পুজোর জন্য স্থায়ী মন্দির রয়েছে। তবে, সারাবছর মন্দিরে পুজো হয় না। দশমীর বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের পরে আবার এক বছরের অপেক্ষা। গত সপ্তাহেই সেই মন্দিরে রঙের প্রলেপ পড়েছে। সামনে শুরু হয়েছে বাঁশের কাঠামো তৈরির কাজ। গলির মুখেই ওই মন্দিরের সামনে তাই প্রতিদিন বিকেল থেকেই ছোটদের ভিড়। শুধু ছোটরা নয়, বড়রাও নিয়মিত এসে খোঁজ নিচ্ছে মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি। অপ্রশস্ত গলির দু’পাশে সার দিয়ে বাড়ি। কোচবিহার শহরের প্রিয়গঞ্জ কলোনি। সাধারণ বাসিন্দাদের কাছে এই কলোনি ‘নিষিদ্ধপল্লী’ নামে পরিচিত। অনেকেই নিত্য যাতায়াতে এই কলোনি এড়িয়ে চলেন। যদিও পুজোর দিনগুলি অবশ্য ব্যতিক্রম। বছর পাঁচেক আগে পুরসভার উদ্যোগে কলোনিতে দূর্গা মন্দিরটি স্থাপিত হয়। এবারে পুজোর ৫৭তম বর্ষ পূর্তি। নিষিদ্ধপল্লির বাসিন্দারা নিজেরাই চাঁদা তুলে পুজো করেন। এ বারে, মন্দিরের আশেপাশে আলোকজ্জার ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি দুস্থদের বস্ত্র বিতরণ, প্রসাদ বিলি এবং দর্শনার্থীদের জল দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকছে মণ্ডপে। এবং সঙ্গে থাকবে এইডস নিয়ে সচেতনতার প্রচার।
পুজো কমিটির সম্পাদিকা বিজলি ঘোষ বলেন, “পুজোর সময় পুরো গলিটা আলোয় ভরিয়ে দেব। আমাদারে যারা বাইরে থাকনে, তারাও পুজোর সময় আসবে। অনেক আনন্দ হবে, আড্ডা হবে।” পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মামনি সরকার, ভারতী কুন্দুরা বলেন, “প্রতিদিনই অন্ধকারেই থাকি, তাই পুজোর সময় বাড়তি আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করা হয়।” উদ্যোক্তাদের দাবি, কোচবিহার রাজার আমলেই পুজোর শুরু। মূলত রাজার উদ্যগেই পুজো শুরু হয়। যদিও রাজ-শাসনের পরেও পুজোর উদ্যোগে ছেদ পড়েনি। বাসিন্দারাই নিজেরা উদ্যোগী হয়ে পুজো চালিয়ে যান। ঠিক কোন সময়ে পুজো শুরু হয়েছে তার কোনও প্রামাণ্য তথ্য না থাকলেও, অন্তত ৫৭ বছরের ইতিহাস রয়েছে। সে কারণেই উদ্যোক্তারা ৫৭ বছরের হিসেবকেই পুজোর বয়স বলে দাবি করেন। বছরসাতেক আগে ৫০ তম বর্ষে পুজো আয়োজনের জন্য বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দেবী, অলকা। তাঁরা জানান, প্রায় তিনশ পরিবাররে বাস। অলকার কথায়, “পরিস্থিতি বদলেছে, এখন অনেকেই আমাদের সম্মান দেন। ভাল লাগে। পুজো দেখতে সাধারণ বাসিন্দারাও আমাদের কলোনিতে আসে। সেটা আমাদের কাছে একটা প্রাপ্তিই বটে।” |