারটে দিনই বাঁধভাঙা আনন্দ। এর পরেই তো সেই নিয়মে ফিরে আসা। |